অথবা, সাক্ষাৎকার পদ্ধতির কী কী দোষ রয়েছে?উত্তর:
ভূমিকা :সাক্ষাৎকার পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর প্রক্রিয়া, তবে এটির কিছু সাধারণ অসুবিধা হতে পারে:
সাক্ষাৎকার সময় সীমিত হতে পারে, এটি একটি দ্রুত প্রক্রিয়া নয়।সাক্ষাৎকার একটি ভাল প্রস্তাবনা নির্মাণ করার জন্য সাবলেক্ট করতে হয়, যা সময় সাপেক্ষে আচরণ করতে হয়। যদি সাক্ষাৎকারী সম্প্রতি বিষয়গুলি জানে না, তবে সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।সাক্ষাৎকারীর দৃষ্টিকোণ প্রশ্নের সঠিক উত্তরে বা তথ্যের বৈশিষ্ট্যে আধুনিক দৃষ্টিকোণ থাকতে পারে।কিছু সাক্ষাৎকারী সাম্প্রতিক প্রতিক্রিয়া দেওয়ার প্রস্তুতি থাকে না এবং প্রশ্নের জন্য সঠিক উত্তর দেওয়া সময় নেওয়া সময় লাগে।সাক্ষাৎকার সময়ের সাথে এই অসুবিধা গুলি মোকাবেলা করতে সাহায্য করতে পারে।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির অসুবিধা : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। নিচে এ পদ্ধতির অসুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :
১. উপাত্তের নির্ভরযোগ্যতা কম : সাক্ষাৎকার, বিশেষ করে কাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকার একটি নমনীয় এবং সহজ ও মুক্ত আলোচনা। এ কারণে একটি সাক্ষাৎকার ঠিক একইরকমভাবে পরিচালনা করে একই রকম ফলাফল পাওয়া কষ্টকর। মনোবিজ্ঞানী রাইট, সেফিল্ড, স্মিথ প্রমুখ সাক্ষাৎকার পদ্ধতির ওপর গবেষণা করে নানাপ্রকার ফল পেয়েছেন। মনোবিজ্ঞানী ল্যান্ডি ও ট্রম্বো সাক্ষাৎকার পদ্ধতির নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কিত গবেষণা পর্যবেক্ষণ বা বিশ্লেষণ করে বলেন, এ পদ্ধতি হতে প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা খুবই কম।
২. মৌখিক উত্তরের যথার্থতা নিরূপণ কঠিন : সাক্ষাৎকার একটি বাচনিক কৌশল। তাই এ পদ্ধতি সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর উত্তরের ওপর নির্ভরশীল এবং এক্ষেত্রে কথা বলাবলির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ ধরনের তথ্যের যথার্থতা নির্ণয় করা খুবই জটিল ব্যাপার ।
৩. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পরিবর্তনশীল মনোভাব : সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সংবেদনশীলতা, মনোভাব এবং অন্যান্য মানসিক অবস্থা সর্বদা এক রকম থাকে না। এক সাক্ষাৎকারের সময় হতে অন্য সাক্ষাৎকারের সময় মনোভাবের পরিবর্তন হতে পারে । তিনি তার ক্ষণিক মেজাজের ভিত্তিতে একই রকমের উত্তর নানা সময়ে নানাভাবে লিখে নিতে পারেন। এ কারণে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিজেই পরিবর্তনশীলতার মূল হতে পারেন।
৪. সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর মধ্যে পার্থক্য : যখন কোনো গবেষণায় একাধিক সাক্ষাৎকার গ্রহীতা থাকে, তখন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর পক্ষপাতিত্ব, পূর্বসংস্কার, এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের প্রভাব কমানো গেলেও অন্য অভ্যন্তরীণ সমস্যা পরিলক্ষিত হতে পারে। কারণ একজন সাক্ষাৎকার গ্রহীতা অন্য একজন হতে সম্পূর্ণ পৃথক ব্যক্তি। তাদের মনোভাব, প্রত্যক্ষণ, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি পৃথক হওয়ায় তাদের সাক্ষাৎকারের ফলাফলও পৃথক হবে। তবে কাঠামোবদ্ধ সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে এটি অধিক গ্রহণীয়।
৫. তথ্য লিপিবদ্ধকরণ : সাক্ষাৎকার একটি বাচনিক কৌশল। মৌখিক কথাঃসর্বস্ব তথ্য লিপিবদ্ধ করার নানাবিধ অসুবিধা রয়েছে। আলাপ-আলোচনা করার সময় কিছু লিপিবদ্ধ করলে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। অন্যদিকে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর তথ্য লিপিবদ্ধ না করলে পরে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. ব্যয়বহুল : সাক্ষাৎকার একটি ব্যয়বহুল তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি। কারণ কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির আয়োজন করতে হলে, অনেক অর্থের দরকার হয়, যা বহন করতে হয় নিয়োগকারীকেই। তবে আজকাল আবেদনকারীর নিকট হতেও বিভিন্ন পদ্ধতির মাধ্যমে আবেদনের সাথে অর্থ নেওয়া হচ্ছে।
৭. সময়সাপেক্ষ : ডাক প্রশ্নপত্রের তুলনায় সাক্ষাৎকার একটি সময়সাপেক্ষ তথ্যসংগ্রহ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে তথ্যসংগ্রহ করতে হলে প্রার্থীকে আহ্বান, চিঠি প্রদান, যাওয়া-আসা বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হয় যা সময়সাপেক্ষ বিষয় ।
৮. আত্মগোপনের সুযোগের অভাব : কিছু কিছু সময় উত্তরদাতা, নিজের নাম, পরিচয় এবং আপত্তিকর প্রশ্নের উত্তর গোপনে প্রদান করতে চায়। ডাক প্রশ্ন পত্রের মাধ্যমে এর কিছুটা সুযোগ-সুবিধা থাকলেও সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে উত্তরদাতার এ ধরনের সুযোগ থাকে না।
৯. পক্ষপাত : সাক্ষাৎকার পদ্ধতি সরাসরি হয় বলে পরীক্ষক এবং সাক্ষাৎপ্রার্থী উভয় দিক হতে পক্ষপাত আসতে পারে। যেমন : সাক্ষাৎকার প্রার্থী সাক্ষাৎকার গ্রহীতার অঙ্গভঙ্গি থেকে প্রশ্নের সঠিক উত্তর খুঁজে পেতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিল্প মনোবিজ্ঞানের কার্যকরী পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো সাক্ষাৎকার পদ্ধতি। সাক্ষাৎকার পদ্ধতির কিছু সুবিধা থাকা সত্ত্বেও এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এ পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে। কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে শিল্পক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার পদ্ধতির ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শিল্প সম্পর্কিত গবেষণায় এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।