উৎস : আলোচ্য অংশটুকু খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয় করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : শহরের মানুষের বিরূপ আচরণে অতিষ্ঠ আমুর পলায়নপর মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটেছে আলোচ্য উক্তিতে।
বিশ্লেষণ : দু’মুঠো খাবারের জন্য, এতটুকু আশ্রয়ের আশায় আমুরা গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছিল। শহরের মানুষের হৃদয়হীন আচরণে ব্যথিত হয়ে আমু একদিন এক খাবার হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার অপরাধে বেদম মার খেল। চাঞ্চল্যকর এ দুর্ঘটনার পর তার মাথা ঠাণ্ডা হতে সময় নিল। উত্তেজিত আমু কোন রাস্তা থেকে কোন রাস্তা দিয়ে পথ চলছিল তা বুঝতে পারছিল না। ঘুরতে ঘুরতে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সে ভাবল, যে পথের শেষ নেই, সে পথে চলে লাভ নেই। তার চেয়ে ঐ অভাবী মানুষদের মধ্যে ফিরে যাওয়া ভালো। তখন ফুটপাতের গ্যাসপোস্টের ধারে আবছা অন্ধকারে একটা লোক পেটে হাত চাপা দিয়ে দুরন্ত বেদনায় গোঙাচ্ছিল। তার একটু দূরে আরও কয়েকজন উবু হয়ে বসে বসে ধুঁকছিল। কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আমু আপন মনে ভাবল, ওরা তো তার চেনা কেউ নয়, ওদের বেদনার সাথে তার সম্পর্ক নেই, তবে কেন সে যাবে ওখানে। এরপর সে চাপা ভয়ে ভাঙা পা নিয়ে পালাতে লাগল। কেন সে ভয় পাচ্ছে, কেন পালিয়ে যাচ্ছে তা তার কাছে স্পষ্ট নয়। শুধু এটুকু বুঝতে পারল, একটা ভয় কালো- ছায়াচ্ছন্নের মতো তার সমস্ত মনকে ঘিরে রেখেছে। এ ভয় থেকে মুক্তি পাবার জন্য সে পালিয়ে যাবে যে রাস্তার কোন শেষ নেই সেই রাস্তা ধরে। ভয়ের যে ছায়া তার মনে ঘনিয়েছে এ ছায়ার শেষ কোথায় তা তার জানা নেই। একবার তার সন্দেহ হলো, এ ছায়া কি তবে মৃত্যুর? মৃত্যু কি তাকে গ্রাস করতে এগিয়ে আসছে? এসব প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছিল পলায়নপর আমু।
মন্তব্য : মানুষ যখন বিরূপ পরিবেশের মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে তখন তার আমুর মতোই দুরবস্থা হয়।