সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প বলতে কী বুঝ?

অথবা, সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প কী?
অথবা, সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প কাকে বলে?
উত্তর৷ ভূমিকা :
গৌতম বুদ্ধের (খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দ- খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ অব্দ) বাণী ও উপদেশের উপর ভিত্তি করে জগৎ ও জীবন সম্পর্কে যে মতবাদ গড়ে উঠেছে সে মতবাদই ‘বৌদ্ধ দর্শন’ বা ‘বৌদ্ধধর্ম।’ বুদ্ধদেবের মতে, দুঃখের কারণ
অপসারণ করার মার্গ বা পথই হলো দুঃখ নিবৃত্তির পথ। এ পথের আটটি অঙ্গ বা স্তর আছে। তাই এ পথকে বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ বলা হয়। বুদ্ধদেবের মতে, এ পথ সকলের জন্য উন্মুক্ত। এ মার্গের অন্যতম দু’টি স্তর হলো সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প, যা নিচে আলোচনা করা হলো :
সম্যক দৃষ্টি : চারটি আর্যসত্য সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান হলো সম্যক দৃষ্টি। বুদ্ধদেবের মতে অবিদ্যা বা অজ্ঞতাই দুঃখের মূল কারণ। এ অবিদ্যা হতেই জগৎ ও জীবন সম্পর্কে মানুষের মিথ্যা জ্ঞান উদ্ভূত হয়। সুতরাং জগৎ ও জীবনের স্বরূপ এবং দুঃখের উৎপত্তি সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান ভিন্ন মুক্তি সম্ভব নয় এবং এ জ্ঞান হলো কোন আর্যসত্য সম্পর্কে যথার্থ
জ্ঞান । সুতরাং, সম্যক দৃষ্টি মুক্তি সাধকের জন্য অপরিহার্য।
সম্যক সংকল্প : পার্থিব বস্তু সম্পর্কে আসক্তি, ভোগ-বিলাস, হিংসা, রাগ ও দ্বেষ বর্জন করার দৃঢ় ইচ্ছাই সম্যক সংকল্প। বুদ্ধদেব বলেছেন, কেবল আর্যসত্য সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞানের দ্বারা দুঃখ হতে মুক্তি সম্ভব নয়, জ্ঞানানুসারে কর্ম করার সংকল্পের প্রয়োজন । সুতরাং মুক্তিকামী মানুষকে পার্থিব বস্তুর প্রতি আসক্তি, ভোগ তৃষ্ণা, অন্যের প্রতি কুভাব প্রভৃতি বর্জন
করতে হবে এবং অন্যের ক্ষতি সাধন করা হতে বিরত থাকার সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। তাই মুমুক্ষু বা মুক্তিকামীকে সম্যক সংকল্পে ব্রতী হতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৌদ্ধ দর্শনের অষ্টাঙ্গিক মার্গের মধ্যে সম্যক দৃষ্টি ও সম্যক সংকল্প গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।