উত্তর : ভূমিকা : মমতাজুর রহমান তরফদার বলেছেন- “Since the conquest of Bengal by the Muslims, Sansknit had been losing its ground because of the decline of Brahmanism as a culture.” অর্থাৎ বাংলায় মুসলিম শাসনের সময়কাল থেকে ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির হ্রাস পাওয়ার কারণে
সংস্কৃতের চর্চাও হ্রাস পেতে থাকে। সুলতানি আমলে বাংলা ভাষার সাহিত্য রচনায় পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। এর ফলে বাংলা সাহিত্যে একটি বৈপ্লবিক ধারার সূচনা হয়।
সুলতানি আমলে রচিত বাংলা সাহিত্য : সুলতানি আমলের শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে বাংলা সাহিত্য একটি নবরূপ লাভ করে। বাংলা সাহিত্যে এসময়ে প্রচুর গ্রন্থ রচনা হতে থাকে। নিম্নে সুলতানি যুগে বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের বর্ণনা দেয়া হলো।
১. শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন : সুলতানি শাসনামলে সবচেয়ে প্রাচীন এ গ্রন্থটি বড়ুচন্ডীদাস রচনা করেন। গ্রন্থটিতে মোট ১৬টি খণ্ড
রয়েছে। গ্রন্থটিতে শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার প্রেমকাহিনী স্থান পেয়েছে। বাধার প্রতি কৃষ্ণের ব্যাকুলতা ও নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে
রাধাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। কৃষ্ণের শক্তির পরিচয়ও এখানে দেয়া হয়েছে।
২. রামায়ণ : মহাভারতের কাহিনী ও ভাষা সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। তাই মহাভারতকে সহজবোধ্য করার জন্য
এর ঘটনা বিশেষ নিয়ে রামায়ণ রচনা করেন কৃত্তিবাস।
৩. মহাভারত : মহাভারতের মূলগ্রন্থ সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এ গ্রন্থে পাণ্ডবদের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। ধ্রুপদীর বস্ত্রহরণ ও
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কাহিনী এ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। পরাগণ। খানের উৎসাহে মহাভারতের অনুবাদ করেন কবীন্দ্র পরমেশ্বর। এছাড়া ‘পাণ্ডব বিজয়’ নামে একটি গ্রন্থও রচিত হয়েছিল।
৪. মনসামঙ্গল : মনসা হলো সাপের দেবী। চাঁদ সওদাগর তার পূজা করতে অস্বীকার করায় মনসা তাকে বিপাকে ফেলে । তার একমাত্র জীবিত পুত্র লখীন্দরকে দংশন করে বাসর রাতে। অবশেষে বেহুলার একান্ত প্রচেষ্টায় চাঁদ সওদাগর মনসার পূজা করতে রাজি হয়। ফলে মনসা তার হারানো সকল সম্পত্তি
ফিরিয়ে দেয়। এটি হলো মনসামঙ্গলের কাহিনী। এ মনসা মঙ্গল গ্রন্থটি হুসেন শাহের সময়ে রচিত হয়েছিল।
৫. ইউসুফ জুলেখা : মুসলিম প্রেমের অমর কাহিনী হলো ইউসুফ জুলেখা । শাহ মুহাম্মদ সগীর ইউসুফ জুলেখা রচনা করেন।
তবে কাহিনীর বর্ণনায় ইউসুফ জুলেখা হয়ে উঠেছে বাংলার চরিত্র। এ গ্রন্থে হুসেন শাহকে ‘ভুবনবিখ্যাত নরপতি’ বলা হয়েছে।
৬. লাইলি-মজনু : লায়লি-মজনুর অমর কাহিনীকে এসময়ে বাংলা গ্রন্থে রূপদান করা হয়। লায়লি ও মজনুর প্রেমের তীব্রতা
এ গ্রন্থে ধারণ করা হয়েছে। তবে লায়লি ও মজনুকে পরিচিত করানো হয়েছে বাঙালি ঢঙে।
৭. অন্যান্য মুসলিম গ্রন্থ : মুসলমানদের সাথে সম্পর্কিত নানা বিষয়ের উপর রচিত গ্রন্থ এ সময়ে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। স্থানীয়
মানুষকে ইসলামের ঘটনার সাথে পরিচিত করানোর জন্য মুসলমান লেখকরা এসকল গ্রন্থের অনুবাদ রচনা করা হয়। এসব সাহিত্যে
বাঙালি সমাজ জীবন ও দৈনন্দিন কার্যকলাপও উঠে এসেছে। এসকল গ্রন্থের মধ্যে হোসেন বিজয়, রাসূল বিজয় প্রভৃতি গ্রন্থ উল্লেখযোগ্য ।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সুলতানি শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা সাহিত্য নবরূপ লাভ করেছিল। বাংলা সাহিত্যের নানা বিষয় এ সময়ে বিকাশ লাভ করে। তবে এ
সময়কার সাহিত্য ছিল পদ্মাকারে। কেননা, সে সময়ে বাংলা গদ্যের প্রচলন হয়নি। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে হুসেন শাহ যে অবদান
রাখেন তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাকে অমর করে রেখেছে।