সমালোচনাসহ কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব আলোচনা কর।
অথবা, কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি আলোচনা কর।
অথবা, কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমালোচনাসহ কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি বর্ণনা কর।
উত্তরায় ভূমিকা : একটি দেশ গঠনের জন্য যে কয়টি উপাদান অপরিহার্য তন্মধ্যে জনসংখ্যা অন্যতম। জনসংখ্যা
হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই
শ্রমশক্তি অপরিহার্য। আর জনসংখ্যাই হলো এর মূল উৎস। কোনো দেশের প্রাপ্ত ও সম্ভাব্য সম্পদ এবং সম্পদ সরবরাহের
পালন করে সে দেশের জনসংখ্যা। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হলে
ভিত্তিতে জনসংখ্যাকে বিচার করা যায়। এ বিচারে জনসংখ্যাকে ৩টি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা: স্বল্প জনসংখ্যা, অধিক
জনসংখ্যা ও কাম্য বা সঠিক জনসংখ্যা।
কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব : দেশের সম্পদ ও সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ও চিন্তা
থেকে জনসংখ্যা তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে। কাম্য জনসংখ্যার চিন্তা গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর চিন্তায়ও লক্ষ্য করা যায়। তবে
আধুনিক যুগে জুলিয়াস উলফ যুক্তিভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পেয়েছেন। কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের কয়েকটি
বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১. কাম্য জনসংখ্যা বলতে বুঝায় কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা। কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা সেটিই যে জনসংখ্যা কোনো দেশের
সম্পদ ও সুযেগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে পারে এবং যার পরিমাণ হবে কোনো সমাজে সম্পদ ও
সুযোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ কাম্য জনসংখ্যা কখনই কোনো দেশের সমস্যা বা দায় নয় বরং তা
সম্পদ। কাম্য জনসংখ্যা মূলত একটি জনশক্তি বা জনসম্পদ।
২. কাম্য জনসংখ্যার লক্ষ্য হলো সর্বাধিক উন্নতি বা সমৃদ্ধি আনয়ন। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে কাম্য
জনসংখ্যা বলতে এমন এক জনসংখ্যার কথা বলা হয় যেখানে মাথাপিছু আয় সর্বাধিক। অর্থাৎ যে জনসংখ্যা
উন্নতি ও সমৃদ্ধিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা করতে সক্ষম সেটিই কাম্য জনসংখ্যা।
৩. কাম্য জনসংখ্যা বলতে বুঝায় এমন এক জনসংখ্যা যাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত অর্থাৎ যে জনসংখ্যা
জীবনযাত্রার প্রয়োজন মেটাতে এবং সচ্ছল জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানে সক্ষম সেটিই কাম্য জনসংখ্যা।
৪. সমাজতাত্ত্বিকভাবে বলা যায় যে, কাম্য জনসংখ্যা বলতে এমন এক জনসংখ্যাকে বুঝায় যে কোনো
সমাজের কম অথবা বেশি জনসংখ্যার ত্রুটিমুক্ত ‘আদর্শ’ জনসংখ্যা। একথা সহজেই অনুমেয় যে কোনো
সমাজের জনসংখ্যা সম্পদ ও সুযোগের তুলনায় কম হলে ঐ সম্পদ ও সুযোগের পূর্ণ ব্যবহারের জন্য
জনশক্তির অভাব দেখা দেবে। অপরাপক্ষে, সম্পদ ও সুযোগের তুলনায় অতিরিক্ত জনসংখ্যার অর্থ হলো
ক্ষুধা ও ব্যাধিগ্রস্ত জনসংখ্যা।
কাম্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের পরিমাপক : কাম্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের অবশ্য সূক্ষ্ম মাপকাঠি নেই। তবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো
কাম্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিচার করা হয়।
১. কাম্য জনসংখ্যায় থাকবে পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অর্থাৎ কেউ বেকার থাকবে না।
২. সম্পদ ও সুযোগের কাজে লাগাতে জনশক্তির অভাব হবে না।
৩. উদ্যমী এবং দীর্ঘায়ুসম্পন্ন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এক জনসংখ্যা।
৪. সর্বাধিক আয় এবং উন্নত জীবনযাত্রা সম্পন্ন এক জনসংখ্যা।
৫. আধুনিক সভ্যতার সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম এমন জনসংখ্যা।
সমালোচনা : কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি নানাভাবে সমালোচনা হয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো :
প্রথমত, তত্ত্বটি একটি কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যাকে নির্দেশ করে মাত্র, তবে তত্ত্বটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার-জন্ম, মৃত্যু
ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয় না।
দ্বিতীয়ত, কাম্য বা কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা একটি অস্পষ্ট ধারণা। কেননা সর্বাধিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি; সর্বাধিক আয়,
উন্নত জীবনযাত্রা এসবই আপেক্ষিক প্রত্যয়।
অথবা, কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি আলোচনা কর।
অথবা, কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমালোচনাসহ কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি বর্ণনা কর।
উত্তরায় ভূমিকা : একটি দেশ গঠনের জন্য যে কয়টি উপাদান অপরিহার্য তন্মধ্যে জনসংখ্যা অন্যতম। জনসংখ্যা
হচ্ছে একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই
শ্রমশক্তি অপরিহার্য। আর জনসংখ্যাই হলো এর মূল উৎস। কোনো দেশের প্রাপ্ত ও সম্ভাব্য সম্পদ এবং সম্পদ সরবরাহের
পালন করে সে দেশের জনসংখ্যা। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে হলে
ভিত্তিতে জনসংখ্যাকে বিচার করা যায়। এ বিচারে জনসংখ্যাকে ৩টি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা: স্বল্প জনসংখ্যা, অধিক জনসংখ্যা ও কাম্য বা সঠিক জনসংখ্যা। কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্ব : দেশের সম্পদ ও সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য ও চিন্তা
থেকে জনসংখ্যা তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে। কাম্য জনসংখ্যার চিন্তা গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর চিন্তায়ও লক্ষ্য করা যায়। তবে
আধুনিক যুগে জুলিয়াস উলফ যুক্তিভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পেয়েছেন। কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
১. কাম্য জনসংখ্যা বলতে বুঝায় কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা। কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা সেটিই যে জনসংখ্যা কোনো দেশের সম্পদ ও সুযেগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের নিশ্চয়তা দিতে পারে এবং যার পরিমাণ হবে কোনো সমাজে সম্পদ ও সুযোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ কাম্য জনসংখ্যা কখনই কোনো দেশের সমস্যা বা দায় নয় বরং তা সম্পদ। কাম্য জনসংখ্যা মূলত একটি জনশক্তি বা জনসম্পদ।
২. কাম্য জনসংখ্যার লক্ষ্য হলো সর্বাধিক উন্নতি বা সমৃদ্ধি আনয়ন। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে কাম্য জনসংখ্যা বলতে এমন এক জনসংখ্যার কথা বলা হয় যেখানে মাথাপিছু আয় সর্বাধিক। অর্থাৎ যে জনসংখ্যা উন্নতি ও সমৃদ্ধিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা করতে সক্ষম সেটিই কাম্য জনসংখ্যা।
৩. কাম্য জনসংখ্যা বলতে বুঝায় এমন এক জনসংখ্যা যাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত অর্থাৎ যে জনসংখ্যা জীবনযাত্রার প্রয়োজন মেটাতে এবং সচ্ছল জীবনের নিশ্চয়তা প্রদানে সক্ষম সেটিই কাম্য জনসংখ্যা।
৪. সমাজতাত্ত্বিকভাবে বলা যায় যে, কাম্য জনসংখ্যা বলতে এমন এক জনসংখ্যাকে বুঝায় যে কোনো সমাজের কম অথবা বেশি জনসংখ্যার ত্রুটিমুক্ত ‘আদর্শ’ জনসংখ্যা। একথা সহজেই অনুমেয় যে কোনো
সমাজের জনসংখ্যা সম্পদ ও সুযোগের তুলনায় কম হলে ঐ সম্পদ ও সুযোগের পূর্ণ ব্যবহারের জন্য
জনশক্তির অভাব দেখা দেবে। অপরাপক্ষে, সম্পদ ও সুযোগের তুলনায় অতিরিক্ত জনসংখ্যার অর্থ হলো ক্ষুধা ও ব্যাধিগ্রস্ত জনসংখ্যা।
কাম্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের পরিমাপক : কাম্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের অবশ্য সূক্ষ্ম মাপকাঠি নেই। তবে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কাম্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বিচার করা হয়।
১. কাম্য জনসংখ্যায় থাকবে পূর্ণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা অর্থাৎ কেউ বেকার থাকবে না।
২. সম্পদ ও সুযোগের কাজে লাগাতে জনশক্তির অভাব হবে না।
৩. উদ্যমী এবং দীর্ঘায়ুসম্পন্ন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এক জনসংখ্যা।
৪. সর্বাধিক আয় এবং উন্নত জীবনযাত্রা সম্পন্ন এক জনসংখ্যা।
৫. আধুনিক সভ্যতার সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে সক্ষম এমন জনসংখ্যা। সমালোচনা : কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি নানাভাবে সমালোচনা হয়েছে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো :
প্রথমত, তত্ত্বটি একটি কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যাকে নির্দেশ করে মাত্র, তবে তত্ত্বটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার-জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো ধারণা দেয় না। দ্বিতীয়ত, কাম্য বা কাঙ্ক্ষিত জনসংখ্যা একটি অস্পষ্ট ধারণা। কেননা সর্বাধিক অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি; সর্বাধিক আয়, উন্নত জীবনযাত্রা এসবই আপেক্ষিক প্রত্যয়।
তৃতীয়ত, কোনো দেশের একটি নির্দিষ্ট সময়ের সম্পদ ও সুযোগের প্রেক্ষিতে কোন জনসংখ্যাকে কাম্য বলে অ্যাখ্যা
দেয়া হয়। কিন্তু কোনো নতুন প্রাকৃতিক সম্পদের আবিষ্কারের ফলে ঐ সম্পদ ও সুযোগ বেড়ে যেতে পারে। অথবা যা
ও নীতি নির্ধারণ করা বেশ কষ্টসাধ্য।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কাম্য জনসংখ্যা তত্ত্বটি ম্যালথাসিয়ান তত্ত্বের প্রতিক্রিয়ার ফসল। জাতীয় সম্পদ, সে সম্পদ আহরণ এবং ব্যবহারের যোগ্যতা ও সুযোগ সম্পদের সুষম বণ্টন জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি কাৰ্য্য জনসংখ্যা নির্ণয়ের মাপকাঠি। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা, দেশের কারিগরি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার পরিবর্তনের ফলে উক্ত অবস্থাগুলোরও পরিবর্তন হয় এবং সেই সাথে বাঞ্ছিত বা কাম্য জনসংখ্যার সীমারও পরিবর্তন ঘটে। তবে এ তত্ত্বটির একটি শিক্ষা হলো জনসংখ্যা যেন সম্পদ ও সুযোগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।