সুফিবাদের ক্রমবিকাশ আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : সুফিবাদ আল্লাহর প্রেম ও ধ্যানভিত্তিক একটি অভিনব চিন্তাধারা। পরমসত্তাকে জানার ও চেনার আকাঙ্ক্ষা
মানুষের চিরন্তন। সুফি সাধনা হলো পার্থিব সকল মায়া-মমতার বন্ধনকে ছিন্ন করে অনন্ত অসীমের সাথে মিলনের গোপন অভিসার। মানুষের সামগ্রিক জীবনধারার আধাত্মিক দিকই হলো সুফিবাদ । সুফিবাদের উৎস হলো কুরআন এবং হাদিস।
→ সুফিবাদের ক্রমবিকাশ : সুফিবাদের উৎপত্তি হয়েছে হযরত আদম (আ.) এর সময় থেকে। পরবর্তীতে বিভিন্ন নবী বি-রাসূলের সময়ে এর বিকাশ ঘটে। সুফিবাদ বিকাশের কতকগুলো পর্যায় রয়েছে। যথা-
১. প্রাথমিক পর্যায় : সুফবাদের ক্রমবিকাশের প্রাথমিক যুগ হলো রাসূলের যুগ। হেরা পর্যবর্তে ধ্যানমগ্নতার মাধ্যমে মহানবি (সা.) এ ধারার সূচনা করেছেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য বার ধ্যানমগ্ন হয়ে সুফিবাদের বিকাশ ঘটান। মহানবির তত্ত্বাবধানে একদল সাহাবা মসজিদে নববিতে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। এরা আহলে সুফফা নামে পরিচিত।
২. দ্বিতীয় পর্যায় : সুফিবাদরে বিকাশের দ্বিতীয় পর্যায় হলো খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগ। হযরত আলী (রা.) সুফি হিসেবে
প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এ যুগে আব্দুল্লাহ বিন-মাসউদ (রা.) সুফি সাধনায় বিশেষ স্তর অতিক্রম করেন।
৩. তৃতীয় পর্যায় : তৃতীয় পর্যায় হলো সাহাবাদের পরের যুগ। খোলাফায়ে রাশেদীনের অবসানের পর হাসান বসরি, যাবির বিন হাইয়ান, রাবিয়া বসরি প্রমুখ সফি (রা.) স্বতন্ত্র সুফিবাদের চর্চা শুরু করেন। তাদের নবতর চিন্তাধারার মাধ্যমে সুফিবাদের
নবতর যুগের সৃষ্টি হয়।
৪. চতুর্থ পর্যায় : সুফিবাদের এ পর্যায় হলো সিদ্ধ সাধনার যুগ। সুফি যুন্মুন মিসরি থেকে সুফিবাদ প্রথা সিদ্ধ সাধনা পদ্ধতিতে পরিণত হয়। এটি ছিল সুফিবাদের তত্ত্বগত উম্মেষের
যুগ। আব্দুল কাদির জিলানি, যুনায়িদ বাগদাদি প্রমুখ এ যুগে সুফিবাদের মূলনীতি ও সাধনার নীতিমালা প্রণয়ন করেন।
৫. পঞ্চম পর্যায় : এটি সুফিবাদের সর্বখোদাবাদ পর্যায়। প্রথমে বায়জিদ বোস্তহমী ও পরে মনসুর হাল্লাজ সুফিবাদে
সর্বখোদাবাদ ধারণার বিকাশ ঘটান।
৬. ষষ্ঠ পর্যায় : খিলাফত পরবর্তী যুগে মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন দল-উপদলের সৃষ্টি হয়। এ সময় ইমাম গাজালি (রা.) সুফিবাদকে সুন্নি মাফহাবভুক্ত করেন এবং ঘোষণা দেন যে
“তরিকর ও শরীয়তকে বিপরীতধর্মী মনে করা প্রায় কুফর।”
৭. সপ্তম পর্যায় : এ পর্যায়ে আধ্যাত্মিকতা ও সর্বখোদাবাদের সমন্বয় ঘটানো হয়। জালালুদ্দিন রুমী, আল-কুশাহরী প্রমুখ
সুফিগণ আধ্যাত্মিকতার সাথে সর্বখোদাবাদের সমন্বয় ঘটান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদের বিকাশ হঠাৎ করেই হয়নি। হযরত আদম (আ.) এর সময়ে এর উৎপত্তি।
মহানবি (সা.) এর সময়ে সুফিবাদ পূর্ণতা পেয়েছে। পরবর্তী যুগে এর আরো বিকাশ ঘটে। অদ্যাবধি পীর শাশায়েখ ও ওলি আল্লাহর মাধ্যমে সুফিবাদ বিকশিত হচ্ছে। যেকোনো বিবেচনাতেই সুফিবাদের ক্রমবিকাশ এক নিরবচ্ছিন্ন ইসলামি ঐতিহ্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%9a%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b8%e0%a7%81%e0%a6%b2%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf-%e0%a6%86/