অথবা, সামাজিক বৈষম্যের জন্য দায়ী সামাজিক উপাদানগুলোর বর্ণনা দাও।
অথবা, সামাজিক উপাদান এবং সামাজিক অসমতা সম্পর্কে বিবরণ দাও।
অথবা, সামাজিক উপাদান ও সামাজিক অসমতা সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবসমাজ প্রকৃতিগত বিচারে বৈচিত্র্য ও সাদৃশ্যপূর্ণ। আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, জাতিধর্ম, শিক্ষা, পেশা, আয় প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের ভিত্তিতে যে শ্রেণিবিভাগ তাকেই সামাজিক অসমতা বলে। বস্তুত সামাজিক স্তরবিন্যাস সাম্প্রতিককালে সামাজিক অসমতা নামে পরিচিত। সমাজ জীবনে সাধারণ সত্য হলো অসমতা।
সামাজিক উপাদান এবং সামাজিক অসমতা : নিম্নে সামাজিক অসমতার জন্য দায়ী সামাজিক উপাদানগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. শ্রেণিভিত্তিক সামাজিক অসমতা (Social inequality by class) : শ্রেণি হচ্ছে মুক্ত, পরিবর্তন তথা গতিশীল এক সামাজিক গোষ্ঠীর নাম। একই আয় বা পেশাভিত্তিক শ্রেণি হতে পারে। কেউ হয়ত একই ধরনের বসতবাড়ি, আবাসিক এলাকা মর্যাদাকেও শ্রেণির সংজ্ঞাদানে বিবেচনা করতে পারেন। কার্ল মার্কস উৎপাদন যন্ত্রের সাথে ব্যক্তির সম্পর্কের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করেছেন বুর্জোয়া শ্রেণি এবং শ্রমিক শ্রেণি । যাহোক, শ্রেণিভেদে সমাজে অসমতার সৃষ্টি হয়। এটি একটা বাস্তব সত্য।
২. ক্ষমতাভিত্তিক সামাজিক অসমতা (Social inequality by power) : সামাজিক অসমতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অসম ক্ষমতা। তাত্ত্বিকভাবে বলা যায় যে, সম্পদের মালিকানায় সমতা প্রতিষ্ঠিত হলেও ক্ষমতা
বণ্টনে সমতা আনা সম্ভব নয়। সকল সমাজেই নেতা এবং অনুগামী অনস্বীকার্য। তাছাড়া ক্ষমতার কাঠামোয় সবার স্থান এক নয়। ক্ষুদ্র বা বৃহৎ প্রতিটি সামাজিক সংগঠনেই নেতৃত্বের প্রশ্ন রয়েছে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে এ নেতৃত্বের প্রশ্ন। সমাজ যে পর্যায়েই অবস্থান করুক ক্ষমতাভেদে সামাজিক অসমতা অনস্বীকার্য। তাই বলা যায় যে, ক্ষমতা বণ্টন রীতি সামাজিক অসমতাকে প্রভাবিত করে এবং ক্ষমতাভেদে সামাজিক অসমতা সৃষ্টি করে।
৩. স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য এবং সামাজিক অসমতা (Membership in voluntary association and social inequality) : একই পেশার লোক অথবা বিভিন্ন পেশার বা শ্রেণির লোক এক বা একাধিক উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। কেউ কেউ চিত্তবিনোদন বা সময় কাটানোর জন্য সংঘ সমিতি গড়ে তোলেন। এসব সংঘে সবাই সদস্য হতে পারে না। আবার কেউ ইচ্ছা করেই যোগ দেয় না। আবার এমন কিছু সদস্য রয়েছে, যারা বিশেষ
সম্মানের অধিকারী। সংঘের সদস্য হিসেবে কাজ করতে গিয়ে নানা লোকের জন্য পরিচিতি ঘটে এবং জীবনযাত্রার ছকে
পরিবর্তন আসা থেকে শুরু করে কেউবা নিজ পেশা বাদ দিয়ে উন্নততর পেশা গ্রহণ করে।
৪. বিভিন্ন সমাজের ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা (Social inequality due to differential society) : সমাজের মানুষ নানা পথ ও মতের অনুসারী। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সম্প্রদায়গত উন্নয়ন কাজ, আর্তের সেবা, আর্থরাজনৈতিক সংকট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে আত্মত্যাগী মন নিয়ে সমাজের দুস্থ মানুষের জন্য কাজ করে। আবার অনেকে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের উন্নয়নমূলক কাজকর্মের সাথে সংযুক্ত হয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করেন। কেউবা ব্যক্তিগত উদ্যোগে আত্মপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালিয়ে সক্ষম হয়। এভাবে সমাজের বিভিন্ন সদস্য তাদের ভূমিকা ও কাজকর্মের মাধ্যমে সমাজের সবার কাছে প্রিয়পাত্র তথা মর্যাদাধিকারী ব্যক্তিতে পরিণত হয়। অনেকে তা পারে না। এভাবেও সমাজে অসমতার সৃষ্টি হয়। পরিশেষে বলা যায় যে, সামাজিক অসমতা সৃষ্টির পিছনে জৈবিক এবং সামাজিক উপাদানের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, এসব উপাদান ছাড়াও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো সামাজিক অসমতা সৃষ্টি করে। সামাজিক অসমতা পূর্বে ছিল বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু অসমতা যদি প্রকট হয়, তাহলে তা সমাজের জন্য মঙ্গলজনক হয় না।