অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের অনুশীলনক্ষেত্র উল্লেখ কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের পরিসীমা বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। এর মাধ্যমে নারীকল্যাণ, শিশুকল্যাণ ও অসহায় মানুষের কল্যাণ সাধনের একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা যায়।
সামাজিক কার্যক্রমের প্রয়োগক্ষেত্র : নিম্নে সামাজিক কার্যক্রমের পরিধি বা প্রয়োগক্ষেত্র আলোচনা করা হলো :
১. নারী নির্যাতন : নারীদের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন এবং প্রয়োজনীয় জনমত গড়ে তুলে নারী নির্যাতন বন্ধ করা সামাজিক কার্যক্রমের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।
২. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে বর্তমানে একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজব্যবস্থা এবং মনোভাবের জন্য এক্ষেত্রে জনগণ তেমন এগিয়ে আসছে না। তাই সামাজিক কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের মাঝে গঠনমূলক পরিবর্তন আনয়ন করা অত্যাবশ্যক। তাছাড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা দরকার।
সামাজিক কার্যক্রম আইন প্রণয়নের সুযোগ সৃষ্টি এবং আইন প্রণয়ন উভয় ক্ষেত্রেই সহায়তা করে থাকে।
৩. যৌতুক প্রথা : সামাজিক কার্যক্রমের গণযোগাযোগ ও শিক্ষামূলক কৌশল অবলম্বন করে যৌতুক প্রথা উচ্ছেদের জন্য শক্তিশালী জনমত গড়ে তোলা যেতে পারে। এটি তার পরিধির আওতাভুক্ত।
৪. ভিক্ষাবৃত্তি : জাতীয় স্বার্থেই ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধ করা অত্যাবশ্যক। এজন্য জনগণকে সচেতন করা এবং ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরি। ভিক্ষাদান নিরুৎসাহিত করতে জনমত গঠন এবং ভিক্ষুক পুনর্বাসনের জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন উভয় ক্ষেত্রই সামাজিক কার্যক্রমের পরিধির অন্তর্ভুক্ত।।
৫. পতিতাবৃত্তি : বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এদের নিরোধকল্পে ‘১৯৩৩ সালের বঙ্গীয় পাপ ব্যবসায় নিরোধ আইন’ চালু থাকলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার কোন কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। কাজেই পতিতাবৃত্তি নিরোধের জন্য একদিকে যেমন জনমত গঠন করতে হবে, অন্যদিকে তাদের পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি সামাজিক কার্যকমের আওতায় পড়ে।
৬. মাদকাসক্তি : আমাদের দেশে মাদকাসক্তি প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা মাদকাসক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনেকটা দায়ী। আর মাদকদ্রব্যকে সহজলভ্য করে তুলেছে মূলত মাদক চোরাচালানিরা। মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তথা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ার সুসংগঠিত উপায় হচ্ছে সামাজিক কার্যক্রম। অর্থাৎ এ সমস্যা মোকাবিলায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়। যা সামাজিক কার্যক্রমের আওতাভুক্ত।
৭. সামাজিক দুর্নীতি : বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতি প্রবেশ করেছে। এর মূলোৎপাটনের জন্য সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনমত গঠনসহ ব্যাপক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে শক্তিশালী সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা আবশ্যক। এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিক কার্যক্রম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম। ফলে এটিও এর অন্তর্ভুক্ত।
উপসংহার : উপরিউক্ত ক্ষেত্রসমূহ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে, যেমন- নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা, গৃহসংস্থান, জনগণকে সচেতন করা, সামাজিক সামঞ্জস্যহীনতা, সামাজিক বিপর্যয় প্রভৃতি ক্ষেত্রে এদেশে সামাজিক কার্যক্রম প্রয়োগ করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রসমূহে সামাজিক কার্যক্রম প্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার কার্যকর সমাধান করা যেতে পারে। এজন্য ব্যাপক প্রচারণা, সেমিনার, পোস্টার, ফিচার, প্রতিবেদন ইত্যাদির মাধ্যমে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।