অথবা, সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের মধ্যে নেতিবাচক লিখ।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য লিখ ।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের মধ্যে অসামঞ্জস্য লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে কতিপয় বিষয়ে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের মধ্যে পার্থক্য : নিম্নে সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের পার্থক্যের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো তুলে ধরা হলো :
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য : সামাজিক কার্যক্রম বলতে সমাজে প্রচলিত ক্ষতিকর রাজনীতি বা প্রথা প্রতিষ্ঠানের সংশোধন বা মূলোৎপাটনকে বুঝায় যার জন্য সুসংগঠিত দলীয় প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে সামাজিক আইন বলতে রাষ্ট্র কর্তৃক কতিপয় বিধিবিধানের সমষ্টিকে বুঝায় যা সমাজ থেকে ক্ষতিকর অবস্থা দূর করে সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে।
২. সমাজকর্মীর সংশ্লিষ্টতা : সামাজিক কার্যক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকে। এতে সমাজকর্মী সামাজিক কার্যক্রমবিদ হিসেবে তার ভূমিকা পালন করে থাকে। অপরদিকে সামাজিক আইন প্রণয়নে চাপ সৃষ্টির জন্য সমাজসংস্কারক, স্বেচ্ছাসেবী ও মানবহিতৈষী ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে। ফলে এখানে সমাজকর্মীর তেমন প্রয়োজন নেয়।
৩. সমাজকর্ম পদ্ধতির অংশ : সামাজিক কার্যক্রম সমাজকর্ম পদ্ধতির সহায়ক পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। পেশাদার সমাজকর্মের জ্ঞান ও দর্শনের আলোকে এটি পরিচালিত হয়। অন্যদিকে, সামাজিক আইন সমাজকর্ম পদ্ধতির কোন অংশ নয়। এটি সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক প্রণীত হয়।
৪. কর্মধারা ও কৌশল : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা বা সম্পাদিত করতে গিয়ে বিভিন্ন কর্মধারা ও কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এগুলো হলো : সচেতনতা, গবেষণা, জনমত সৃষ্টি, আন্দোলন, বাস্তবায়ন প্রভৃতি। অন্যদিকে
সামাজিক আইন অনুগত কর্মধারা ও প্রক্রিয়াসমূহ হচ্ছে সমস্যা চিহ্নিতকরণ, বিল তৈরি, আইনসভায় উপস্থাপন, অনুমোদন,
বাস্তবায়ন প্রভৃতি ।
৫. আদর্শ ও স্বার্থ : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয় জনস্বার্থের আদর্শের ভিত্তিতে ও পরিকল্পিত পন্থায়। অপরদিকে, সামাজিক আইনে জনস্বার্থের পাশাপাশি আইন প্রণেতা ও রাজনীতিকদের স্বার্থকেও প্রাধান্য দেয়া হয় ।
৬. বাস্তবায়নগত দিক : সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে জনগণ এর সুফল পেয়ে থাকে। অপরদিকে, সামাজিক আইন প্রণীত হলে জনগণ এর সুফল পেতেও পারে আবার নাও পেতে পারে। কেননা, আইন প্রয়োগই হলো মূলকথা।
৭. জনগণের অংশগ্রহণ : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং বাস্তবায়নে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয়। ফলে এটি একটি সমষ্টিগত কার্যক্রম। অপরদিকে, সামাজিক আইন একটি রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানের সমষ্টি। এখানে জনগণ আইন মেনে চলেন।
৮. আন্দোলন ও সমন্বয়ধর্মী : সামাজিক কার্যক্রম একটি আন্দোলনধর্মী বিষয়। আন্দোলনের মাধ্যমে এর সফলতা
আসে । অপরদিকে সামাজিক আইন আন্দোলনধর্মী নয়, এটি সমন্বয়ধর্মী ।
৯. পরিধিগত : সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি বেশ ব্যাপক ও বিস্তৃত। কেননা এর কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়। কিন্তু সামাজিক আইনের পরিধি সীমিত ও সংকীর্ণ। এটি নির্দিষ্ট সমস্যাকে ঘিরে আবর্তিত।
১০. সুফল : সামাজিক কার্যক্রমের সুফল সবাই ভোগ করে, কেননা এতে বিভিন্ন শ্রেণির জনগণ অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে সামাজিক আইনের সুফল অপরাধীরা ভোগ করতে পারে না। এরা আইনের মাধ্যমে শাস্তি ভোগ করে।
উপসংহার : উপসংহারে বলা যায়, সামাজিক কার্যক্রম ও সামাজিক আইনের মধ্যে উপর্যুক্ত পার্থক্য বা বিসাদৃশ লক্ষ করা যায়। এসব পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এদের মধ্যে ঘনিষ্ট যোগাযোগ ও নির্ভরতা বিদ্যমান রয়েছে। এদের প্রয়োজন সমাজে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।