উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ একটি দেশের সামাজিক নীতি জানা সহজসাধ্য বিষয় নয়। প্রত্যেক দেশের সামাজিক নাতির আলাদা সত্বা রয়েছে তারপরও একটি দেশ উন্নয়ে এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে অন্য দেশের সামাজিক নীতি সম্পর্কে ধারণা রাখতে হয়। সে নীতি জানতে একটি দেশের অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় এবং কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করে একটি দেশের সামাজিক নীতি জানা যায়। এ সব নীতি জানতে বেশ কয়েকটি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
→ সামাজিক নীতি জানার ক্ষেত্রে সমস্যা ঃ সামাজিক নীতি জানার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। নিচে সামাজিক নীতি জানার ক্ষেত্রে সমস্যাসমূহ তুলে ধরা হলো ঃ
১. নীতির অস্পষ্টতা ঃ নীতি যদি অস্পষ্ট থাকে তাহলে সে সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় না থাকলে নীতি সকলের কাছে বোধগম্য হয় না।
২. সম্পদ ও চাহিদার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা ঃ সামাজিক নীতি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন সমাজের সম্পদ ও জনগণের চাহিদার মধ্যে সামঞ্জস্যতা বিরাজ করে। কিন্তু সম্পদ ও চাহিদার মধ্যে অসামঞ্জস্যতা বিরাজ করলে নীতি সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা কঠিন হয়।
৩. অবাস্তব বিষয় ঃ সামাজিক নীতি এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন এতে বাস্তবতা বিবর্জিত বিষয় সংযুক্ত না হয়।
৪. সামাজিক প্রশাসন ও সামাজিক প্রশাসনের মাধ্যমে সামাজিক নীতি প্রণীত হয়ে থাকে। সামাজিক নীতিকে সমাজসেবায় পরিণত করাই হলো সামাজিক প্রশাসন। সামাজিক প্রশাসনের মাধ্যমেই নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন সামাজিক আইন, পরিকল্পনা, সমাজকল্যাণ কর্মসূচি ইত্যাদি দ্বারা যে সকল নীতি প্রণীত হয়ে থাকে তা সামাজিক প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
৫. সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি : সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি সামাজিক নীতির আলোকে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।৷ সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তাই সমাজকল্যাণমূলক কর্মসূচিকে সামাজিক নীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হয় ।
৬. সমন্বয়সাধন : সামাজিক নীতির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমন্বয় খুবই জরুরি। সামাজিক নীতির সাথে সম্পর্কিত
বিষয়সমূহের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে নীতি বাস্তবায়নে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সময়, শ্রম ও অর্থ বেশি লাগে। তাই।সামাজিক নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে সকল ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধন আবশ্যক ।
৭. প্রশিক্ষণ ঃ প্রশিক্ষণ সামাজিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। ফলে তারা নীতি প্রণয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেন।
৮. গবেষণা ঃ সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে গবেষণার গুরুত্ব অনেক। গবেষণার মাধ্যমে সামাজিক নীতি বাস্তবায়নের বাধাসমূহ চিহ্নিত করা যায়। এই সকল বাধা দূর করে নীতি বাস্তবায়নের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সহজ হয়।
৯. প্রযুক্তি ঃ সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে প্রযুক্তির ভূমিকা অগ্রগণ্য কারণ প্রযুক্তি ব্যবহারের দ্বারা সামাজিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সহজ হয়। সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কলাকৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে
১০. মূল্যায়ন ঃ সামাজিক নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে সঠিক মূল্যায়ন আবশ্যক। মূল্যায়নের ওপর নীতি সফলতা নির্ভরশীল । মূল্যায়নের মাধ্যমে সামাজিক নীতির ত্রুটি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এই সকল ত্রুটি দূর করে নীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
১১. মানব সম্পদ উন্নয়ন ঃ প্রতিটি সামাজিক নীতি মানুষের কল্যাণে প্রণীত হয়ে থাকে। তাই যাদের জন্য নীতি।প্রণীত হয় তাদের উন্নয়ন ব্যতীত নীতি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় না। তাই সামাজিক নীতি বাস্তবায়নে জনগণের।অংশগ্রহণের গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া সকল কুসংস্কার দ
ূর করে জনগণের মেধার বিকাশ ঘটাতে হবে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক নীতি “নীতি” প্রণয়নের বৃহত্তর ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট দিকমাত্র। একটি রাষ্ট্রের অনেক ধরনের নীতি থাকতে পারে। এসব নীতির মাঝে যেসব নীতি সামাজিক নীতি, সামাজিক সমস্যা ও গণমানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রার সাথে সংশ্লিষ্ট, সেগুলো সামাজিক নীতির সুনির্দিষ্ট গণ্ডীর আওতাধীন বলে বিবেচিত।