অথবা, সুদের হারের পার্থক্যের কারণগুলো আলোচনা কর।
উত্তর: ব্যবহারের তারতম্য ভেদে ঋণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। সকল প্রকার ঋণের সুদের হার কিন্তু সমান নয়। বিভিন্ন প্রকার ঋণের জন্য বিভিন্ন হারে সুদ দিতে হয়। সুদের হারের তারতম্যের কারণগুলি নিম্নে বর্ণনা করা হল।
১. বিভিন্ন ব্যবহারঃ লগ্নিকৃত টাকা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। অধিক উৎপাদনশীল বা লাভজনক বিনিয়োগে সুদের হার বেশি এবং কম উৎপাদনশীল বা কম লাভজনক বিনিয়োগে সুদের হার কম হয়।
২. বিভিন্ন মেয়াদঃ ঋণের মেয়াদের তারতম্যের কারণে সুদের হারেরও তারতম্য ঘটে। স্বল্প মেয়াদী ঋণের সুদের হার কম এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণের সুদের হার বেশি। দীর্ঘ মেয়াদী ঋণের টাকা দীর্ঘকাল ধরে ঋণ গ্রহীতার নিকট আটকা।
৩. ঋণের ঝুঁকি: ঝুঁকির বিভিন্নতার জন্য সুদের হারে পার্থক্য দেখা দেয়। যে সব বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি, সে ক্ষেত্রে পড়ে থাকে বলে ঋণ দাতা অধিক সুদ দাবী করে ঋণ বাবদ হয।
৪. ঋণের পরিমাণঃ ঋণের পরিমাণ ও সুদের হারকে প্রভাবিত করে। ঋণের পরিমাণ বেশি হলে সুদের হার কম বেশি সুদ আদায় করা হয়। অর্থাৎ ঝুঁকির মাত্রা কম হলে কম সুদ আদায় কম হয়।
৫. ঋণের জামিন: প্রায় সকল ঋণই জামিনের পরিবর্তে দেওয়া হয়। সম-পরিমাণ ঋণের জন্য বিভিন্ন মাত্রায় বিভিন্ন ধরনের জামিন পাওয়া যায়। জামিনের মাত্রা যত বেশি হবে সুদের হার তত কম হবে। মূল্যবান ও সহজে বিক্রয়যোগ্য জামানতের ক্ষেত্রে সুদের হার কম। আর যে জামানতের দাম কম এবং সহজে বিক্রয় করা যায় না সে ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি হবে।
৬. ঋণের ব্যবস্থাপনা খরচঃ ঋণ দেয়া, অনের হিসাব রাখা এবং ঋণ আদায় সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা খরচ লাগে। যে ঋণে ব্যবস্থাপনা খরচ বেশি সে ঋনের সুদ বেশি। আর ব্যবস্থাপনা খরচ কম হলে সুদের হারও কম হবে।
৭. ঋণের উদ্দেশ্যঃ ঋণ যদি উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে ব্যয় করা হয় সুদের হার কম হয়, ভোগ্য পণ্য তনয়ে ব্যবহৃত হলে সুদের হার অধিক হয়। ঋণ ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপরও সুদের হার নির্ভর করে।
৮. ঋণগ্রহীতার অবস্থা: ঋণগ্রহীতা যদি আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে মর্যাদাবান হন, তবে ঋণদাতা ঋণ প্রদানকে তেমন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন না। সে জন্য তিনি কম সুদের হারে ঋণ পেয়ে থাকেন।
৯. প্রতিযোগিতার মাত্রাঃ ঋণের বাজারে ঋণের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে প্রতিযোগিতা যত তীব্র হবে সুদের হার তত কম হবে। পূর্ণ প্রতিযোগিতার বাজারে সুদের হার কম এবং অপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুদের হার বেশি
১০. সরকার আরোপিত কর: দেশে বিভিন্ন প্রকার ঋণপত্র চালু থাকতে পারে। অনেক সময় সরকার এ সকল ঋণপত্রের উপর বিভিন্ন প্রকার কর আরোপের উদ্যোগ নেয়া বা আরোপ করে থাকে। এক্ষেত্রে সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য বা তারতম্য সৃষ্টি হয়।
১১. ঋণের গতিশীলতা: বিভিন্ন প্রকারে ঋণের বিভিন্ন উৎস বা বাজার রয়েছে। যেমন- কৃষকদের জন্য কৃষি ব্যাংক, শিল্পপতিদের জন্য শিল্প ব্যাংক, ব্যবসায়ীদের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ইত্যাদি। এক বাজারের ঋণ গ্রহিতা অন্য বাজার হতে ঋণ পায় না এবং ঋণ গ্রহিতারা এক বাজার হতে অন্য বাজারে যেতে পারে না বলে ঋণের বাজারে গতিশীলতা নেই।
১২. অতিরিক্ত কাজঃ ঋণদাতা যদি ঋণ আদায়ের জন্য অতিরিক্ত ঝুঁকি গ্রহণ করে এবং অধিক কাজ করে থাকে, সেক্ষেত্রে উক্ত ঋণের সুদের হার অধিক হবে।
১৩. সরকার কর্তৃক গৃহীত আর্থিক ও সুদনীতি:সরকার তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের বাস্ত যায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুদের হার বিভিন্ন রকম হতে পারে।
১৪. বিনিয়োগের পরিবেশঃ বিনিয়োগ পরিরেশ অনুকূল ও প্রতিকূল হতে পারে। দেশে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। এতে ঋণের চাহিদা এবং তৎসঙ্গে সুদের হার বাড়বে।
পক্ষান্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দিলে ঋণের চাহিদা হ্রাস পাবে এবং সুদের হারও কমবে।
উপসংহারঃ উপরের আলোচনা থেকে লক্ষ্য করা যায়, ঋণের গতি, প্রকৃতি, ব্যবহার, পরিমাণ, ব্যবস্থাপনা, প্রতিযোগিতার মাত্রা ও সরকারি নীতির প্রভাবে সুদের হারের মধ্যে পার্থক্য দেখা দেয়।