সামাজিক গবেষণা বলতে কি বুঝায়?

অথবা, সামাজিক গবেষণা কাকে বলে?
অথবা, সামাজিক গবেষণা সংজ্ঞা দাও?
অথবা,সামাজিক গবেষণা কি?
উত্তর৷ ভূমিকা : বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, সামাজিক ক্ষেত্রে পদার্থগত পরিবর্তন, মানুষের রুচি, আচার আচরণ ও মূল্যবোধ পরিবর্তনের ফলে বর্তমান সমাজ এক জটিল ও দুরূহ অবস্থায় রূপ লাভু করেছে। প্রত্যেক সমাজ বর্তমানে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত। তবে সময়োপযোগী ও পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম সামাজিক
উন্নয়নের চাবিকাঠি। আর এসব ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য তথ্যের অনুসন্ধান লাভ করা যায় গবেষণার মাধ্যমে।তাই বর্তমান সামাজিক উন্নয়নের অবিসংবাদিত শর্ত হিসেবে সামাজিক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক গবেষণা : গবেষণা বলতে বুঝায় প্রকৃত অবস্থা বা সত্যকে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে গবেষণা কোন বিষয় বা প্রপঞ্চের নতুন তথ্যের অবতারণা ঘটায়, আবার প্রচলিত ধারণার সত্যতা যাচাই করে। সামাজিক গবেষণা হল সামাজিক ঘটনাবলি, আচরণ বা সমস্যা সম্বন্ধে প্রণালীবদ্ধ ও যুক্তিনিষ্ঠ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করা। বর্তমানে সামাজিক গবেষণাকে সামাজিক বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণাও বলা হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন গবেষক বিভিন্নভাবে সামাজিক গবেষণার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজন সমাজবিজ্ঞানীর প্রদত্ত সংজ্ঞা উল্লেখ করা হল :
উইলকিনসন ও বন্দরকার (Wilkinson and Bhandarkar) বলেছেন, “সাধারণভাবে সামাজিক গবেষণা সমাজে ঘটনা ও সমাজ জীবন সম্বন্ধীয় ধারাবাহিক জ্ঞানের পরীক্ষা, পরিবর্তন ও পরিবর্তনের লক্ষ্যে সামাজিক মানবীয় ঘটনার উচ্চমাত্রার সাধারণ কারণে কার্য পরিচালনা (উদ্দেশ্যমূলক নিয়ন্ত্রণ), পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং সংশ্লেষণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া প্রয়োগ ছাড়া আর কিছুই নয়।”
Black and Champion বলেছেন, “বৈজ্ঞানিক গবেষণার মূল উপাদান হচ্ছে অভিজ্ঞতামূলক পর্যবেক্ষণের সাহায্যে তথ্যপ্রাপ্তি, যা বিভিন্ন চলকের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যৌক্তিকভাবে সম্পর্কযুক্ত
প্রস্তাবনাসমূহের সুশৃঙ্খল উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।”
Kenneth D. Bailey বলেছেন, “সামাজিক গবেষণা তথ্য সংগ্রহের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা সমাজের বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে সাহায্য করে।”
Earl R. Babbie বলেছেন, “একটি অনুসন্ধান পদ্ধতি, আমাদের চারপাশের জগৎ সম্পর্কে জানার পদ্ধতি।” (As a method of inquiry, a way of learning and knowing things about the world around us.)
সামাজিক গবেষণার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে P. V. Young আরও বলেছেন, “সামাজিক গবেষণা হল এমন একটি বৈজ্ঞানিক প্রচেষ্টা, যা কতকগুলো যৌক্তিক ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে নতুন তথ্যের আবিষ্কার করতে সচেষ্ট হয়, পুরাতন তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে চেষ্টা করে, সামাজিক ঘটনাবলির কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করতে চেষ্টা করে এবং মানুষের আচরণ ব্যাখ্যা ও অনুধাবন করার জন্য নতুন ধারণা, পদ্ধতি ও তত্ত্ব তৈরি করতে চেষ্টা করে।”
গ্রীণের মতে, “Research is definable as the use of standarize procedures in the search for knowledge.” অর্থাৎ, “জ্ঞান অনুসন্ধানের জন্য মানসম্মত পদ্ধতির প্রয়োগকেই গবেষণা হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।” উপরের সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, সমাজের বিভিন্ন সমস্যা বৈজ্ঞানিক উপায়ে, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য যাচাই করণ, সাধারণীকরণ, অনুমান গঠন ও যাচাই করার নামই সামাজিক গবেষণা। সামাজিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা একান্ত প্রয়োজন ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি যেখানেই থাক না কেন উদ্দেশ্যের ক্ষেত্র দিনদিন ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাজ করে গেলে আমরা উন্নতির শিখরে পৌঁছতে সক্ষম হব। সমাজকর্মের ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।