সামাজিক গতিশীলতার কাঠামোগত নির্ধারক সমূহ কি কি? লিখো।

অথবা, সামাজিক গতিশীলতার কাঠামোগত উপাদানসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক গতিশীলতার কাঠামোগত ধারণার পরিচয় দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানবসমাজ গতিশীল এবং গতিশীল পৃথিবীর সকল মানুষ একই পদমর্যাদা ভোগ করে না। কোন ব্যক্তি যে সমাজে বসবাস করে সেখানে নিজের অবস্থানের একটা তুলনামূলক চিত্র সে নিজেই বুঝতে পারে। অর্থাৎ সে কারো চেয়ে বেশি আবার কারো চেয়ে কম মর্যাদা ভোগ করে। বস্তুত সামাজিক মর্যাদায় এ পরিবর্তন বুঝাতে ‘সামাজিক গতিশীলতা’ শব্দটি ব্যবহার হয়।
সামাজিক গতিশীলতার কাঠামোগত নির্ধারক : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী, দার্শনিক সমাজের গতিশীলতার পরিধি আলোচনা করতে গিয়ে কতকগুলো মৌলিক নির্ধারককে চিহ্নিত করেছেন। সেগুলো সামাজিক
গতিশীলতায় বিশেষ অবদান রাখে। নিম্নে এ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো :
১. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন : সাম্প্রতি কালে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যার ফলে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২.নির্দিষ্ট পরিবেশ ব্যবস্থা : কোন ব্যক্তির পারদর্শিতা ও প্রসার ছাড়াও পরিবেশ সামাজিক গতিশীলতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যেমন- অনুকূল পরিবেশ পরিস্থিতি কারো জীবনে ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতা আনয়নে সহায়ক হতে পারে। কোন বিশেষ আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থায় কারো ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে। আবার পরিবেশ কারো বিপরীতে যেতে পারে। সে সময় কেউ সামাজিক অবস্থান উচ্চে নিতে পারে। এমনকি কেউ হয়ত বা নিম্নগামী গতিশীলতার ফল ভোগ করে।
৩. নগরায়ণ : নগরায়ণ সামাজিক গতিশীলতার কাঠামোগত নির্ধারকসমূহের মধ্যে অন্যতম। সমগ্র বিশ্বে দিন দিন জনসংখ্যার বৃদ্ধি দ্রুত হারে হচ্ছে, যার ফলে নগরায়ণের হারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বস্তুত নগরায়ণের প্রসার মানুষকে গতিশীল করে তুলছে। কেননা নগর মানুষকে জীবিকা দিচ্ছে, দিচ্ছে নতুন সুযোগ সুবিধা, সৃষ্টি হচ্ছে নানান কর্মসংস্থানের। যার ফলে নগর এলাকায় সামাজিক গতিশীলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪. উন্মুক্ত সমাজব্যবস্থা : মুক্ত ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ সমাজে স্থির সমাজের তুলনায় সামাজিক গতিশীলতা বেশি। যে সমাজে নবীনদের সৃজনশীল কাজকর্মকে উৎসাহিত করা হয়, সেখানে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবে এর বিপরীতমুখী সমাজব্যবস্থায় গতিশীলতা কম হবে। অর্থাৎ সমাজ মুক্ত না কি বদ্ধ তার উপর নির্ভর করে সামাজিক গতিশীলতা।
৫. অলসতা : অলসতা আরেকটি নিম্নমুখী সামাজিক গতিশীলতার কাঠামোগত নির্ধারক। বস্তুত অলসতা তথা কর্মবিমুখতা কারো জন্য নিম্নগামী গতিশীলতা আনয়ন করে। এ অবস্থায় সে তার বর্তমান মর্যাদা হারায়। আমাদের দেশে অনেক অলস, অথর্ব লোক বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তি অবহেলো| ও কর্মবিমুখতার কারণে বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। যার ফলে এদের জীবনে সৃষ্টি হয়েছে নিম্নগামী গতিশীলতার।
৬. পেশা : আমাদের সমাজব্যবস্থায় এমন কিছু পেশা আছে, যা সামাজিক গতিশীলতা আনয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষভাবে ব্যবসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ সুযোগটি রয়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে, কিছু কিছু চাকরিতে দ্রুত প্রমোশনের ব্যবস্থা আছে। আবার কোন কোন চাকরিতে সে সুযোগও সীমিত।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সামাজিক গতিশীলতার মধ্য দিয়েই বর্তমান পৃথিবী আধুনিক রূপ লাভ করেছে। এক সময় মানুষ গাছের ডালে, পাহাড়ের গুহায় বসবাস করেছে। কিন্তু আজ সামাজিক গতিশীলতার মধ্য দিয়ে মানুষ বৈদ্যুতিক আলো খচিত গগনচুম্বী অট্টালিকায় বসবাস করছে। পৃথিবীর অনেক মহামানব অতি সামান্য অবস্থান থেকে বহু উচ্চ মর্যাদায় আসতে পেরেছে। এসব গতিশীলতার ফল। পৃথিবী আজ যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে বলা যায় গতিশীলতার চরম রূপ।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b7%e0%a6%b7%e0%a7%8d%e0%a6%a0-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%95-%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4/