উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিরচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : পাশ্চাত্য সভ্যতার উদার মহত্ত্ব দ্বারা অভিভূত ভারতের স্বাধীনতাকামী সাধকদের তখনকার মানসিকতা সম্পর্কে প্রবন্ধকার উল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : বিশাল মানববিশ্বের সাথে ভারতীয়দের প্রত্যক্ষ পরিচয় ঘটেছিল ইংরেজদের সান্নিধ্যে এসে। তখন তাদের অভিজ্ঞতার মধ্যে উদ্ঘাটিত হয়েছিল ইংরেজি সাহিত্যের চরিত্র-পরিচয়। সে সময় আমাদের বিদ্যালাভের পথ্য পরিবেশনে প্রাচুর্য ও বৈচিত্র্য ছিল না। এখনকার যে বিদ্যা জ্ঞানের নানা কেন্দ্র থেকে বিশ্বপ্রকৃতির পরিচয় ও তার শক্তির রহস্য নতুন নতুন করে দেখাচ্ছে এর অধিকাংশ তখন ছিল নেপথ্যে ও অগোচরে। প্রকৃতিতত্ত্বে বিশেষজ্ঞের সংখ্যা ছিল একেবারেই কম। তখন ইংরেজি ভাষার ভিতর দিয়ে ইংরেজি সাহিত্যকে জানা ও উপভোগ করা ছিল মার্জিতমনা বৈদগ্ধ্যের পরিচয়। তখনকার দিনরাত্রি মুখরিত ছিল বার্ক, মেকলে, শেক্সপিয়ার, বায়রন প্রমুখ ইংরেজ মনীষীর মানবতাবাদী লেখা ও মতের বিজয়গানে। সে সময় ভারতীয়রা স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করলেও তাদের অন্তরে অন্তরে ছিল ইংরেজ জাতির ঔদার্যের প্রতি অগাধ বিশ্বাস। ইংরেজরা তাদের মানবতাবাদী সাহিত্য সংস্কৃতির প্রভাবে শিক্ষিত ভারতীয়দের আবিষ্ট করে রেখেছিল। তাদের উন্নত শিল্প সংস্কৃতির প্রতি আমাদের ছিল অপরিমেয় শ্রদ্ধা। এ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস এত গভীর ছিল যে একসময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতারা মনে করতেন যে, বিজিত ভারতীয়রা বিজয়ী ইংরেজ জাতির দয়া-দাক্ষিণ্যেই স্বাধীনতা লাভ করবে। এ জন্য অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছিলেন তারা।
মন্তব্য : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অহিংস নীতির পশ্চাতে ছিল ইংরেজ জাতির প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস ।