সামন্ততন্ত্রের উত্থান কি অপরিহার্য ছিল?

অথবা, সামন্ততন্ত্রের উত্থান অপরিহার্য ছিল কি?
অথবা, সান্ততন্ত্রে উত্থান অপরিহার্য ছিল কি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রাচীন দাস শ্রমনির্ভর সামাজিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী তার উপরে যে নতুন আর্থসামাজিক ব্যবস্থা গড়ে উঠে তাই ছিল সামন্ততন্ত্র। রোমান সাম্রাজ্য পতনের পর মধ্যযুগের ইউরোপে বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপে দাসপ্রথা নির্ভর সমাজব্যবস্থায় যে অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল, এক সময়ে ঐ সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং নতুন অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে ভূমি ব্যবস্থা, সামরিক কাঠামো এবং এক নতুন প্রশাসনিক অবস্থা গড়ে উঠে, ইতিহাসে সেটিই হলো সামন্ততন্ত্র ।
সামন্ততন্ত্রের উত্থান অপরিহার্য ছিল কি না : পঞ্চদশ শতকের দিকে পবিত্র রোম সাম্রাজ্য তথা গোটা ইউরোপে জার্মান বর্বরদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের মাত্রা চরমভাবে বৃদ্ধি পায়। বর্বরদের আক্রমণে গোটা ইউরোপে রাজতন্ত্রের অস্তিত্ব টিকে থাকা বিরাট দায় হয়ে দেখা দেয়। বহিঃশত্রুর আক্রমণের ফলে রোমের কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে একদিকে বর্বরদের আক্রমণ, অন্যদিকে দাস বিদ্রোহ ও রাজকর্মচারীদের উৎপীড়ন জনজীবন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়। এ পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ রাজারা কিছুসংখ্যক অমাত্যকে অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাজতন্ত্রের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। আর এ অমাত্য শ্রেণীই সময়ের ব্যবধানে শক্তিশালী সামন্তরূপে পরিগণিত হয়। এ শ্রেণীই হলেন সামন্তপ্রথার ধারক ও বাহক। তাই সমকালীন অবস্থা বিবেচনায় এ ধরনের ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল এটা বলা যায়। তবে সমসাময়িক রাজারা যে ধারণার বশবর্তী হয়ে এ সামন্তপ্রথার সৃষ্টি করেন তা উল্টো হয়ে দেখা দেয়। কারণ
সাময়িকভাবে হয়ত জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ প্রথার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ক্রমান্বয়ে এ সামন্ত শ্রেণী নিজ স্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট হয়ে অন্যায় কাজে লিপ্ত হলে সামন্তপ্রথার গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোটায় পৌঁছায়। তাই এ প্রথার সুফলের চেয়ে কুফলের পাল্লা ছিল অনেক ভারী। তবে এ প্রথার ভালো দিক হলো এই যে, এ ব্যবস্থা সূচনার ফলে আর্থসামাজিক অবস্থায়
কিছুটা পরিবর্তনের সূত্রপাত হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিকোণ থেকে এ প্রথা ছিল অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয়। কারণ এ প্রথার সুফল সমাজের গুটিকয়েক লোক ভোগ করত এবং আপামর বা নির্যাতিত ও খেটেখাওয়া মানুষ সর্বদা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। তবে অধুনা বর্তমান সমাজে এর প্রচলন নেই।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, এগারো শতকে ইউরোপে যে বিশেষ সমাজব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছিল তাই হলো সামন্ততন্ত্র বা সামন্তপ্রথা। সামন্তপ্রথার প্রয়োজন যেমন সময়ের প্রেক্ষিতে যুক্তিযুক্ত ছিল, তেমনি সময়ের পরিবর্তনে এ প্রথা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। তাই এ প্রথা যে আদর্শে প্রথমে গড়ে উঠেছিল তা আদর্শচ্যুত হলে এর প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। ফলে তা সমাজে বোঝা হয়ে দেখা দেয় এবং শিল্পবিপ্লবোত্তর যুগে এর অবসান ঘটে।