উৎস : আলোচ্য অংশটুকু সমাজসচেতন গদ্যশিল্পী আবুল চয়ন করা হয়েছে।
মাজসচেতন গদ্যশিল্পী আবুল মনসুর আহমদ বিরচিত বিখ্যাত ছোটগল্প ‘হুযুর কেবলা’ থেকে
প্রসঙ্গ : এমদাদ তার নতুন জীবনে জনগণের কাছ থেকে যে সম্মান পেয়েছে সে অনুভূতি প্রকাশিত হয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।
বিশ্লেষণ : এমদাদ ছিল একজন শিক্ষিত যুবক। সে কোলকাতায় দর্শন শাস্ত্রে অনার্স পড়ত। আল্লাহর অস্তিত্বে তার ছিল ঘোর সংশয়। সে ধর্ম, খোদা, রাসূল কিছুই মানত না। সে খোদার আরশ, ফেরেশতা, ওহী, হযরতের মেয়ারাজ নিয়ে সর্বদা হাসিঠাট্টা করতো। কলেজ ম্যাগাজিনে সে খোদার অস্তিত্বের অসরতা প্রমাণ করবার জন্য মিল, হিউম স্পেন্সার, কোঁত প্রমুখ লেখকের ভাব চুরি করে প্রবন্ধ লিখত। এহেন এমদাদ খেলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়ে হঠাৎ বদলে গেল। সে ধর্মকর্মে মনোযোগ দিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে লাগল। আধুনিক জীবনযাপনের প্রতি তার গভীর বিতৃষ্ণা দেখা দিল। আধুনিক জীবনযাপনের উপকরণগুলো সে একে একে নষ্ট করে ফেলল। “সবগুলো বিলাতি ফিনফিনে ধুতি, সিল্কের জামা পোড়াইয়া ফেলিল; ফ্লেক্সের ব্রাউন রঙের পাম্পশুগুলো বাবুর্চিখানার বঁটি দিয়ে কোপাইয়া ইলশা কাটা করিল।” সে কলেজ পরিত্যাগ করল। তারপর সে কোরা খদ্দরের কল্লিদার কোর্তা ও সাদা লুঙ্গি পরে মুখে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ ঝাঁকড়া দড়ি নিয়ে সামনে পিছনে সমান করে চুলকাটা মাথায় গোল নেকড়ার মত টুপি কান পর্যন্ত পরে বাড়ির দিকে রওনা দিল। সেদিন রাস্তার বহুলোক তাকে সালাম দিল। এমদাদ জনগণের ধর্মের প্রতি ভক্তি দেখে অভিভূত হয়ে পড়ল । ধর্ম এবং ধর্মীয় লেবাসের প্রতি এই ভক্তি দেখে তার মনে হলো কলিযুগেও দুনিয়ায় ধর্ম আছে।
মন্তব্য : ধর্ম এবং ধর্মীয় লেবাসের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে এমদাদের মনে হয়েছে দুনিয়ায় এখনো ধৰ্ম আছে।