সামাজিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যাবলি বর্ণনা কর।

অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য কী? বিস্তারিত বর্ণনা কর।
অথবা, কী কী উদ্দেশ্যাবলি নিয়ে সামাজিক কার্যক্রম কাজ করে আলেচানা কর।
অথবা, সামাজিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্যাবলি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক কার্যক্রমের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে এর লক্ষ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা যায়। এ প্রসঙ্গে পোস্টার আর. সি. বলেন, সামাজিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য প্রচলিত আইন বা সামাজিক কাঠামোর পরিবর্তন আনয়ন বা প্রচলিত সামাজিক প্রথা পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের সূচনা করা।
সামাজিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য : সামাজিক কার্যক্রমের উদ্দেশ্য নিম্নে বর্ণনা করা হলো :
১. জনগণকে সচেতন করে তোলা : বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা এবং সমাজজীবনে এসব সমস্যার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।
২. সামাজিক পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন করা : সামাজিক কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে বাঞ্ছিত সামাজিক পরিবর্তন ও সংস্কার সাধন করা। এজন্য সামাজিক কার্যক্রম মৌলিক সামাজিক অবস্থা ও সামাজিক নীতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে থাকে ।
৩. জনগণের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সাধন : প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে জনগণের অজ্ঞতা ও কুসংস্কার দূর করে তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে গঠনমূলক পরিবর্তন সাধন করা সামাজিক কার্যক্রমের একটি বিশেষ লক্ষ্য।
৪. সমাজের অগ্রগতি ও কল্যাণ সাধন : সামাজিক নীতি ও সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন ও সংশোধন আনয়নের মাধ্যমে সমাজের অগ্রগতি ও কল্যাণ সাধন করা সামাজিক কার্যক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
৫. উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা : উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণকে অবগত করা এবং এগুলোর প্রতি সমর্থনমূলক মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলার মাধ্যমে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাও সামাজিক কার্যক্রমের একটি বিশেষ লক্ষ্য।
৬. জনমত গঠন করা : সংগঠিত দলীয় প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রথা, প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য ক্ষেত্র ও পরিস্থিতির পক্ষে বা বিপক্ষে জনমত গঠন করা সামাজিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
৭. সামাজিক তথ্য সরবরাহ করা : সামাজিক নীতি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এবং নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক তথ্য সরবরাহ করা।
৮. সামাজিক গতিশীলতা সৃষ্টি : স্থবির সমাজের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা এবং তাদের রক্ষণশীল মনোভাবের পরিবর্তন সাধন করে সামাজিক গতিশীলতা সৃষ্টি করা সামাজিক কার্যক্রমের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৯. সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করা : পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং সামগ্রিকভাবে সামাজিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য বিধানে সহায়তা করাও সামাজিক কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
১০. সামাজিক আইন ও নীতি প্রণয়নের সুযোগ সৃষ্টি : সংগঠিত দলীয় প্রচেষ্টায় ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে সামাজিক প্রশাসন ও সরকারকে প্রভাবিত করে প্রয়োজনীয় সামাজিক আইন ও নীতি প্রণয়নের সুযোগ সৃষ্টি করা সামাজিক কার্যক্রমের অতীব গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য।
১১. সামাজিক নীতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা : সামাজিক কার্যক্রমের আরেকটি উদ্দেশ্য হলো- সামাজিক নীতি প্রণয়নের যুক্তিসম্মত তথ্যাদি সরবরাহ করে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে প্রচলিত নীতির পরিবর্তন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন সামাজিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
১২. সমাজের নিম্নশ্রেণীর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা : সমাজের নিম্নশ্রেণীর মুখপাত্র হিসেবে তাদের সমস্যাবলি তুলে ধরার সুসংগঠিত দলীয় প্রচেষ্টা হিসেবে সামাজিক কার্যক্রম কাজ করে থাকে।
১৩. সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : সামাজিক কার্যক্রম সমষ্টির অসুবিধাগ্রস্ত জনগণকে সংগঠিত করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে সমাজের প্রাপ্ত সম্পদ ও সুযোগ সুবিধা পেতে সাহায্য করে।
উপসংহার : উপরিউক্ত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্যই সামাজিক কার্যক্রম সংগঠিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে থাকে। পরিশেষে মনীষী আরমান্ডো মোরালস এর উক্তি উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেছেন, “সমাজকর্মীরা জনসমষ্টি, দল, সংগঠনকে কার্যকরী ভূমিকা পালনে অথবা আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে অধিক দায়িত্বশীল আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মানব চাহিদা পূরণের জন্য সামাজিক কার্যক্রম কৌশল ব্যবহারে সম্পৃক্ত হয়।”