অথবা, সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর কতব্য লিখ।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর দায়িত্ব লিখ।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর কার্যাবলি লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কার বিষয়সমূহ পরস্পর আন্তঃসম্পর্কে আবদ্ধ। এগুলো একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক। এদেরকে আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করা কঠিন ব্যাপার। এ তিনটি বিষয় সমাজকর্মীদের পরিধির আওতাভুক্ত। সমাজকর্মীরা তাদের পেশাগত দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আলোকে এসব বিষয়ের ক্ষেত্রসমূহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও মাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর ভূমিকা : নিম্নে সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর ভূমিকা আলোচনা করা হলো :
১. বাঞ্ছিত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি : সমাজকর্ম সামাজিক সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে গঠনমূলক সামাজিক পরিবেশ
আনয়নে বদ্ধপরিকর। সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজসংস্কার ও সমাজের অবাঞ্ছিত অবস্থা দূরীকরণের মাধ্যমে বাঞ্ছিত সামাজিক পরিবেশ আনয়নে সমাজকর্মী সহায়তা করে। এজন্য সামাজিক কুসংস্কার ও কুপ্রথা দূর করারও ব্যবস্থা করে থাকে ।
২. জনগণকে সংগঠিত করা : সফল সমাজ সংস্কার সাধন, সামাজিক আইন প্রণয়ন ও সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণকে সংগঠিত করা অপরিসীম এক্ষেত্রে সমাজকর্মী জনগণকে সংগঠিত করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য সমাজকর্মী বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে এ ব্যাপারে জাগ্রত করেন।
৩. জনগণকে সচেতন করা : সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সচেতনতা একটা অপরিহার্য বিষয় । জনগণ সচেতন হলেই কেবল সমাজের অবাঞ্ছিত অবস্থা দূর করা সম্ভব। সমাজকর্মী তার পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে জনগণকে সচেতন করে তোলে এবং সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থার বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৪. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন : দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে সামাজিক বাধা দূর করা এবং সামাজিক আইন বাস্তবায়নে সহায়তা করা সমাজকর্মীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রে তারা তাদের পেশাগত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে থাকে।
জনগণকে সনাতন ধ্যানধারণার পরিবর্তন করে আধুনিক চিন্তাচেতনার অধিকারী হওয়ার ব্যাপারে সমাজকর্মীর সহায়তা অতি জরুরি।
৫. নেতিবাচক মূল্যবোধের পরিবর্তন : সামাজিক মূল্যবোধ নেতিবাচক বা প্রতিকূল হলে এটি সমাজের জন্য ক্ষতি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে এটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী অনিষ্টকর মূল্যবোধ দূর করে ইতিবাচক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ভূমিকা পালন করেন।
৬. নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ : বাস্তব ও তথ্যনির্ভর নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা সামাজিক কার্যক্রম। সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক। এছাড়া এসবের বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে বাস্তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল পরিকল্পনার ফলে বাস্তব ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটে।
৭. সমাজকর্ম গবেষণা পরিচালনা : সামাজিক আইন বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী উপাদান চিহ্নিতকরণ ও এর প্রভাৰ মূল্যায়নে সমাজকর্মীর ভূমিকা অপরিহার্য। এছাড়া সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজ সংস্কারের প্রেক্ষাপট এবং এদের প্রভাব প্রভৃতি ক্ষেত্রে গবেষণাধর্মী কর্মকাণ্ড দরকার হয়ে পড়ে। এসব ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর সমাজকর্ম গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
৮. শিক্ষার হার বৃদ্ধি : জনগণ অশিক্ষিত হলে তারা তাদ
ের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে না। ফলে অশিক্ষা সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম বাধা। এ অবস্থায় সমাজকর্মী শিক্ষার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে তার মেধা ও দক্ষতা কাজে লাগাতে পারেন।
৯. মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজ সংস্কার কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচি গ্রহণ। সমাজকর্মী এজন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন। সমাজকর্মী মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করার ফলে সমন্বিত কর্মসূচি চালু হবে।
১০. আইন প্রণয়ন ও সংশোধন : সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনে নতুন নতুন আইন প্রয়োজন ও পুরাতন আইনের সংশোধন অত্যাবশ্যক। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। এর ফলে আইন প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন সহজ হবে।
১১. পরামর্শকের ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মী পরামর্শকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে যেখানেই প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হবে সেখানেই সমাজকর্মী তার পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তা করতে সক্ষম।
১২. সামঞ্জস্যকারীর ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে জনগণের মাধ্যমে। জনগণ যদি এসবের ব্যবহার করতে গিয়ে খাপ খাওয়াতে অসমর্থ হন সমাজকর্মী এক্ষেত্রে সামঞ্জস্যকারীর ভূমিকা পালন করে থাকে।
১৩. জনমত সৃষ্টি : জনমত সৃষ্টিতে সমাজকর্মী প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে। সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজসংস্কার পরিচালনা এবং সামাজিক আইন প্রণয়নে জনগণের সমর্থন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে সমাজকর্মী জনগণকে সচেতন করে তোলে।
১৪. জনঅংশায়ন : জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে সামাজিক কার্যক্রম ও সমাজসংস্কার আন্দোলন পরিচালনা ও সামাজিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সম্ভবনয়। সমাজকর্মী এসব কাজে জনঅংশায়নের ব্যাপারে জনগণকে সজাগ করে তোলে।
১৫. অন্যান্য : সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে সমাজকর্মীর অন্যান্য ভূমিকা হচ্ছে কর্মসূচি উন্নয়নকারী, নেতৃত্ব প্রদান, বাঞ্ছিত কাঠামো সৃষ্টি, মূল্যায়নকারী প্রভৃতি।
উপসংহার : উপসংহারে বলা যায়, সামাজিক কার্যক্রম, সামাজিক আইন ও সমাজ সংস্কারের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। ফলে তারা একে অপরের সহায়ক। এসব ক্ষেত্রে কার্যকর ও বাস্তবধর্মী সফলতা আনয়নে সমাজকর্মী তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। এজন্য সমাজকর্মী তার পেশাগত জ্ঞান, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে থাকে।