সিকান্দর লোদীর সঙ্গে হুসেন শাহের সংঘর্ষের বর্ণনা দাও।

উত্তর : ভূমিকা : সুদীর্ঘ ২৬ বছরের শাসনকালে হুসেন শাহ বহু বহিঃশক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। এসব যুদ্ধের কতকগুলির
উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য জয়, কতকগুলি আত্মরক্ষামূলক। কয়েকটি ক্ষেত্রে আবার যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ হয়নি। হুসেন শাহের রাজ্যাভিষেকের অল্পকালের মধ্যেই সিকান্দর লোদীর সাথে তিনি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন।

সিকান্দর লোদীর সঙ্গে সংঘর্ষ : হুসেন শাহের
রাজ্যাভিষেকের দু’বছর বাদে দিল্লিশ্বর সিকান্দর লোদীর সঙ্গে হুসেন শাহের সংঘর্ষ বাধে। নিম্নে সিকন্দর লোদীর সঙ্গে হুসেন
শাহের সংঘর্ষের বর্ণনা দেয়া হলো।
১. সময়কাল : সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের সঙ্গে ইলিয়াস শাহের পুত্র সিকান্দর শাহের যুদ্ধের প্রায় ১৩৭ বছর পরে এই প্রথম আবার দিল্লির সুলতানের সঙ্গে বাংলার সুলতানের সংঘর্ষ হলো। ‘মুন্তাখাব-উৎ-তাওয়ারিখ’ তবকাৎ-ই-আকবরী’, ‘মহজান-ই-আফগানী’ প্রভৃতি গ্রন্থে এ সংঘর্ষের বর্ণনা পাওয়া
যায় । ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে এ সংঘর্ষ হয়েছিল।
২. কারণ : জৌনপুরের সুলতান হুসেন শাহ শফীকে কেন্দ্ৰ করে এ সংঘর্ষ হয়েছিল। সিকান্দর শাহ পাটনায় বিদ্রোহ দমন
করতে আসেন। বিদ্রোহ দমন করে ফিরে যাওয়ার সময় হুসেন শাহ শফী তার সাথে কাশীতে যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে
হুসেন শাহ শফী পালিয়ে বাংলায় আসেন। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ আত্মীয়তার খাতিরে তাকে আশ্রয় প্রদান করেন। কিন্তু
সিকান্দর লোদী হুসেন শাহ শফীর পিছু ধাওয়া করে বাংলার কাছাকাছি এসে যুদ্ধের আয়োজন করতে থাকেন।
৩. যুদ্ধের প্রস্তুতি : সিকান্দরের সৈন্যদল মাহমুদ খান লোদী ও মোবারক খান লোহানীর নেতৃত্বে যুদ্ধ যাত্রা করে। এসময়ে হুসেন শাহ ও তাকে বাধা দেবার জন্য নিজপুত্র দানিয়েলের
নেতৃত্বে এক সৈন্য বাহিনী পাঠালেন। বিহারের বাঢ় নামক স্থানে দুই পক্ষ পরস্পরের সম্মুখীন হয়েছিল।
৪. সন্ধি স্থাপন : দুইপক্ষ পরস্পরের মুখোমুখি হলেও যুদ্ধ হয়নি। তারা একটি সমঝোতায় পৌঁছানার চেষ্টা করতে থাকে । কিছুদিন পরে সিকান্দর লোদী হুসেন শাহের সাথে সন্ধিস্থাপন করে স্ব-স্থানে ফিরে যান। সন্ধির সময় বলা হয় যে হুসেন শাহ ভবিষ্যতে সিকান্দর লোদীর শত্রুদের আশ্রয় দেবেন না।
৫. ফলাফল নিয়ে ভিন্নমত : হুসেন শাহ ও সিকান্দর লোদীর মধ্যে সংঘর্ষের ফলাফল নিয়ে ভিন্নমত দেখা যায়। বদাওনী বলেন যে অনেক ঘোড়া মারা যাওয়ায় এবং বয়স কমে
যাওয়ায় সিকান্দরের বাহিনী অসুবিধায় পড়ে সন্ধি করে। অন্যদিকে ডঃ আব্দুল করিম মনে করেন- আসলে দুই সুলতানের মধ্যে সন্ধি হয়নি । সিকান্দর ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে যান।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, হুসেন শাহ তার রাজত্বের. প্রথম দিকেই দিল্লির শাসকদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেও তিনি সফলতা লাভ করেন। সুদীর্ঘ ২৬ বছরের রাজত্বকালে তিনি আরো অনেক যুদ্ধে সফলতা লাভ করেছিলেন। তিনি ১৫১৯ সালে মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র নসরত শাহ বাংলার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%97%e0%a7%81%e0%a6%b0%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%aa/