উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো সুলতানি আমল এসময় বাংলার সার্বিক ক্ষেত্রে এসেছিল ব্যাপক পরিবর্তন। এই পরিবর্তনে হিন্দু সম্প্রদায়েরও সমান কৃতিত্ব
ছিল। সুলতানি আমলে সমাজ ছিল সামন্ততান্ত্রিক ইসলামের সাম্য ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বদৌলতে নিজস্ব মেধার গুণে নিম্ন পর্যায়ের ব্যক্তি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ লাভ করেছেন। সুলতানি আমলে শাসকগণ মুসলিম থাকা সত্ত্বেও হিন্দু জনগোষ্ঠী অবহেলিত হননি। তারাও যোগ্যতার গুণে রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ে
আসীন ছিলেন। সুলতানি আমলে বাংলায় হিন্দুদের অবস্থা সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করা হলোঃ
সুলতানি আমলে বাংলায় হিন্দুদের অবস্থা : সুলতানি আমলে উচ্চবর্ণের হিন্দুরাই ছিলেন শাসক সম্প্রদায়, ভূমি ও অর্থ সম্পদের মালিক। তুর্কি আক্রমণের পরেও কৃষি জমির বৃহত্তর ভাগ ছিল তাদের হাতে। হিন্দু কৃষক, গ্রামীণ হিন্দু জমিদার ও বংশানুক্রমিক রাজস্ব সংগ্রাহক মুৎ-মুকাদুমরাই কৃষি ও রাজস্ব ব্যবস্থার স্তম্ভ ছিলেন । ইলবারী তুর্কি আমলে হিন্দুরা কোনো উচ্চ রাজপদ পেতেন না। আলাউদ্দিনের আমল থেকে কোনো কোনো
হিন্দু উচ্চপদ পান। হিন্দু অভিজাত ও ধনী উচ্চপদ পান। হিন্দু অভিজাত ও ধনী বণিকরা বিলাস বাসন ও আড়ম্বরের মধ্যে মুসলিম অভিজাতদের মতোই বাস করতো। হিন্দুরা রাজস্ব বিভাগে বিভিন্ন পদ পেত। কারণ এ কাজে তারা পারদর্শী ছিল । ক্ষত্রিয় শ্রেণিয় আগের মতো প্রতিপত্তি না থাকলেও তাদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন দেশীয় রাজা বা রায় ও জমিদার। শূদ্র বা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের অবস্থা আগের মতই কষ্টকর ছিল। অস্পর্শতা
ও কার্ভেদের জন্য তারা ছির সমাজে নির্যাতিত শ্রেণি। এগুলো ছাড়াও সতীদাহ, জহরব্রত, বাল্যবিবাহ, কন্যাসন্তানের প্রতি অবহেলা প্রবল আকারে বিরাজমান ছিল।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সুলতানি আমলে উচ্চ বর্ণের ও ধনী হিন্দুদের অবস্থা ও মর্যাদা ছিল। তবে নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের অবস্থান কিছুটা অবহেলিত ছিল। তবে বৈষম্যমূলক৷ সমাজব্যবস্থা জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের পথে কিছুটা অন্তরায় ছিল ।
সামগ্রিক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে একথা বলা যায় যে, যুগের সাথে তৎকালীন সামগ্রিক প্রেক্ষাপট অতটা অসামঞ্জস্য ছিল না।