উত্তর : ভূমিকা : সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে সুলতানি আমল।সাফল্য অর্জন করেছে। দীর্ঘ প্রায় ২০০ বছর সুলতানি শাসন টিকে ছিল। আর এ শাসন সাফল্যমণ্ডিতও হয়েছিল। রাষ্ট্রের অন্যান্য দপ্তরের মত বিচার ব্যবস্থাও ছিল সময়োপযোগী ও ভারসাম্যপূর্ণ বিচারব্যবস্থা। সুলতানি আমলে বাংলার ইতিহাসের রদ বদল হয়েছিল । সুশৃঙ্খল, জবাবদিহিতার ভিত্তিতে বিচার কার্য সমাধান করা হতো। বিচারকার্যের জন্য পর্যাপ্ত কাজী নিযুক্ত করা হতো। নিম্নে সুলতানি আমলে বাংলার বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
সুলতানি আমলে বাংলার বিচারব্যবস্থা : সুলতানগণ ছিল ন্যায় নিরপেক্ষ ও ধর্মকেন্দ্রিক বিচারক। ন্যায় বিচারের জন্য সময় সুবিদিত। বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সমাধানের জন্য বিচার বিভাগকে ভাগ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় ও প্রাদেশিক বিচারক আলাদাভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিচারকগণ নিরপেক্ষ ও ন্যায় বিচার করে থাকতেন। সমাজের সম্মানিয় স্থান ছিল বিচারকদের। সুলতানি আমলে বাংলার বিচার ব্যবস্থাসমূহ পরিচালনায় যারা কর্তব্যরত ছিলেন তারা হচ্ছেন-
১. সুলতান : সুলতান নিজেই ছিলেন সকল বিচারকের প্রধান বিচারক। সুলতান সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অনেক বিচার করতেন তিনি। তবে কাজীও তার অনুপস্থিতিতে বা উপস্থিতিতে তাকে সাহায্য করতেন। তবে সর্বক্ষেত্রে সুলতান সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।
২. কাজী উল-কুজ্জাত : প্রাদেশিক সকল কাজীর প্রধান ছিলেন কাজী-উল-কুজ্জাত । তিনি বিচার বিভাগের প্রধান ।
৩. কাজী : দিল্লিসহ প্রধান প্রধান শহরে একজন কাজী নিয়োগ দেওয়া হত। প্রাদেশিক শহরেও একজন করে কাজী নিয়োগ দেওয়া হত।
৪. মুফতি : প্রধান বিচারপতিকে কোরআনের আইন বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করতে মুফতি।
৫. সাহিব-উল-গুরুতা : পুলিশ প্রধানরক সাহিব-উল-শুরুতা বলা হত। তিনি শহরের নিরাপত্তা বিষয়ে দেখাশোনা করতেন।
৬. পঞ্চায়েত : গ্রামে হিন্দুদের বিচার সংগঠনের নাম ছিল পঞ্চায়েত।
৭. শাস্তি প্রথা : সাধারণ অপরাধের শাস্তি ছিল প্রহার ও নির্বাসন এবং রাজদ্রোহীতার অপরাধ ও হত্যার জন্য শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড।
উপসংহার: পরিশেষে একথা বলা যায় যে, সুলতানি আমলের বিচার ব্যবস্থা বেশ উন্নত ছিল। এজন্য প্রজা সাধারণও সন্তুষ্ট ছিল। তৎকালীন সময়ে নিরপেক্ষ বিচার করা হত। সুলতান সপ্তাহে ২-৩ দিন মজলিশে বসে নিজে বিচারকার্য সমাধান করতেন। সর্বোপরি, এসময়ে একটি সুশৃঙ্খল নিয়ম প্রচলিত ছিল।