অথবা, সামাজিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা লিখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব উল্লেখ কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণার তাৎপর্যসমূহ লিখ।
অথবা, সামাজিক গবেষণার ৮টি গুরুত্ব লেখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজ সদা পরিবর্তনশীল । এ পরিবর্তনশীল সমাজ ক্রমশ সহজ-সরল অবস্থা থেকে জটিলতর অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে। সমাজ যতই জটিল হচ্ছে, নানামুখী সমস্যাও ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এ সমস্যাসংকুল অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সামাজিক গবেষণা। সামাজিক গবেষণার ফলেই সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দূরীভূত হয় এবং রহস্যাবৃত্ত সামাজিক ঘটনার রহস্য ও সত্য উদ্ঘাটিত হয়। বস্তুত সমাজ সম্পর্কে নতুন জ্ঞান লাভে সামাজিক গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে । তাই সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব : নিম্নে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে কোনো সমাজ সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞার নতুন দিক উন্মোচিত করে। এটি সমাজজীবনের সামাজিক বাস্তবতাকে অনুধাবনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে ।
২.সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান সমস্যার প্রকৃতি, উৎপত্তি, কারণ, প্রভাব ও ব্যাপকতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায় এবং তা থেকে উত্তরণের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব হয় ।
৩.সামাজিক পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম। একমাত্র গবেষণালব্ধ উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই সঠিক, কল্যাণকর ও বাস্তবমুখী সামাজিক নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়।
৪.সামাজিক গবেষণা ভবিষ্যদ্বাণী করতে এবং সংস্কৃতির লক্ষ্যে উপনীত হতে সমাজকে সাহায্য করে। সামাজিক গবেষণালব্ধ উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই সমাজের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হয়।
৫.সমাজে কল্যাণমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও সামাজিক গবেষণার জ্ঞান অপরিহার্য। সামাজিক গবেষণালব্ধ উপাত্তের উপর ভিত্তি করে অনাকাঙ্ক্ষিত সামাজিক প্রপঞ্চসমূহের (Social phenomena) উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা সম্ভব হয়।
৬. সমাজের চাহিদা অনুযায়ী কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও একটি কার্যকরী সামাজিক গবেষণা সাহায্য করতে পারে। সামাজিক গবেষণা সমাজের মানুষের মধ্যে আদর্শ ও মূল্যবোধ, মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
৭.সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে সমাজস্থ বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। সামাজিক পুনর্গঠন সম্পর্কিত গবেষণার জ্ঞান বাস্তব ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবেই প্রতিনিয়ত প্রয়োগ তথা ব্যবহার করা হচ্ছে।
৮. জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপাত্তর, সীমিত সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে কিভাবে সমাজের অসীম চাহিদাকে সফলতার সাথে মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হওয়া যায় তা সামাজিক গবেষণার উপর বহুলাংশে নির্ভর করে ।
৯.সমাজের জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচি কিরূপ ফল প্রদান করছে তা জানা এবং সেগুলোকে আরো কিভাবে কার্যকরী ও যু গোপযোগী করে গড়ে তোলা যায় সে ব্যাপারেসামাজিক গবেষণা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে ।
১০. সামাজিক গবেষণার মাধ্যমে কোনো বিষয় সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহ করে সেগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে একটি নতুন সূত্র (Law) উদ্ভাবন করা যায়। কখনো কখনো বিদ্যমান আইন কিংবা প্রতিষ্ঠিত সূত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভবপর হয়। গবেষণার মাধ্যমেই সংগৃহীত উপাত্তের ভিত্তিতে বিদ্যমান কোনো তত্ত্বকে বাতিল কিংবা সংশোধন করা যায় ।
উপসংহার : পরি
শেষে বলা যায়, বিশ্বায়নের এ যুগে তথ্য প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী সমস্যা। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সামাজিক গবেষণা । সমাজস্থ বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন, নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, নতুন নতুন তত্ত্বগত উন্নয়ন এবং সর্বোপরি মানবিক কল্যাণে সামাজিক গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম।