অথবা, সাক্ষাৎকার কাকে বলে? উত্তম সাক্ষাৎকারের শর্তাবলি লিখ।
অথবা, সাক্ষাৎকার বলতে কী বুঝ? সাক্ষাৎকার পদ্ধতির শর্তসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সাক্ষাৎকার বৈজ্ঞানিক সমাজ অনুসন্ধানে তথ্য সংগ্রহের একটি উল্লেখযোগ্য কৌশল । সমাজ গবেষক উদ্দেশ্যমূলকভাবে সরাসরি কথোপকথোনের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভের চেষ্টা করে থাকেন । তথ্য সংগ্রহের এ পদ্ধতি অত্যন্ত ফলদায়ক ও যৌক্তিক । আর এর মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাবলি সন্তোষজনকভাবে যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ১
সাক্ষাৎকার : সাক্ষাৎকার একটি প্রাচীনতম কৌশল। আধুনিক বৈজ্ঞানিক বিশ্বের অধিকাংশ সমাজ গবেষণায় প্রাসঙ্গিক তথ্যও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সাক্ষাৎকার সম্পর্কে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন । নিম্নে তাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো :
ফ্রেড. এন. কার্লিনজার (Fred. N. Kerlinger) এর মতে, “The interview is a face-to-face interpersonal role situation in which one person, the interviewer, asks a person being interviewed, the respondent, questions designed to obtain answers pertinent to the research problem.” অর্থাৎ, সাক্ষাৎকার হলো মুখোমুখি একটি আন্তঃব্যক্তিক পরিস্থিতি যেখানে একজন ব্যক্তি সাক্ষাৎগ্রহণকারী, আর এক ব্যক্তিকে (উত্তরদাতা), গবেষণার সমস্যার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সজ্জিত প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেন ।
সি. এ. মোজার এবং গ্রাহাম কালটন এর মতে, “Interview is an conversation between interviewer and respondent with the purpose of eliciting certain information from the respondent.” অর্থাৎ, সাক্ষাৎকার৷হচ্ছে উত্তরদাতার নিকট থেকে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য (Information) বের করে আনার উদ্দেশ্যে সাক্ষাগ্রহণকারী এবং উত্তরদাতার মধ্যে কথোপকথন ।
Goode and Hatt এর মতে, “Interviewing is fundamentally a process of social interaction.” অর্থাৎ, সাক্ষাৎকার হলো মৌলিক সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার একটি প্রক্রিয়া। Shorter Oxford English Dictionary, “Interview as a meeting of persons face to face,
especially for the purpose of formal conference on some point.” সুতরাং বলা যায়, সামাজিক গবেষণায় উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মুখোমুখি পরিবেশে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির
মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ারত কথোপকথনই হলো সাক্ষাৎকার । সাক্ষাৎকার পদ্ধতির মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সাক্ষ্যদানকারী ব্যক্তি বা দলের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে আনেন।
সফল সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয় শর্তাবলি : নিম্নে একটি সফল সাক্ষাৎকারের প্রয়োজনীয় শর্তাবলি আলোচনা করা হলো :
প্রথমত, সুগমতা : গবেষক গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক যেসব তথ্য (Information) জানতে চান সাক্ষাৎদানকারীর (উত্তরদাতা) নিকট সেসব তথ্যের সহজলভ্যতা এবং সরবরাহের পথ সুগম থাকতে হবে। অন্যথায় উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হন না। নানাবিধ কারণে উত্তরদাতা তথ্যের এ ধরনের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারেন না। যেমন-
i. ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে উত্তরদাতার সাময়িক বা সম্পূর্ণ বিস্মৃতি বা ভুলে যাওয়া ।
ii. আবেগজনিত চাপে তথ্য নিষ্পিষ্ট হওয়া (Repressed information) এবং
iii. অবোধগম্য এবং অস্পষ্ট প্রশ্নের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক তথ্য নাও পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎগ্রহণকারীর প্রশ্ন বুঝতে না পারা, উত্তর গুছিয়ে বলতে না পারা এবং ভাষাগত সমস্যা তথ্যের সুগমতাকে বাধাগ্রস্ত করে ।
দ্বিতীয়ত, সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশ : সফল সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎদানকারীকে সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য এবং উপযোগিতা সম্পর্কে সন্তোষজনক পরিচিতি প্রদান করে সাক্ষাৎকারের সংজ্ঞা দাও। একটি সমঝোতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যাতে সাক্ষাৎদানকারী অত্যন্ত স্বস্তির সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করতে পারেন। অর্থাৎ গবেষককে সাক্ষাৎদানকারীর নিকট থেকে উত্তর পাওয়ার জন্য তার মানসিক প্রস্তুতি সৃষ্টি করতে হবে। এক্ষেত্রে গব
েষক যত বেশি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হবেন, তত বেশি সঠিক ও পরিমাপযোগ্য উত্তর লাভ করবেন ।
তৃতীয়ত, প্রেষণা : সফল সাক্ষাৎকারের তৃতীয় ও সর্বশেষ অপরিহার্য শর্ত হলো সাক্ষাৎদানকারীর প্রেষণা । অর্থাৎ সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য সাক্ষাৎদানকারীকে বিভিন্নভাবে সাক্ষাৎদানে আগ্রহী করে তুলতে হবে, যাতে উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে তার মধ্যে একটি তাড়না বা প্রেষণার সৃষ্টি হয় । Cannell and Khan এর মতে, এক্ষেত্রে দু’ধরনের প্রেষণার সৃষ্টি হতে পারে । যথা :
ক. অভ্যন্তরীণ প্রেষণা : অভ্যন্তরীণ প্রেষণা সাক্ষাৎগ্রহণকারীর সাথে উত্তরদাতার সম্পর্কের মাত্রা এবং উত্তরদাতার নিজস্ব অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। এটি উত্তরদাতার অন্তর্নিহিত আগ্রহকে বাড়িয়ে তোলে । ফলে সে উত্তর প্রদানের জন্য মানসিকভাবে উৎসাহিত হয়।
খ. কৌশলগত প্রেষণা : সাক্ষাৎগ্রণকারীর সাথে উত্তরদাতার নিজস্ব লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, মূল্যবোধ, প্রয়োজন ইত্যাদির মিল বা সামঞ্জস্যতার ফলে উভয়ের মধ্যে যে পারস্পরিক প্রেষণার সৃষ্টি হয় তাকে কৌশলগত প্রেষণা বলে । এর ফলে উত্তরদাতা খুব সহজেই তার জানা সকল তথ্য সাক্ষাগ্রহণকারীকে দিতে আগ্রহী হয় ।
Cannell and Khan (1975) সামাজিক প্রেক্ষাপটে সাক্ষাৎদানকারী (উত্তরদাতা) এবং সাক্ষাগ্রহণকারীর প্রেষণাজনিত উল্লিখিত অবস্থাকে নিম্নোক্ত ছকের মাধ্যমে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক সমাজ অনুসন্ধানের তথ্য সংগ্রহের একটি উল্লেখযোগ্য কৌশল হলো সাক্ষাৎকার । এ সাক্ষাৎকার কতিপয় ধাপের অতিক্রমের মাধ্যমে এগিয়ে চলে। যথার্থ, নির্ভরযোগ্য ও পরিমাণযোগ্য সামাজিক তথ্যাবলি যথাযথভাবে সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার খুব একটা সহজসাধ্য কৌশল নয় । তাই এক্ষেত্রে কিছু অপরিহার্য শর্ত মেনে চলতে হয় ।