অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব কাকে বলে?
অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বলতে কী বুঝ?
অথবা, সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের সংজ্ঞা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের বিশেষ পরিচয় সংস্কৃতি। সকল মানবসমাজেরই স্বতন্ত্র সংস্কৃতি রয়েছে । প্রতেক সমাজের জীবনধারায় স্বতন্ত্ররূপ বিদ্যমান। সংস্কৃতি মাত্রই পরিবর্তনশীল
সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব : যখন কোন সমাজের গতানুগতিক রীতিনীতির সাথে নতুন কোন রীতিনীতির প্রবেশ ঘটে তখন যে অসংগতির সৃষ্টি হয় তাকে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব বা Cultural Conflict বলে। যেমন- ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইসলাম ধর্মাবলম্বী সাংস্কৃতিক ধারা এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী সাংস্কৃতিক ধারার সম্মুখীন হয়। ফলে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। কোন সামাজিক গোষ্ঠী যখন পুরাতন সাংস্কৃতিক প্রথাকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় এবং পরিবর্তিত অবস্থার সাথে Adjust করতে পারে না। তখনই শুরু হয় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব। Karl Marx এর মতে, পৃথিবীর যাবতীয় কার্য দু’ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় । যথা :
১. মৌল কাঠামো এবং
২. উপরি কাঠামো।
মূলত মৌল কাঠামো হচ্ছে অর্থ ও উপরিকাঠামো হচ্ছে মানবজীবনের যাবতীয় কার্য ও রীতিনীতি। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আদি সাম্যবাদী সমাজেই সর্বপ্রথম সংস্কৃতির উৎপত্তি এবং আধুনিক পুঁজিবাদী সমাজ সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত রূপ । নিম্নে সমাজব্যবস্থায় কিভাবে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব আসছে তা উল্লেখ করা হলো :
১. আদিম সাম্যবাদী সমাজ : এখানে সংস্কৃতির উৎপত্তির সূত্রপাত।
২. দাস সমাজব্যবস্থা : দাস মালিক ও দাস শ্রেণীর মধ্যে আইন, জীবনবোধ নিয়ে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব।
৩. সামন্ত সমাজব্যবস্থা : কৃষক ও কারিগরদের জন্য যন্ত্রপাতির আবিষ্কার ও তাদের অনুকূলে সংস্কৃতির বিকাশ ও দ্বন্দ্ব ।
৪. পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা : বুর্জোয়া শ্রেণী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতি এবং প্রলেতারিয়েতদের সাথে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, সমাজে বিভিন্ন মানুষের চিন্তায়, কাজে, আদর্শে, আচরণে, মূল্যবোধে ও মূল্যায়নে পার্থক্য থাকা খুবই স্বাভাবিক। এসব পার্থক্যের কারণে সমাজ যখন একজন অন্যজনের উপর প্রাধান্য লাভের চেষ্টা করে তখনই দেখা দেয় সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব।