অথবা, সুদ প্রদানের কারণসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : সুদ হল ঋণ ব্যবহারের মুল্য। অর্থাৎ, ঋণ গ্রহীতা মূলধন বা ঋণ ব্যবহারের জন্য ঋণদাতাকে যে মূল্য প্রদান করে তাকে সুদ বলে।
সুদ কেন দেওয়া হয়ঃ সুদ দেওয়া নেওয়াকে অতীতে অসামাজিক, অধর্মীয় ও গর্হিত কাজ বলে তীব্রভাবে বিরোধীতা করা হত। দার্শনিক এ্যারিষ্টটল সুদ গ্রহণকে অন্যায় অস্বাভাবিক এবং প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ মনে করতেন। ইসলাম ধর্মে সুদ গ্রহণ ও প্রদান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কিন্তু বর্তমান যুগে অভাবের তাড়নায় নয় বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ঋণ গ্রহণ করা হয় বলে সুদ দেওয়া-নেওয়াটা অযৌক্তিক নয়। সুদ কেন দেওয়া হয় এ পরিপ্রেক্ষিতে আধুনিক অর্থনীতিবিদগণ যে সব যুক্তি দেখান তা নিম্নে আলোচনা করা হল:
১. মূলধন উৎপাদনশীল: মূলধন উৎপাদনশীল বলে এই উৎপাদনশীলতার জন্য দাম স্বরূপ মূলধনের মালিককে সুদ দেওয়া হয়।
২. সুদ অপেক্ষার পুরস্কারঃ মূলধনের মালিককে বর্তমান ভোগ ত্যাগ করে সঞ্চয় করতে হয় উপরন্ত মূলধন ফেরৎ না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এই অপেক্ষার পুরস্কারই হল সুদ।
৩. মূলধনের অপ্রচুর যোগান:মূলধন উৎপাদনশীল তাই উৎপাদন কাজের জন্য মূলধনের চাহিদা সৃষ্টি হয়। কিন্তু মূলধনের চাহিদার তুলনায় মূলধনের যোগান অপ্রচুর বলে সুদ দিতে হয়।
৪. নগদ অর্থ হাত ছাড়ার পুরস্কারঃ লর্ড কেইনসের মতে, মানুষ সর্বদা নগদ টাকা হাতে রাখতে চায়। কিন্তু ঋণ দেওয়া হলে নগদ অর্থ ব্যয় করার ক্ষমতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ত্যাগ করতে হয়। তাই ধার দিয়ে নগদ অর্থ হাত ছাড়া করতে মানুষ অনিচ্ছুক। এ অনিচ্ছার মাশুল হিসেবে ঋণদাতাকে সুদ প্রদান করতে হয়।
৫. সময় পছন্দের পুরস্কার: অর্থনীতিবিদ ফিশার বলেন, “মানুষ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা বর্তমানকে অধিক পছন্দ করে। তাই বর্তমান ব্যয় হতে বিরতি রেখে সঞ্চয় ও ঋণ দানে উৎসাহিত করার জন্য ঋণদাতাকে যে পুরস্কার দিতে হয় তাই হল সুদ।
৬. বর্তমান ভোগের প্রাধান্য: ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত এবং ভবিষ্যতের চেয়ে বর্তমান ভোগ মানুষ তীব্রভাবে অনুভব করে। বর্তমানের তৃপ্তি অধিক আকর্ষণীয়। তাই বর্তমানের অধিক তৃপ্তির পরিবর্তে ভবিষ্যতের তৃপ্তি লাভে ঋণদাতাকে
রাজী করতে হলে ঋণের উপর সুদ দিতে হয়।
৭. অর্থের ব্যাপক চাহিদা।, মানুষের অর্থের চাহিদা সৃষ্টি করে তিনটি কারণে।
(ক) লেনদেন জনিত উদ্দেশ্য
(খ) সতর্কতা জনিত ও
(গ) ফটকা কারবারের উদ্দেশ্যে অর্থের চাহিদা হওয়ায়, ব্যবহারকারী এর মালিককে সুদ দেয়।
উপসংহারঃ উপরোক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের “মূলধনের উৎপাদনশীলতা” মার্শালের ‘অপেক্ষা তত্ত্ব’, ফিশারের “সময় পছন্দ তত্ত্ব” লর্ড কেইনসের নগদ পছন্দ তত্ত্বসহ আধুনিক অর্থনীতিবিদগণের বক্তব্যে সুদ দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেখানো হয়। এভাবে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সুদ প্রদানের কারণ। ব্যাখ্যা করেন।