অথবা, সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমাজ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা প্রদান করে। যদিও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে যথেষ্ট সুফল পাওয়া যায়, তথাপি সামাজিক গবেষণায়ও এ পদ্ধতির তাৎপর্যতা রয়েছে এবং বহু পূর্ব হতেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেননা অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ যেমন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিষয়বস্তু তেমনি সামাজিক গবেষণায়ও এগুলো গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়। তাই অনেকক্ষেত্রেই সমাজের গুণবাচক
প্রপঞ্চকে সংখ্যাবাচক প্রপঞ্চে রূপান্তরিত করে সামাজিক গবেষণায় এ পদ্ধতির ব্যবহার করা হয় । তাই সামাজিক গবেষণায় এ পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির গুরুত্ব : নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো :
১. নির্ভরযোগ্য উপাত্ত সংগ্রহ : সামাজিক গবেষণায় গবেষককে সঠিক, প্রাসঙ্গিক ও নির্ভরযোগ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা নির্ভুল, সঠিক ও নির্ভরযোগ্য উপাত্তের উপরই গবেষণার ফলাফলের উৎকর্ষতা নির্ভর করে ।
২. বাস্তবভিত্তিক ফলাফল : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গোপনীয়তার কোনো বিষয় নেই। এ পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তবভিত্তিক ফলাফল পাওয়া যায়। সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষককে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হয় বিধায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে সঠিক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
৩. যাচাই সাপেক্ষ : গবেষণার ফলাফল কতটুকু যৌক্তিক, উপযুক্ত ও সঠিক তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দ্বারা যাচাই- বাছাই করা সম্ভব হয়। অর্থাৎ গবেষণার ফলাফল সুষ্ঠুভাবে যাচাই করার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
৪. মানসম্মত পদ্ধতি নির্ধারণ : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে কোনটি মানসম্মত ও সঠিক পদ্ধতি তা নির্ধারণের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৫. সংগৃহীত উপাত্তের যাচাই : সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে সংগৃহীত উপাত্তকে যাচাই করার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। কেননা সংগৃহীত উপাত্তের যাচাইয়ের ভিত্তিতে এ পদ্ধতি নতুন তত্ত্ব গঠনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে ।
৬. সাধারণীকরণ : সাধারণীকরণ হলো কতকগুলো ঘটনাকে বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত ফলাফলকে সকল ক্ষেত্রে বা সকলের জন্য প্রযোজ্য বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা তথা সামান্যীকরণ করা। সামাজিক গবেষণায় সাধারণীকরণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে ।
৭. মূল্যবোধ নিরপেক্ষ : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি মূল্যবোধ নিরপেক্ষ। সংগৃহীত উপাত্তের ঠিক কি ভিত্তিতে প্রাপ্ত ফলাফল সঠিক কি না এটি নিয়েই এ পদ্ধতির আলোচনা ব্যাপৃত। কিন্তু ফলাফল ভালো কি মন্দ, , সত্য কি মিথ্যা তা নিয়ে এ পদ্ধতি ভাবে না। অর্থাৎ এ পদ্ধতিতে ব্যক্তিগত বা সমাজগত কোনো মূল্যবোধের স্থান নেই ।
৮. ভবিষ্যদ্বাণীকরণ : সমাজ এবং সমাজস্থ মানুষের চিন্তাধারা সদা পরিবর্তনশীল বিধায় এ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব সহজ নয় এবং অভ্রান্ত নাও হতে পারে । তথাপি এ পদ্ধতির দ্বারা সমাজের বিভিন্ন ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা অনেকাংশে সম্ভব হয় ।এছাড়াও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আরো কিছু ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়, যা এঁর গুরুত্বকে বহন করে :
ক. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পরীক্ষিত জ্ঞানকে সমৃদ্ধশালী করতে এবং অস্পষ্টতা ও দ্বৈততা দূরীভূত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ;
খ. এটি অর্জিত জ্ঞানের যাচাই করে থাকে;
গ.এটি কিছু নীতি
মালা প্রণয়ন করে, যা কতকগুলো বিষয়কে একত্রিত করতে সহায়তা করে ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি এবং সমাজবিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে এর প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।