উত্তর : ভূমিকা : সুলতানি শাসনামলে মুসলিম কবি- সাহিত্যিকদের পাশাপাশি হিন্দু কবি-সাহিত্যিকরাও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতিতে কাজ করেন। মুসলিম শাসকবর্গের অগ্রগতি, উৎসাহ ও পৃষ্ঠপোষকতায় হিন্দু কবি-সাহিত্যিকেরাও অনুপ্রাণিত হন। হিন্দু কবি-সাহিত্যিকেরা সে সমাজের কুসংস্কারের মূলে আঘাত এনে সাহিত্য রচনায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। সাহিত্য মুসলমানদের সৃষ্ট বিপ্লবের ফলশ্রুতিতে বৈষ্ণববাদ বা বৈষ্ণব সাহিত্য ও মঙ্গল কাব্যের উৎপত্তি হয়। এসকল সাহিত্য হিন্দু কবি- সাহিত্যিকেরাই রচনা করেন। বহু হিন্দু কবি-সাহিত্যিকও বাংলা
ভাষা-সাহিত্যে তাদের অমূল্যবান সম্পদ রেখে যান।
→ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতিতে হিন্দু কবি ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা : সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতিতে তৎকালিন হিন্দু কবি-সাহিত্যিকেরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। নিম্নে কবি-সাহিত্যিকদের নাম উল্লেখপূর্বক তাদের কর্মসমূহ আলোকপাত করা হলো :
১. কানাহরি দত্ত : সুলতানি আমলে যেসব হিন্দু কবি সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, কানাহরি দত্ত তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ত্রয়োদশ শতকের উল্লেখযোগ্য কবি।
কানাহরি দত্ত ‘মনসাভজন’ কাব্য রচনা করেন।
২. রামাই পণ্ডিত : রামাই পণ্ডিত চতুদর্শ শতকের কবি। ‘শূন্যপুরাণ’ তার রচিত কাব্য। এ কাব্যে বৌদ্ধদের উপর ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে।
৩. চণ্ডীদাস : চণ্ডীদাস বা বড় চণ্ডীদাস মধ্যযুগের প্রাচীনতম কবি। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ তার রচিত কাব্য। এটি বাংলা সাহিত্যের আদি
কাব্য। এ কাব্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকে কবিতার ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে। কাব্যের পদগুলো বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এখানে প্রেমের বেদনাকে মর্মস্পর্শীভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
৪. কৃত্তিবাস : সুলতানি আমলে কৃত্তিবাস প্রথম বাংলায় রামায়ণ রচনা করেন। বাংলা ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করে তিনি বাংলা সাহিত্যের অমর হয়ে রয়েছেন।
৫. বিপ্রদাস পিপলাই : সুলতানি শাসক আলাউদ্দিন হোসেন শাহ এর শাসনামলে বিপ্রদাস পিপলাই বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম
রচনাবলি রচনা করেন। তিনি ‘মনসামঙ্গল’, ও ‘মনসাবিজয়’ কাব্যদ্বয় রচনা করে বাংলায় ইতিহাসে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন।
৬. মালাধর বসু : মালাধর বসু সুলতানি আমলের একজন উল্লেখযোগ্য কবি ছিলেন। তিনি ১৪৭৩-১৪৮০ সাল এর মধ্যে
‘শ্রীকৃষ্ণ বিজয়’ কাব্যটি রচনা করেন। তিনি ভগবতের বাংলা অনুবাদ ও করেছিলেন। সুলতান হুসেন শাহ তাকে ‘গুণরাজ’
‘খান’ উপাধি দেন। এই গুণরাজ খান বা মালাধর বসু ‘লক্ষ্মীচরিত্র’ কাব্যেরও রচয়িতা।
৭. বিজয়গুপ্ত : সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের শাসনামলে বিজয়গুপ্ত ‘’মনসামঙ্গল’ বা ‘পদ্মপুরান’ কাব্যটি রচনা করেন।
উপসংহার : উপরিউক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে একথা বলতে পারি যে, বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উন্নয়নে ঐকান্তিক চেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। তার
উদাহরণ হচ্ছে পাশাপাশি হিন্দু-মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথা তাৎপর্যমণ্ডিত সাহিত্যকর্মসমূহ। বাংলা সাহিত্যের বিকাশে হিন্দু কবি-সাহিত্যিকদের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে.