অথবা, সামন্ততন্ত্রের সংজ্ঞা লিখ।
অথবা, সামন্ততন্ত্র কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা : মানবসমাজ পরিবর্তনশীল। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী, নৃবিজ্ঞানী সমাজের ক্রমবিবর্তনকে বিভিন্নভাবে ভাগ করেছেন। আর এ সামন্ততন্ত্রও কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের হাত ধরেই সামন্ততন্ত্রের উৎপত্তি। সমাজ বিকাশের একটা বিশেষ স্তরে ইউরোপে এক স্বতন্ত্র ধরনের আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটে, যাকে বলা হয় সামন্তপ্রথা।
সামন্তপ্রথা (Feudalism) : নবম শতকে পশ্চিম ইউরোপে কৃষি অর্থনীতির ভিত্তিতে যে সমাজ, সংস্কৃতি, প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে উঠে তাকেই সামন্তপ্রথা নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায় যে, মধ্যযুগে ইউরোপীয় ভূস্বামীগণ কর্তৃক চাষাবাদের জন্য বিশেষ শর্ত সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ভূমিহীনদের মধ্যে ভূমি বন্দোবস্ত দেয়ার প্রথাকে সামন্ততন্ত্র বলা হয়। এ নীতি অনুসারে যিনি ভূস্বামী তিনি লর্ড ও যারা বন্দোবস্ত নিলেন তারা হচ্ছেন ভেসাল ।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সামন্ততন্ত্রের বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাঁদের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :
ওয়ালবাক এবং টেইলর (Wallbark and Taylor) সামন্ততন্ত্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “Feudalism can be defined as a type of government is which political power is exercised locally by private individuals rather than by the agents of a centralized state.” অন্যদিকে, অধ্যাপক নাজমুল করিম (Prof. Nazmul Karim) বলেন, “সামন্ততন্ত্র বলতে এমন এক সমাজ ও সংস্কৃতিকে বুঝায় যেখানে ভূমি মালিকানার ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয়।” উপর্যুক্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায় যে, ভূমি মালিকানা এবং ভূমি নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা এক বিশেষ আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার নাম সামন্ততন্ত্র।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, ইউরোপীয় ও ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান। মূলত প্রধান কারণ হলো ভৌগোলিক অবস্থানগত পার্থক্য। ভারতে ব্যক্তিমালিকানার অনুপস্থিতি,
রাষ্ট্রভিত্তিক জলসেচ এবং এর উপর ভিত্তি করে আ মলাতন্ত্র, স্বনির্ভর গ্রাম সম্প্রদায় এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধারার সামন্তপ্রথা ছিল।