প্রশ্ন৷০৪। সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার প্রকৃতি তুলে ধর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
অথবা, সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক বিজ্ঞানসমূহ আলোচনা করে মানুষ ও তার আচরণ। সামাজিক গবেষণায় মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণের বিজ্ঞানভিত্তিক উপস্থাপন করে । সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের সমস্যা নির্ধারণ ও সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব। সামাজিক গবেষণার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়।
সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্য : নিম্নে সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১. সামাজিক গবেষণা একটি সুশৃঙ্খল তথ্য অনুসন্ধান পদ্ধতি । গবেষণার প্রতিটি কাজই সুনির্দিষ্ট নিয়ম ও শৃঙ্খলা অনুযায়ী করা হয়। অর্থাৎ সামাজিক গবেষণা ধারাবাহিক, সুশৃঙ্খল ও পদ্ধতিগত ।
২. সামাজিক গবেষণা বস্তুনিষ্ঠ ও যৌক্তিক। গবেষক প্রতিটি পর্যায়েই সচেতনভাবে গবেষণাকে তার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদির ঊর্ধ্বে থেকে বস্তুনিষ্ঠভাবে গবেষণার বিষয়টিকে জানতে চান ৷ সেজন্য সামাজিক গবেষণার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বাস্তব অভিজ্ঞতা ও তথ্য নির্ভরতা। অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ, সার্বিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়।
৩. সামাজিক গবেষণা সামাজিক সমস্যা সমাধানকল্পে সহায়তাদানে প্রয়াসী। ফলিত গবেষণার মৌল কার্যক্রমগুলো
প্রায়োগিক । ফলে সামাজিক সমস্যা সমাধানের পথ নির্দেশ করে।
৪. সামাজিক গবেষণা দুই বা ততোধিক চলক মধ্যস্থ সম্পর্ক উদ্ঘাটন করে সামাজিক নিয়ম সূত্র আবিষ্কারে আগ্রহী।
৫. সামাজিক গবেষণা উদ্দেশ্যভিত্তিক ও যৌক্তিক । গবেষক একটি নির্দিষ্ট সমস্যাকে জানার উদ্দেশ্য নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করেন।
৬. সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করার পক্ষে নীতি ও তত্ত্বের সাধারণীকরণে বিশ্বাসী।
৭. সামাজিক গবেষণা সঠিক তত্ত্ব গঠনে ও ভ্রান্ত তত্ত্ব বা তথ্য অপসারণে নিবেদিত।
৮. সামাজিক গবেষণা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য ও নীতিমালা অনুসরণে সচেষ্ট। গবেষণা প্রতিবেদনে গবেষণার প্রতিটি বিষয়েই সচেতনভাবে ও যত্ন সহকারে লিপিবদ্ধ করা হয়। গবেষণায় ব্যবহৃত প্রত্যয়সমূহের সংজ্ঞা দান করা হয়। তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, নমুনায়ন প্রক্রিয়া, তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি প্রতিটি বর্ণনা দান করা হয় এবং ঐসব পদ্ধতি ব্যবহারের পশ্চাতে কি কি যুক্তি রয়েছে তা ব্যক্ত করা হয়। গবেষণা পদ্ধতিগত বা মানবিক হলে তা নিঃসংকোচে স্বীকার করা হয়। এছাড়া গবেষণার তাত্ত্বিক ধারণাকে সাধারণীকরণ করা হয় ।
৯. সামাজিক গবেষণা পরিবেশগত ও সম্পর্কগত উপাদানের পরিবর্তিত ও বিবর্তিত অবস্থা পরিমাপে নিয়োজিত । সেজন্য সামাজিক গবেষণায় সাধারণত সংগৃহীত তথ্যকে সংখ্যাতাত্ত্বিকভাবেই প্রকাশ করা হয় ।
১০. সামাজিক গবেষণার অন্যতম বা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধৈর্য ও সময়সাপেক্ষ । সত্যের সন্ধান বা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানের জন্য অনেক সময় ও শ্রমের প্রয়োজন। গবেষণা তাড়াহুড়া করে সম্পাদনের বিষয় নয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার আলোকে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার বৈশিষ্ট্যগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধ নীতিমালা থেকেই অনুসৃত ও গ্রহণীয় হয়েছে; গবেষণার এটাই বৈশিষ্ট্য ।