উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক মোতাহের হোসেন চৌধুরী বিরচিত ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধের অন্তর্গত।
প্রসঙ্গ : কালচার্ড বা সংস্কৃতিবান মানুষের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : উচ্চতর জীবনদর্শন তথা স্বধর্ম সৃষ্টি করাই কালচার্ড বা সংস্কৃতিবান মানুষের উদ্দেশ্য। সংস্কৃতিকে বলা যেতে পারে একটা ভিন্ন ধরনের ব্যক্তিগত ধর্ম। ব্যক্তিজীবনের পরিপূর্ণ বিকাশই তার লক্ষ্য। যেহেতু সংস্কৃতির সকল কারবার ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে সেহেতু সংস্কৃতিকে ব্যক্তিতান্ত্রিক বললে অতুক্তি হয় না। সংস্কৃতি মানুষের ব্যক্তিসত্তাকে সুন্দর মহৎ ও বিচিত্র করে তুলতে অনুপ্রেরণা যোগায়। ব্যক্তিতান্ত্রিক হওয়ায় সংস্কৃতি কিন্তু দলহীন বা সমাজহীন মানুষ সৃষ্টি করে না। সংস্কৃতিবান মানুষ অবশ্যই সামাজিক জীব। কেননা সমাজ ছাড়া সে অস্তিত্বহীন। ব্যক্তিকে যদি নদীর সাথে তুলনা করা হয়, তাহলে সমাজকে বলতে হবে সমুদ্র। সমুদ্রের সাথে মিলিত হতে না পারলে নদীর জীবন যেমন সার্থক হয় না। সমাজের সাথে একীভূত হতে না পারলে ব্যক্তিও তেমনি পূর্ণতা পায় না। সংস্কৃতি মানুষকে সুন্দর সম্পূর্ণ ও সাবলীল করে তোলে। সংস্কৃতিবান মানুষ চায় নিজের সৌন্দর্যবোধের সম্পূর্ণ উন্মোচন। সে কামনা করে আপন প্রতিভার পরিপূর্ণ বিকাশ। সমাজের দোহাই দিয়ে সে নিজের কর্তব্যকর্ম থেকে বিচ্যুত হয় না। নিজের কাছ থেকে ষোলো আনা আদায় করে নিতে না পারলে সে তৃপ্তি পায় না। তাই শুধু সমাজের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রকাশ
করা তার মনঃপূত নয়। এ কারণেই নিজের অন্তরের তাগিদেই সে নিজেকে প্রকাশ করে, বিকশিত করে এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলে।
মন্তব্য : সংস্কৃতিবান মানুষ নিজেকে চেনার চেষ্টা করে। সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উন্মোচিত না করা পর্যন্ত খুশি হয় না।