সামাজিক কার্যক্রমের নীতিসমূহ বর্ণনা কর।

অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের মূলনীতিসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের পদ্ধতিসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রম কতকগুলো সাধারণ নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। সামাজিক কার্যক্রমের বিভিন্ন ধরন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এগুলো অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সামাজিক নীতি অনুসরণ করা হয়। সামাজিক কার্যক্রমের নীতি আলোচনার ক্ষেত্রে G. A. A Britto এর কয়েকটি নীতি নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১.বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপনের বা অর্জনের নীতি,
বৈধকরণ নীতি, নাটকীয়তা প্রদানের বা নাটকীয়করণ বা নাটকে রূপান্তরিতকরণ নীতি,
৪. বহুকৌশল বা বহুমুখী কৌশল অবলম্বনের নীতি, দ্বিমুখী বা দ্বৈতপদ্ধতি গ্রহণনীতি এবং
৬. বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণের নীতি।
সামাজিক কার্যক্রমের নীতিসমূহ : নিম্নে নীতিগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো :
১. বিশ্বাসযোগ্যতা স্থাপনের বা অর্জনের নীতি : এ নীতির কাজ হলো জনগণের মধ্যে সামাজিক কার্যক্রমের নেতৃত্ব সম্পর্কে আস্থাশীল ভাবমূর্তি গড়ে তোলা। কেননা নেতৃত্ব, সংগঠন ও আন্দোলনে অংশগ্রহণরতদের ন্যায়পরায়ণতা, নিষ্ঠা ও
সততা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থা ও সমর্থন ছাড়া কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এর ফলে আন্দোলনের বিরোধী পক্ষ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের সমর্থন আদায় করা সহজ হয়। অর্থাৎ এ রকম আস্থা বিপক্ষ মতাবলম্বী, নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় নয় এমন জনগণের সমর্থন আদায় করা যায়। এ রকম বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার কতকগুলো ব্যবস্থা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো উদাহরণসহ দেয়া হলো :
ক. বিরোধীদের সুনাম প্রকাশ করে : ১৯০৬ সালে আফ্রিকার জুলু উপজাতীয়দের সাথে নাটাল বাহিনীর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ সময় মহাত্মা গান্ধী নাটাল বাহিনীদের সেবা প্রদান করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করার অনুমতি দেন এবং এক সময় স্বেচ্ছাসেবী সৈন্যগণ সংশ্লিষ্টদের সেবায় এগিয়ে আসে। যেসব সেনাবাহিনীর অফিসারগণ গান্ধীর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রত্যাবর্তনের বিরোধী ছিল, তারা গান্ধীর বিশ্বস্ততার সাথে সেবায় নিয়োজিত হওয়া দেখে আশ্চর্য হয়। বিরোধীদের প্রতি এ রকম সুনাম প্রকাশ গান্ধীর মানবতাবোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রতি আস্থার ভাবমূর্তি তৈরি করে। গান্ধীর এ ধরনের
মানবতাবোধ ও বিশ্বস্ততার প্রতি বিরোধীদের আস্থা সৃষ্টি করে।
খ. দৃষ্টান্ত স্থাপন করে : সামাজিক কার্যক্রম এবং আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা অর্জন করার জন্য নেতৃত্বের পর্যায়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অন্যদের আস্থাশীলতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। গান্ধী নিজে যা প্রচার করতেন তা নিজে অনুশীলন করতেন। যখন কংগ্রেস, ব্রটিশ প্রদত্ত পদক পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন গান্ধী নিজে তার প্রাপ্ত খেতাব৷ ‘কায়সার-ই- হিন্দু’ সহ অন্যান্য পদক পরিত্যাগ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
গ. জনগণের জরুরি অনুভূত প্রয়োজনে সংগ্রামী হয়ে : সামাজিক কার্যক্রমের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি অন্যদের আস্থাশীলতা সৃষ্টি করার অন্যতম উপায় হলো সামাজিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এমন সমস্যা নির্বাচন করা যা অনুভূত প্রয়োজন হতে সৃষ্ট। এতে জনগণের মধ্যে আস্থাশীলতা সৃষ্টি হয়।
২. বৈধকরণ নীতি : বৈধকরণ নীতি হলো একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া, “The movement-objectives are morally
right.” অর্থাৎ, নৈতিকভাবে আন্দোলনের উদ্দেশ্য সঠিক, এ বৈধকরণ নীতির ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণ ও কার্যক্রমের সাথে
জড়িত ব্যক্তিদের বৈধকরণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে বিশ্বাস করানো হয়। বৈধকরণ নীতি সম্পর্কে Britto বলেছেন, “It is a cotinual process. Before launching the programme, the leaders justify their action, subsequently;
as the conflict exhilarates to higher stage and the leaders and new dimention to their programme,
further justification is added and fresh agruments are put forth. Such justification is not done by leaders alone. The followers too, contribute to the legitimization process, by and in the course of their participation.”
বৈধকরণ নীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে আন্দোলনকারী আন্দোলনের উদ্দেশ্যকে যুক্তিপূর্ণভাবে স্থাপন করার
ক্ষেত্রে ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয়, দর্শন সম্বন্ধীয় যৌক্তিক কারিগরি জ্ঞান এবং জনমত গঠনের উপায় জোরালোভাবে ব্যবহার করে থাকেন।
বৈধকরণ প্রক্রিয়ার কতকগুলো উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে। এ দিকগুলো হলো কোন কার্যক্রম পরিচালনায় আন্দোলনের যথার্থতা, নৈতিক যুক্তি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট জনগণের সন্দেহের অবতারণা ঘটলে সেক্ষেত্রে সন্দেহ দূরীকরণ ও স্বীকৃতি নিশ্চিতকরণ বিবেচ্যবিষয়। এক্ষেত্রে জনসমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে বৈধকরণ নীতির কতকগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এ পদ্ধতিগুলো হলো :
ক. আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় পদ্ধতি;
নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগত পদ্ধতি এবং
গ. আইনগত ও কারিগরি সহায়তাগত পদ্ধতি ।
৩. নাটকীয়তা প্রদানের বা নাটকীয়করণ বা নাটকে রুপান্তরিতকরণ নীতি : প্রায় সবরকম আন্দোলনের সফলতা অর্জনের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা নাটকীয়তার নীতি অবলম্বন করে। কারণ এ নীতির সাহায্যে জনগণের আবেগ অনুভূতিকে কার্যক্রম গ্রহণ করার সপক্ষে খুব সহজেই সাড়া জাগানো যায়। অর্থাৎ নাটকীয়তাকরণ বা Dramatization হলো এমন একটি নীতি, যা অবলম্বন করে আন্দোলনের উদ্যোক্তাগণ আবেগপূর্ণ বীরত্বগাথা সংবেদনশীল সংবাদ প্রকাশ, আবেগীয় উত্তেজনাকর স্লোগান ইত্যাদি উপায়ে জনগণকে জাগ্রত করে, যাতে তারা আন্দোলনে অংশ নেয়। নাটকীয়করণ নীতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে Britto বলেছেন, “Dramatization is the principle of mass mobilization by which the leaders of a movement galuanize the population into action by emotional appeals to heroism, sensational news-management, novel procedure, pungent slogans.’
এ নীতির সাহায্যে সাফল্য অর্জন করার ক্ষেত্রে কতকগুলো কৌশল গ্রহণ করা হয়। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
ক. সংগীতের ব্যবহার : যে বিষয়কে কেন্দ্র করে আন্দোলন গড়ে উঠবে তার কারণ ও প্রভাব নিয়ে পরিবেশিত আবেগপূর্ণ মনোগ্রাহী সংগীত আন্দোলনে নাটকীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে স্থানীয় কবি ও সংগীত শিল্পীদের উৎসাহিত করে তোলা হয়।
বর্তমানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি প্রভৃতি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এগুলোকে নিয়ে যেসব সমস্যার উদ্ভব হয়, তার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সংগীতের ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্যার গুরু সদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলনের সমর্থনে জনমত গঠনের জন্য গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সঙ্গীত প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল ।
খ. শক্তিশালী বক্তৃতা : আন্দোলনের বিরোধীদলের অন্যায় অত্যাচার ও আচার-আচরণের নানাদিক তুলে ধরে
শক্তিশালী বক্তৃতার সাহায্যে আন্দোলনে নাটকীয়তা সৃষ্টি করা যায়, এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মহাত্মা গান্ধী তাঁর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নিজেদের উৎসর্গ করার জন্য যুবশ্রেণির প্রতি জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেন।
গ. মহিলাদের ভূমিকা : যে কোন আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিখ্যাত ক্ষমতাশীল মহিলারা নেতৃত্ব দানের কৌশল এর নাটকীয়তা সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সাবেক পাকিস্তান আমলে (পাকিস্তান মহিলা সমিতি) বা All Pakistan Women Association – APWA এর সদস্যগণ কার্যকর ভূমিকা পালনের ফলে ১৯৬১ সালে মুসলিম
পারিবারিক অধ্যাদেশ প্রণীত হয়।
ঘ. বর্জন বা অবরোধ : বর্জন বা অবরোধের মাধ্যমে আন্দোলনে নাটকীয়তা আনয়ন করা যায়। এককথায় অবরোধ, হরতাল, অসহযোগ, পিকেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে আন্দোলনে নাটকীয়করণ সম্ভব হয়।
ঙ. স্লোগান : ব্যতিক্রমধর্মী আকর্ষণীয় স্লোগানের মাধ্যমে আন্দোলনে নাটকীয়তা আনয়নে জনগণকে সংগঠিত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ১৯১৯ সালে মহাত্মা গান্ধী এক বছরের মধ্যে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার স্লোগান ইস্যু করেন। এরূপ স্লোগান সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার আলো এবং কার্যক্রম গ্রহণে সক্রিয়তা দান করে। স্বরাজ প্রতিষ্ঠা যদিও গান্ধীর আন্দোলনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না, তথাপি এর প্রভাবে লাখ লাখ সাধারণ মানুষ তাঁর অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়। এ স্লোগান জনগণের মধ্যে এমন একা শক্তির উৎসাহ যুগিয়েছিল, যা পূর্বে কখনো দেখা যায় নি। সুতরাং নাটকীয়করণ নীতির মাধ্যমে জনগণকে আন্দোলনের ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ করা সম্ভব হয়।
৪. বহুমুখী বা বহুকৌশল অবলম্বনের নীতি : যে কোন আন্দোলনের ক্ষেত্রে কোন একক কৌশল ব্যবহার করে আন্দোলনের সফলতা অর্জন করা যায় না যেমন, তেমনি জনগণের সমর্থনও পাওয়া যায় না। আন্দোলনে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করে জনগণের সমর্থন আদায় করা যায় যেমন, তেমনি আন্দোলনের সফলতাও অর্জন করা সম্ভব হয়।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সামাজিক কৌশল অবলম্বন করে সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সমষ্টি উন্নয়নের অভিজ্ঞতার আলোকে জেল্টম্যান এবং ডানকান চারটি উন্নয়ন কৌশল শনাক্ত করেছে পরবর্তীতে সামাজিক কার্যক্রমের নীতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ক. শিক্ষা কৌশল : এ কৌশলের মাধ্যমে ব্যক্তিগত, দলগত এবং সাধারণ পর্যায়ে মানুষকে সামাজিক কার্যক্রমের বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান দেয়া হয়। এ শিক্ষা কৌশল প্রায়োগিক হয় আবার কতকগুলো কৌশলের মাধ্যমে। এ কৌশলগুলো নিম্নে দেয়া হলো :
i.বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে ও। এগুলো
ii. প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষা।
i. বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে : শিক্ষা কৌশলে বয়স্ক শিক্ষা ও উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষাদান কৌশল ব্যবহার করা হয়। বয়স্ক শিক্ষা কৌশলের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে শিক্ষিত করে তোলা হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ের কাজ, দলগত পর্যায়ের কাজ, এবং
সমষ্টিগত পর্যায়ের কাজ।
a. ব্যক্তিগত পর্যায়ের কাজ : ব্যক্তিগত পর্যায়ের কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক কার্যক্রমবিদকে নিজ উদ্যোগে সমস্যাগ্রস্ত
‘ব্যক্তির কাছে গিয়ে সামাজিক কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক যেমন- কারণ, উদ্দেশ্য, কাজ প্রয়োগ এবং তাদের অংশগ্রহণের
উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে থাকেন।
b. দলগত পর্যায়ের কাজ : দলগত পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রমের অনেকগুলো দিক সম্পর্কে ধারণা
দেওয়া হয়। লক্ষ্য, উদ্দেশ্য
c. সমষ্টিগত পর্যায়ের কাজ : সমষ্টিগত পর্যায়ের কাজের মাধ্যমে সমাজকর্মীগণ সামাজিক কার্যক্রমের৷ ও কাজ সম্পর্কে জনগণকে মৌখিকভাবে এবং ছাপানো কাগজ ব্যবহার করে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন।
ii. প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষা : বয়স্ক শিক্ষা ছাড়াও প্রদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষা কৌশল প্রয়োগ করে সামাজিক কার্যক্রম আন্দোলনে জনসমর্থন আদায় করা হয়। সামাজিক কার্যক্রমের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য লক্ষ্যভুক্ত জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এ শিক্ষা কৌশল গ্রহণ করা হয়। লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীকে সামাজিক কার্যক্রমের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক দিক সম্পর্কে প্রদর্শনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হয়। সুতরাং সামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে জ্ঞানের প্রসার, ইতিবাচক
দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন এবং লক্ষ্যভুক্ত জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনীমূলক বিষয় গ্রহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রদর্শনমূলক শিক্ষা কৌশল বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
খ. প্ররোচনামূলক কৌশল : প্ররোচনামূলক কৌশলের প্রয়োগ করে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে অন্যদের প্ররোচিত করে নতুন ধারণা উদ্বুদ্ধ করা হয়। অর্থাৎ, সামাজিক কার্যক্রমের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করাই হলো এ কৌশলের অন্যতম উল্লেখযোগ্য একটি দিক, ধারাবাহিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে অন্যদের প্ররোচিত করা হয়।
গ. সুবিধা লাভের সুযোগ সুবিধা দান কৌশল : সামাজিক কার্যক্রম আন্দোলনের মাধ্যমে সমাজস্থ সকল শ্রেণির ও তরের মানুষ যাতে সুবিধা লাভের সুযোগ পায় তার জন্য এ কৌশলটি ব্যবহার করা হয়। এ কৌশলের মূলকথা হলো আন্দোলনে বা সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি ব্যক্তি সমানভাবে সুযোগ লাভ করবে। সুতরাং সাময়িক কার্যক্রম আন্দোলনে সমাজের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ সুবিধা যাতে সহজতর হয় এবং সমানভাবে ভোগ করতে পারে সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এ কৌশলটি প্রয়োগ করা হয়।
ঘ. শক্তিপ্রয়োগ কৌশল : এ কৌশলের মাধ্যমে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য দর্শননীতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। শক্তিপ্রয়োগের কৌশল ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এ কৌশলের একটি উল্লেখযোগ্য ধরন হলো সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা একঘরে করে রাখা, যাতে করে আন্দোলনের বিপক্ষবাদীরা সামাজিক মিথস্ক্রিয়া থেকে বঞ্চিত থাকে।
৫. দ্বিমুখী বা দ্বৈতপদ্ধতি গ্রহণনীতি : এ নীতিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে একদিকে গঠনমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ, অপরদিকে বিপক্ষদের মোকাবিলায় সাধারণ জনগণকে সংগঠিত করা হয়, যাতে গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সহযোগিতা ও সমবায়মূলক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠে। কারণ সমাজে কোন পরিবর্তন সাধন করতে হলে সেক্ষেত্রে সংঘাতের পরিবর্তে এ দ্বিমুখী নীতিতে অহিংসধারা অনুসরণ করে সমাজ উন্নয়নের লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যায়।
৬. বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণের নীতি : সামাজিক কার্যক্রম আন্দোলনে যাতে জনগণের সমর্থন পাওয়া যায়, সেজন্য সাধারণ মানুষকে সংঘবদ্ধকরণের লক্ষ্যে বিবিধ কর্মসূচি গ্রহণ নীতিটি অনুসরণ করা হয়। এ কর্মসূচির মূলকথা হলো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এ তিন ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করে জনগণের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এ তিন ধরনের কর্মসূচির বহুমুখিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
ক. সামাজিক কার্যক্রম : সামাজিক কার্যক্রম অনেকভাবেই গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন- উন্নয়নমূলক, কুসংস্কার দূরীকরণমূলক, মানবসম্পদ উন্নয়নমূলক, মহিলাদের অধিকার আদায়মূলক প্রভৃতি। এভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণকে সংঘবদ্ধ করা যায়।
খ. অর্থনৈতিক কর্মসূচি : অর্থনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক কার্যক্রম আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের চাহিদা পূরণের জন্য অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে। অর্থনৈতিক কর্মসূচি বিভিন্নভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে; যেমন- আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কৃষিঋণ কর্মসূচি ইত্যাদি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ জনগণের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা হয়, যাতে আর্থিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত সাধারণ জনগণ তাদের অসুবিধা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয় এবং সামাজিক কার্যক্রম আন্দোলনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে উদ্দীপ্ত হয়।
গ. রাজনৈতিক কর্মসূচি : সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচি ছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মসূচির সাহায্যেও জনগণের সমর্থন এবং জনগণকে সংঘবদ্ধকরণের চেষ্টা চালানো হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচি যেমন- ভোট সচেতনতা কর্মসূচি, রাজনৈতিক কোন আদর্শ সম্পর্কিত কার্যক্রম ইত্যাদি।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, পেশাদার সমাজকর্মের ক্ষেত্রে সামাজিক কার্যক্রমের নীতিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ পেশাদার সমাজকর্মের সাথে পরিবর্তন অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। তাই সামাজিক কার্যক্রম পরিবর্তনের পদ্ধতি হিসেবে (Social action as a method of change) ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে যেসব জনগণ সামাজিক কার্যক্রমের পরিবর্তনের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করতে চায়, তাদের ক্ষেত্রে সামাজিক কার্যক্রমের নীতিগুলো নির্দেশনা হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।