সামাজিক প্রশাসনকে কেন দলীয় প্রক্রিয়া হিসাবে বিবেচনা করা হয়?

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বর্তমানে যুগের চাহিদা পূরণে প্রশাসন বিভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করে আসছে। যেমন- লোক প্রশাসন, সামাজিক প্রশাসন, ব্যবসায় প্রশাসন, প্রভৃতি। এরই অংশ হিসাবে সামাজিক জীবনের ব্যপ্তি ও প্রয়োজনের তাগিদে এবং সামাজিক চাহিদা পরিপূরণের প্রেক্ষিতে, উদ্ভব ঘটেছে সামাজিক প্রশাসনের। একটি সমন্বিত বা দলীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রশাসন তথা সামাজিক প্রশাসনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রশাসনের লক্ষ্য হলো কতকগুলো সাধারণ উদ্দেশ্য
অর্জনের জন্য দলগতভাবে মানুষদের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা।
→ দলীয় প্রক্রিয়া হিসাবে সামাজিক প্রশাসন ঃ প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম যথা- নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, কর্মসূচি গ্রহণ, কর্মসূচি বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন সবই পতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের কর্মদক্ষতা ৬ কার্যানুযায়ী গঠিত বিভিন্ন দলগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় সামাজিক প্রশাসনকে দলীয় প্রক্রিয়া হিসাবে আখ্যায়িত করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হলো :
১. প্রশাসনিক কাঠামো বিবেচনা : প্রশাসনের গঠন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দলের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের নীতি- নির্ধারণের জন্য বোর্ড এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কমিটি কাজ করে। এছাড়া এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমর্থন দানের ক্ষেত্রে সমষ্টি, দল এবং কার্যক্রমের মূল্যায়নের জন্য দল কাজ করে। অর্থাৎ, গঠন প্রক্রিয়া বিবেচনায়
প্রশাসনকে নিঃসন্দেহে দলীয় প্রক্রিয়া বলা যায়।
২. প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রম বিবেচনা : সমস্ত দলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ণ অন্যতম প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন দলের পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতা অর্থাৎ দলীয় ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
৩. সেবাদান প্রক্রিয়া বিবেচনায় : কয়েকজন ব্যক্তির সমন্বয়ে সাধারণ দল গড়ে উঠে। এসব দলের সদস্যরা পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে ভূমিকা পালন করে। এসব দলকে পরিচালনার মাধ্যমে সামাজিক প্রশাসনের
ক্ষেত্রে প্রশাসক তার নিজস্ব জ্ঞান, দক্ষতা, নৈপুণ্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, কর্মসূচি, সম্পদ, সুযোগ-
সুবিধা, সমষ্টির সম্পদ, চাহিদা, শক্তিসমূহ বিবেচনা করে কার্য পরিচালনা করে। এভাবে দলীয় প্রক্রিয়ার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উদ্দেশ্য অর্জিত হয়।
৪. প্রশাসনের উদ্দেশ্যগত দিক বিবেচনায় : সামাজিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণে আগত ব্যক্তিদের অবস্থার উন্নয়নে পারিবারিক ও দলীয় পরিবেশ তাদের সম্পর্ক উন্নয়নের উপর ও জোর প্রদান করা হয়। সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহণকারী উভয়েরই নিজস্ব পরিমণ্ডলে পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়া সহযোগিতা সমঝোতা বৃদ্ধির উপর জোর প্রদান করা। অর্থাৎ সামাজিক প্রশাসনে ব্যাপক পরিসরে দলীয় প্রক্রিয়া অনুশীলন করা হয়।
৫. প্রশাসনিক কাঠামোর উপাদানগত দিক ঃ সামাজিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তি ও দলের সমন্বয়ে গঠিত একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো যার সদস্যরা পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া সমঝোতার মাধ্যমে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সামাজিক প্রশাসনের ক্ষেত্রে ৬টি উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে দুটি উপাদান হচ্ছে :

  1. A formal structure EXFR. Groups and Individuals Interacting with each other
    অর্থাৎ উপাদানগত দিক বিবেচনাতে ও সামাজিক প্রশাসনকে দলীয় প্রক্রিয়া বলা যায়
    ৬. গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের দিক বিবেচনায় : সামাজিক প্রশাসনে গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের আলোকে দলীয় প্রক্রিয়ায় সদস্যদের মধ্যে স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া ঘটে। প্রতিষ্ঠানের সর্বত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশ সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর এ ধরনের কর্মপরিবেশে প্রশাসনের আওতাভুক্ত ব্যক্তিদের পারস্পারিক ক্রিয়া-
    প্রতিক্রিয়াকে ও বিশেষভাবে তরান্বিত করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দলীয় প্রক্রিয়াকে ও বিশেষভাবে ত্বরান্বিত করে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে দলীয় প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
    ৭. প্রশাসনিক ক্রিয়ার বিভিন্ন দলীয় প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত বিবেচনায় : প্রশাসনিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়তা করে। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসক মুখ্য ভূমিকা পালন করলে ও সমাজের এ সমস্ত দল ব্যক্তি বা দলের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যাবলি সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে পরিচালনা ও উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব হয়। অর্থাৎ দলের সদস্যদের পারস্পরিক ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
    উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক প্রশাসনের গঠন, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, উপাদান ব্যবস্থাপনা ও কার্যাবলি, কর্ম পরিবেশ, প্রকৃতি প্রভৃতি বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এটাকে একটি দলীয় প্রক্রিয়া হিসাবে আখ্যায়িত করা যায়। মূলত মানুষ সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করে, তাই মানুষের চিন্তা-ভাবনা দলীয় প্রক্রিয়া হিসাবে কাজ করে। দলের সদস্যরা কোনো উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার লিপ্ত হয় এবং কতগুলো নির্দিষ্ট বিধি- বিধানের আওতাধীনে নিজেদের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।