সামাজিক কার্যক্রমের প্রতিবন্ধকতা লিখ ।

অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের সমস্যা আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের অন্তরায় বর্ণনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়ন তরান্বিত হয়। এর ফলে সামাজিক সমস্যাদিকে প্রতিরোধ করা যায়। এজন্য সামাজিক কার্যক্রমের কর্মীরা এর দিকনির্দেশনা ও গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে থাকে। সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ পদ্ধতি তার লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতা, বাধা ও সমস্যার সম্মুখীন হন।
সামাজিক কার্যক্রমের অন্তরায় : সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে পেশাদার সমাজকর্মী এবং অংশগ্রহণকারী জনগণ সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. ভাষাগত সমস্যা : সামাজিক কার্যক্রমের ভাষা সহজ-সরল না হলে এর অর্থ ঠিকভাবে বুঝা যায় না। ফলে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ও অংশগ্রহণকারী লোকজনের পক্ষে এর বাস্তবায়ন ও সুফল ভোগ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই ভাষাগত পার্থক্য থাকলে সামাজিক কার্যক্রম প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়।
২. স্বার্থের উপস্থিতি : সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী সমাজকর্মী এবং অংশগ্রহণকারী জনগণের মধ্যে নিজ নিজ
স্বার্থের উপস্থিতির কারণে স্বার্থগত দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। এর ফলে সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হয়ে এক পক্ষ অন্য
পক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যস্ত থাকে। ফলশ্রুতিতে সামাজিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বাধার সম্মুখীন হয়।
৩. নেতৃত্বের অভাব : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় নেতৃত্বের সংকেত থাকলে এটি বাস্তবায়নে সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে এর কার্যক্রমে ধারাবাহিকতা থাকে না এবং এজন্য গৃহীত আন্দোলনের সুফল পাওয়া যায় না।
৪. প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা হলো সমাজে প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার। এসব কুসংস্কার ও কুপ্রথা থেকে সমাজের মানুষকে বের করে আনা দুরূহ ব্যাপার।
৫. দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্নতা : সামাজিক সমস্যার প্রতি জনগণের অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। ফলে এর প্রভাবে সামাজিক সমস্যার সমাধান কঠিন হয়ে পড়ে। আর এটি সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের বাধা হিসেবে কাজ করে।
৬. পরিধি নির্ধারণে সমস্যা : সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি বা ক্ষেত্র নির্ধারণের অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়। ফলে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনায় তখন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
৭. পারস্পরিক মর্যাদার দ্বন্দ্ব : সমাজস্থ মানুষের পারস্পরিক মর্যাদা থেকে অনেক সময় দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানুষের মর্যাদার দ্বন্দ্ব সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে সমস্যা হিসেবে কাজ করে ।
৮. পেশাগত মতানৈক্য : বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে সমাজকর্মীর পেশার নানা কারণেই মতভেদ দেখা দিতে পারে। পেশাগত মতভেদ এর ফলে সামাজিক কার্যক্রম কর্মীর পক্ষে কর্মসূচির বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
৯. উদ্দেশ্যগত বিভিন্নতা : সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সঠিক না হলে এর প্রয়োগে সমস্যা দেখা দেয়। অর্থাৎ উদ্দেশ্যগত বিভিন্নতা সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম প্রতিবন্ধক।
১০. অজ্ঞ ও অশিক্ষিতদের অংশগ্রহণ : সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নে যদি অজ্ঞ ও অশিক্ষিত লোকেরা অংশগ্রহণ করে তাহলে এটি বাধার সম্মুখীন হবে।
১১. পেশাগত স্বীকৃতির অভাব : উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজকর্ম আজও পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পায় নি। ফলে এসব দেশে সামাজিক কার্যক্রম পদ্ধতির বাস্তবায়ন একটি কঠিন ব্যাপার।
১২. প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা : সামাজিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রায ়ই প্রশাসন বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এর কার্যক্রম বাধার সম্মুখীন হয়।
১৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা : দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করলে সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। তাই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সামাজিক কার্যক্রমের একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত।
১৪. বিবিধ : সামাজিক কার্যক্রমের আরো কতিপয় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। সেগুলো হলো একমুখিতা, আইন ও নৈতিকতার মধ্যে মতবিরোধ, সাহসী মনোভাবের অভাব, কর্মী-সংস্থার মধ্যে দূরত্ব, নাগরিক সেবার ত্রুটি প্রভৃতি ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজকর্মের পদ্ধতি হিসেবে সামাজিক কার্যক্রম একটি স্বীকৃত ও গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি । ব্যক্তি পর্যায়ে সমস্যার সমাধান এবং সমষ্টি পর্যায়ে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরনে এই পদ্ধতি বিভিন্নমুখী বাধা ও সমস্যার সম্মুখীন হয়। এজন্য সামাজিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে উক্ত সমস্যার সমাধান জরুরি।