উত্তর ভূমিকা : সুলতানি শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় মধ্যযুগে বাংলায় শিল্পের প্রভূত উন্নতি সাধন হয়। অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য আসার জন্য উন্নত শিল্পব্যবস্থা অন্যতম নিয়ামকরূপে কাজ করে। সে যুগে শিল্পব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য শাসকগণ যথেষ্ট সদয় ছিলেন। এজন্যই মধ্যযুগে সুলতানি আমলে শিল্প ব্যবস্থার দ্রুত বিকাশ ঘটেছিল। নিম্নে সুলতানি আমলে বাংলায় শিল্প ব্যবস্থার উন্নয়নের নিয়ামকগুলো উল্লেখ করা হলো-
→ সুলতানি আমলে বাংলায় শিল্প ব্যবস্থা/শিল্প ব্যবস্থার নিয়ামকসমূহ : সুলতানি যুগের শিল্প ব্যবস্থা বা শিল্পসমূহের নিয়ামক বা উপাদানগুলো হচ্ছে :
১. কৃষিজাত শিল্প : কৃষিজাত দ্রব্য থেকে সুলতানি যুগে নানা শিল্পদ্রব্য তৈরি হতো। যেমন- আখ, চিনি, গুড়; তুলা, বস্ত্র শিল্প গড়ে উঠেছিল। বাংলার মসলিন তৎকালীন সময়ে জগৎ বিখ্যাত ছিল। এছাড়া কাশ্মীরের শাল, কার্পেট ও পশমের জিনিস উল্লেখযোগ্য ছিল । বস্ত্রশিল্প গ্রাম ও শহরের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল।
২. রেশম শিল্প : চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতকে রেশম শিল্পের বিশেষ প্রচলন ছিল। যেমন- তসর, মুগা, খাজ রেশম, তৈরি হত। বাংলার বিখ্যাত রেশম শিল্পের উল্লেখ করেন ইবনে বতুতা তার রচনায় । কিন্তু চীনা পর্যটক মা-হুয়ানের রচনায়, এটি পাওয়া যায় না।
৩. ধাতু শিল্প : সুলতানি আমলে ধাতু শিল্পের মধ্যে লোহা শিল্পের বেশ চাহিদা ছিল। এসময় উন্নতমানের ইস্পাত তৈরি৷ হতো। দাক্ষিণাত্যের খনিতে হীরাসহ দামি পাথর পাওয়া যেত।
তুতিচকোরিনে মুক্তার চাষ হতো।
৪. অন্যান্য শিল্প : অন্যান্য শিল্পের মধ্যে ছিল রঞ্জন শিল্প, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি শিল্প দ্রব্য। বিশেষভাবে সোনা, রুপা, কাঁসা, পিতল, চামড়া, কাগজ, সুরা প্রভৃতি শিল্প ।
উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যায় যে, সুলতানি শাসনামলে বাংলায় শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ছিল। এজন্য সুলতান শাসনামলে শিল্পের অগ্রগতি হয়। এতে করে বাংলার অর্থনীতিও নতুন প্রাণের সঞ্চার লাভ করে। এসময় বস্ত্র শিল্পের জন্য বিশ্ব খ্যাতি লাভ করে বাংলা। বাংলার মসলিন বিশ্বের অনেক স্থানে পৌছে যায় । নৌ-
বানিজ্যের মাধ্যমে এসব শিল্প আমদানি ও রপ্তানি করা হতো। সুলতানি আমলে বাংলা শিল্পে সময়ানুসারে যথেষ্ট উন্নত ছিল ।