উত্তর : ভূমিকা : মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় বাংলার সুবাদার মীর জুমলার মৃত্যুর পর শায়েস্তা খান এখানকার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। বাংলাদেশ ছিল তখন অরাজকতাপূর্ণ। তিনি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে এখানকার সকল অরাজকতার অবসান ঘটান এবং ভগ্নপ্রায় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুনর্গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন ।
শায়েস্তা খান :
১. পরিচয় : শায়েস্তা খান ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মামা। তার পিতার নাম ছিল আসিফ খান। তিনি ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত এবং রাজনীতিতে দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি। ১৬৬৪ সালে
শায়েস্তা খান সম্রাট আওরঙ্গজেব কর্তৃক বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন। সম্রাট শাহজাহানের আমলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন।
২. বিজেতা : তিনি তার সামরিক মেধা দিয়ে কুচবিহার দখল করেন। আরাকানীদের হাত থেকে চট্টগ্রাম দখল করেন এবং এর নাম দেন ইসলামাবাদ । মগ জলদুস্যদের কঠোর হস্তে
দমন করেন। রণকুশলী সেনাপতি ও শ্রেষ্ঠ বিজেতা হিসেবে শায়েস্তা খান বাংলার ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছেন।
৩. দক্ষ শাসক : শায়েস্তা খান সর্বপ্রথম বাংলার শাসন ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। মগ ও পর্তুগিজদের দমনের জন্য বাংলার নৌবাহিনী পুনর্গঠন করেন। তিনি রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন। তিনি আইমাদার ও মর্দদমাস ভোগীদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেন এবং বৃত্তিভোগীদের ভাতা দেন। বণিক ও
ভ্রমণকারীদের ওপর কর তুলে নেন এবং শিল্পী, ব্যবসায়ী ও আগন্তুকদের ওপর শুল্ক রহিত করেন। তার বহুমুখী উন্নয়নমূলক
ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে। তার আমলে দ্রব্যের দাম এত সস্তা ছিল যে টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত।
৪. স্থাপত্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষক : শায়েস্তা খানের সময়ের স্থাপত্য শিল্প আজও তার শিল্পপ্রীতির সাক্ষ্য বহন করছে। তার সময়ের স্থাপত্য
শিল্প নিদর্শনের মধ্যে বড় কাটরা, ছোট কাটরা, লালবাগ কেল্লা, পরীবিবির মাজার, চক বাজার, চক বাজার মসজিদ, হোসেনী দালান,
বুড়িগঙ্গা মসজিদ, ও শফিখানের মসজিদ উল্লেখযোগ্য। এজন্য পর্যটক বাউরী বলেন, “বস্তুত ঢাকা ছিল শায়েস্তা খানের নগরী।”
উপসংহার : সুবাদার শায়েস্তা খানের সুদীর্ঘ ২৫ বছরের শাসনামল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। এমন উদার ও জনকল্যাণকামী শাসনব্যবস্থা; এত সুখ ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশে আর কোনো দিন দেখা যায় নি। তাই বাংলার ইতিহাসে শায়েস্তা খান অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন।