উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ইংরেজরা যে ভারতীয়দের কেবল শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে শাসন করেছে, মুক্তির পথ দেখাতে চায়নি, এ সত্যটাই আলোচ্য উক্তিতে প্রকাশ পেয়েছে।
বিশ্লেষণ : ভারত ও জাপান একই এশিয়া মহাদেশের দুই প্রাচ্য দেশ হলেও উভয় দেশের মধ্যে প্রভেদ অনেক। জাপান যে সময় স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেকে অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত করতে ব্যস্ত ভারত সে সময় পরাধীন দেশ হিসেবে ইংরেজের গোলামিতে নিয়োজিত। যে যন্ত্রশক্তির সাহায্যে ইংরেজ আপনার বিশ্বকর্তৃত্ব রক্ষা করে এসেছে তার যথোচিত ব্যবহার থেকে ভারতবর্ষকে বঞ্চিত রেখেছে। অথচ জাপান সে যন্ত্রশক্তি ব্যবহার করে সম্পদবান হয়ে উঠেছে। ভারতবাসী যে বুদ্ধিসামর্থ্যে কোন অংশে জাপানের চেয়ে ন্যূন একথা ঠিক নয়। এ দুই প্রাচ্য দেশের সর্বপ্রধান প্রভেদ এই যে, ভারত ইংরেজ শাসনের দ্বারা সর্বতোভাবে অধিকৃত ও অভিভূত, আর জাপান এরূপ কোন পাশ্চাত্য শাসনের যাঁতাকল থেকে মুক্ত। ইংরেজ সভ্যতা ভারতীয়দের স্বাধীনতা হরণ করে নিয়ে তার পরিবর্তে দণ্ড হাতে উপহার দিয়েছে ‘Law and order’ বা বিধিব্যবস্থা। এটা ছিল সম্পূর্ণ বাইরের জিনিস যাকে দারোয়ানি বলা যায়। এ শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করতে গিয়ে তারা ভারতবর্ষের জনসাধারণের উপর জোরজবরদস্তি চালিয়েছে। যত্রতত্র শক্তি প্রয়োগ করে এতবড় একটা জাতিকে পদানত করে রেখেছে। ভারতের স্বাধীনতাকামী, সংগ্রামী শক্তির উপর চালিয়েছে অকথ্য নির্যাতন। ইংরেজ সদাপটে আমাদেরকে তার শক্তিরূপ দেখিয়েছে- মুক্তিরূপ দেখাতে পারেনি। ইংরেজ সভ্যতার অন্তরের সম্পদ যে মানবমুক্তি তা থেকে ভারতীয়দের বঞ্চিত করে নিজেদের গোলামে পরিণত করেছে। এ কারণেই ভারত জাপানের মতো সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়নি।
মন্তব্য : সুদীর্ঘ দুইশত বছর যাবৎ ইংরেজরা কেবল ভারতবর্ষকে শাসনই করেছে, তাকে মুক্তির গান শোনাতে পারেনি।