সাংবিধানিক সরকারের সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন


অথবা, সাংবিধানিক সরকারের নেতিবাচক দিকসমূহ কী কী?
অথবা, সাংবিধানিক সরকারের দোষত্রুটিসমূহ কী কী?
অথবা, নিয়মতান্ত্রিক সরকারের দোষাবলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক সরকার বলতে আমরা সে ধরনের সরকারকে বুঝি, যা সংবিধ সন্নিবেশিত নিয়মাবলি অনুসারে পরিচালিত হয়। এ সরকার সাংবিধানিক আইনকানুন মোতাবেক পরিচালিত হয় বলে কোন স্বৈরাচারের স্থান এতে নেই। সংবিধান নাগরিকগণের পূর্ণ বিকাশের জন্য যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে এতে জনগণের ব্যক্তিত্ব বিকাশের উর্বর ক্ষেত্রেও প্রস্তুত হয়ে থাকে।

নিয়মতান্ত্রিক সরকারের সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা : নিয়মতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থার অনেকগুলো সুবিধা বা সম্ভাবনাময় দিক থাকলেও এর কতকগুলো সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো:

১. সুষ্ঠু কার্যকারিতা ও বাস্তবায়নের সমস্যা : সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা শুধু তত্ত্বগতভাবেই বিশ্বের অনেক দেশে দেখা যায়। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন ও সুষ্ঠু কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অর্থাৎ কোন কোন দেশে সাংবিধানিক উপায়ে সরকার গঠন হলেও তা নিয়মতান্ত্রিক হয় না।

২. সরকারি কর্মপদ্ধতির গতিহীনতা : নিয়মতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সরকারের কার্যপ্রণালী সংবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ বা সুনির্ধারিত বলে এরূপ সরকারের কার্যের গতি থাকে না এবং উদ্ভাবনমূলক (Creative) কোন সিদ্ধান্ত সহজেই আলে না। সরকারের সবক্ষেত্রেই একটা স্থবিরতা লক্ষ্য করা যায়।

৩. আজ্ঞবিভাগের দায়িত্বশীলতার জটিলতা : সাংবিধানিক সরকারে সরকারের আন্তঃবিভাগে দায়দায়িত্ব সুনির্ধারিত থাকে বলে অনেকই গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সিদ্ধান্ত এক বিভাগ অন্য বিভাগের দায়িত্বের অজুহাতে কাজটি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। এভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পাইপলাইনে আটকা পড়ে থাকে।

৪. দুষ্পরিবর্তনীয় চরিত্র : নিয়মতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক সরকারের চরিত্র হয়ে থাকে দুষ্পরিবর্তনীয় ধরনের। ফলে এরূপ সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনেক জনকল্যাণকর ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তই আটকা পড়ে থাকে সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক বিধানের অনুকূলে নয় বলে এ অজুহাতে।

৫. উন্নয়নের সহায়ক নয় : সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থায় সহজেই বিধানাবলির সংশোধন ও পরিবর্তন করা যায় না বলে এ ব্যবস্থায় অনেক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

৬. আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য : সাংবিধানিক বা নিয়মতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় সবসময়ই আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এ ব্যবস্থায় সাংবিধানিক মূলনীতি রক্ষার অজুহাতে আমলারা তাদের জনপ্রতিনিধিদের উপর তাদের প্রাধান্য বা অধিকতর প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করে।

৭. আধুনিক ও পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে খাপখাইয়ে চলতে পারে না : নিয়মতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক সরকার তার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে প্রায়ই পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থার প্রেক্ষিতে জনগণের নতুন নতুন চাহিদা ও প্রয়োজনের সাথে খাপখাইয়ে চলতে পারে না। ফলে সঠিকভাবে জনকল্যাণ ও উন্নয়ন ব্যধান্ত হয়।

উপসংহার: আলোচনার শেষ প্রান্তে এসে আমরা বলতে পারি সাংবিধানিক সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও
‘সার্বিক বিচারে সাংবিধানিক সরকার একটি উত্তম প্রকৃতির সরকার ব্যবস্থা। কেননা সাংবিধানিক সরকারের ভিত্তি হলো গণতন্ত্র। আর তাই বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্র শ্রেষ্ঠ শাসনব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।