সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের পাঁচ ধরনের পার্থক্য লেখ সম্পর্কে আলোচনা কর।

সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট উভয়ই বাংলাদেশের বিচারিক ব্যবস্থার অন্তর্গত হলেও তাদের মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যগুলো বিচার ব্যবস্থার গঠন এবং ক্ষমতা প্রয়োগের বিভিন্ন ধাপকে নির্দেশ করে। নিচে তাদের পাঁচটি প্রধান পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. গঠন ও স্তর:
বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট সর্বোচ্চ আদালত, যার দুটি শাখা রয়েছে: আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ। হাইকোর্ট বিভাগ সুপ্রিম কোর্টের একটি শাখা হলেও আপিল বিভাগের অধীনে থাকে। হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগের মাধ্যমে পুনর্বিবেচনা করা যায়, কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে আর কোনো আপিলের সুযোগ নেই।

২. ক্ষমতা ও এখতিয়ার:
হাইকোর্ট বিভাগ প্রধানত সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মৌলিক অধিকার রক্ষায় রিট পিটিশন শুনানির ক্ষমতা রাখে। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত, আদেশ বা আইনগত বিষয়ে বিচারিক পর্যালোচনা করতে পারে। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা রাখে এবং এর ক্ষমতা আরও ব্যাপক, যা দেশের সব আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার এখতিয়ার রাখে।

৩. বিচারক নিয়োগ:
হাইকোর্টের বিচারকরা সরাসরি নিয়োগ পান এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তারা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রমোশন পান। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারকরা দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ এবং বাছাই করা বিচারক, যারা হাইকোর্টে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা লাভের পর নিয়োগ পান।

৪. রায়ের চূড়ান্ততা:
হাইকোর্টের রায় আপিলযোগ্য হলেও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় চূড়ান্ত এবং এর পর আর কোনো আদালতে আপিল করা যায় না। ফলে, সুপ্রিম কোর্টের রায় দেশের বিচার ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বহন করে।

৫. মামলা গ্রহণের ধরণ:
হাইকোর্ট মূলত বিচারিক, প্রশাসনিক এবং সংবিধানিক বিষয়ের মামলা গ্রহণ করে থাকে। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ শুধুমাত্র আপিলের ক্ষেত্রে মামলা গ্রহণ করে, যা হাইকোর্ট বা নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে করা হয়।

এই পার্থক্যগুলো সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের ক্ষমতা ও গঠনের বিভিন্নতা তুলে ধরে, যা দেশের বিচারিক ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষা করে।