সে পাপ করেছে এবং তাই সে ক্ষমা চায়, দুটি ভাত দিয়ে শক্তিশালী তাকে ক্ষমা করুক।”- ব্যাখ্যা কর।

উৎস : আলোচ্য অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক গল্প থেকে চয়ন করা
হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে শক্তিশালীর কাছে আমুর আত্মসমর্পণের কারণটিকে তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : আমুরা শহরে এসেছে বাঁচার তাগিদে। বন্যায় সবকিছু হারিয়ে এসব বানভাসি মানুষ ময়ূরাক্ষী নদীর তীরবর্তী নয়নচারা গ্রাম থেকে শহরের ফুটপাতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সারাদিন এরা শহরের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘোরে। শহরের মানুষেরা তাদেরকে দূর দূর করে তাড়ায়। এরা আমুদের মানুষ বলে জ্ঞান করে না। সবাই কেমন যেন অবজ্ঞার চোখে দেখে। কারণে আমুর ক্ষুধার্ত মন শহর এবং শহরের মানুষদের উপর বিরূপ হয়ে ওঠে। আমু এদের মধ্যে গ্রাম্য হন্যে কুকুরের ছায়া দেখতে পায়। তার বিক্ষুব্ধ এবং বেদনাদীর্ণ মন ক্ষিপ্ত হয়ে আবোল-তাবোল ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সে বুঝতে পারে যাদের বিরুদ্ধে তার এ ক্ষোভ তারা খুব শক্তিশালী। ক্ষুধায় আর ক্লান্তিতে সে নিজের চিন্তার কাছে হার মানে। তখন সমগ্র পৃথিবী আমুর কাছে গৌণ হয়ে যায়, সে শক্তিশালীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। কেননা অল্প কয়েক দিনেই আমু বুঝতে পেরেছে, শক্তিশালীর অন্যায় অন্যায় নয়, তাদের অন্যায় সমাজের চোখে ন্যায় বলেই স্বীকৃত। সুতরাং তাদের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে কোন লাভ নেই। সে নিজেকে পাপী বলে মনে করে। ক্ষমতাশালীদের উপর ক্ষুব্ধ হওয়া তার উচিত হয়নি। তাই আমু এখন অন্যায় ভাবনার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। দু’মুঠো ভাত দিয়ে ওরা আমুকে ক্ষমা করে দিক। আমু বুঝতে পারে ওদের সাথে পাল্লা দিয়ে সে পারবে না। সুতরাং ওদের কাছে আত্মসমর্পণ করাই যুক্তিসংগত।
মন্তব্য: এভাবেই অন্যায়ের কাছে মানুষ মাথা নত করতে বাধ্য হয়। এভাবেই চলছে পৃথিবী।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a8%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a8%e0%a6%9a%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%be-%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%8d%e0%a6%aa-%e0%a6%b8%e0%a7%88%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%a6-%e0%a6%93%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be/