অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানে আধুনিক সমাজকর্মের ভূমিকা নিরূপণ কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানে আধুনিক সমাজকর্মের ভূমিকা বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা সমাধানে আধুনিক সমাজকর্মের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক সমস্যা নিরসনে আধুনিক সমাজকর্ম কী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর || ভূমিকা : বিচিত্র এ মানবজীবন। জীবনের এ বৈচিত্র্যতার মাঝে অনেক অবাঞ্ছিত ঘটনা প্রতিবন্ধকতা এবং নৈরাজ্যতা মানুষের স্বাভাবিক চলার গতিধারাকে ব্যাহত করে এবং সুষ্ঠু সামাজিক উন্নয়নের পথকে রুদ্ধ করে, যা
সমাজ রাষ্ট্র তথা ব্যক্তি জীবনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অধিকসংখ্যক মানুষ
এর সংশোধন ও নিরসনের ইচ্ছা পোষণ করে। এসব অসুবিধাকেই বলা হয় সামাজিক সমস্যা। পৃথিবীর সকল দেশ বা সমাজেই এ সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান।
সামাজিক সমস্যা সমাধানে আধুনিক সমাজকল্যাণের ভূমিকা :
১. সামাজিক জরিপ ও গবেষণা : যে কোন সামাজিক সমস্যার পিছনে একক কিংবা বহুমুখী কারণ বিদ্যমান থাকতে পারে। তাই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণের পূর্বে সমস্যা সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হয়। আর সঠিক বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের জন্য আধুনিক সমাজকল্যাণে সামাজিক জরিপ ও গবেষণা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
২. সচেতনতা সৃষ্টি : জনগণ যদি নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না থাকে তাহলে সমস্যা সমাধান পরিকল্পনা কার্যকরী হয় না। আধুনিক সমাজকল্যাণ জনগণকে তাদের সমস্যা, সম্পদ, সামর্থ্য প্রভৃতি সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সমাজকল্যাণ এমনভাবে মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করে, যাতে মানুষ নিজেই নিজের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে।
৩. স্থানীয় সম্পদের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান : সামাজিক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন এমন পরিবেশ
সৃষ্টি করা, যাতে স্থানীয় সম্পদ এবং সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। আধুনিক সমাজকল্যাণ সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সম্পদ এবং সামর্থ্যের সর্বোত্তম ব্যবহারের চেষ্টা করে। সমাজকল্যাণে সমস্যা সমাধানের দেশীয় প্রযুক্তি ও কৌশলের প্রয়োগের প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
৪. মৌলিক চাহিদা পূরণ : সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির মূল কারণ হচ্ছে মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থতা। মানুষ যখন নিজের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয় তখন অবৈধ পথের দিকে হাত বাড়ায়। আধুনিক সমাজকল্যাণ স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার মাধ্যমে মানুষের মৌল চাহিদা পূরণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
৫. প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক দৃষ্টিভঙ্গি : সমাজের সার্বিক ও কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ আনয়নের জন্য সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। আধুনিক সমাজকল্যাণে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এ ত্রিবিধ দৃষ্টিভঙ্গিই প্রয়োগ করা হয়।
৬. পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধান : সমাজে বসবাসকারী মানুষ যখন পরিবর্তিত আর্থসামাজিক পরিবেশের সাথে তালমিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয় তখনই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। সমাজকর্ম কতকগুলো মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে মানুষকে এমনভাবে সাহায্য করে যাতে সে সহজে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে
সামঞ্জস্য বিধান করতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা বাংলাদেশে একটি মারাত্মক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সমস্যার পশ্চাতে রয়েছে আবার নানাবিধ কারণ। তাই এ কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ থেকে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে। আর এ সমস্যা সমাধানে দেশের সরকারের পাশাপাশি সমাজকর্মীরা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।