অথবা, যোগাযোগকে সমন্বয়ের হাতিয়ার বলা হয় কেন? আলোচনা কর।
অথবা, সমাযোজনকে কেন সমন্বয়ের হাতিয়ার বলা হয়ে থাকে? আলোচনা কর।
অথবা, যোগাযোগকে সমন্বয়ের হাতিয়ার বলা হয় কেন? বর্ণনা কর।
উত্তর।। ভূমিকা : সমন্বয় ও সংযোজন সামাজিক প্রশাসনের উপাদানসমূহের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সংস্থাতে সমন্বয় হচ্ছে সংগঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে বাস্তবায়নের জন্য আন্তঃবিভাগের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া। আর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে তথ্যের যে গতিশীল লেনদেন হয় তাই সমাযোজন। অর্থাৎ, শ্রমবিভাগকে সংগঠনের উদ্দেশ্যমুখী করাই হচ্ছে সমস্বয়। আর এ সমস্বয়ের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে সমাযোজন।
সমন্বয়ের হাতিয়ার হিসেবে সংযোজন নিয়ে এসব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. তথ্য আদান-প্রদান প্রশাসনের বিভিন্ন অংশ এবং ব্যক্তির মধ্যে সমন্বয়সাধনের জন্য তথ্য আদান-প্রদান প্রয়োজন। মানবদেহে যেমন Motor nerve ও sentory nerve এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পরিবর্তনের খবর আদান-প্রদান হয়ে উপযুক্ত সমন্বয় হয় তেমনি সংগঠনেও সংযোজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য লাইন, স্টাফসহ সকল স্তরে পৌঁছানো যায়। এতে করে সংস্থার ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা সম্ভব হয়।
২. চিন্তার স্বচ্ছতা : সামাজিক সংস্থায় সম্পূর্ণ, স্থির কিংবা স্বয়ংসম্পূর্ণ বলতে কোন কিছু নেই। কেননা, সমাজের মৌলিক কাঠামোকে ঘিরে Super Structure প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সমস্যাগুলো ক্রমান্বয়ে
Multidimensional রূপ পরিগ্রহ করছে। সুতরাং, পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে যেসব নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সে সম্পর্কে চিন্তার স্বচ্ছতা থাকতে হবে।
৩. দায়বদ্ধতা : সংস্থায় প্রত্যেকের নিকট প্রত্যেকে দায়বদ্ধ।এ দায়বদ্ধতা সঠিকভাবে পালনের জন্য সমন্বয় দরকার।আবার কার, কি দায়িত্ব এবং তা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না এ ক্ষেত্রে সমন্বয় করতেও সংযোজন সহায়তা করে।
৪. কর্মকর্তা কর্মচারীদের সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক : প্রশাসনে Employee ও Employer অর্থাৎ, Executive ও Worker এর মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদানও পারস্পরিক সাহায্য করতে গিয়ে তাদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।ফলে সংস্থার তথা প্রশাসনের উদ্দেশ্য অর্জন সহজ হয়। সুতরাং, এক্ষেত্রেও সমাযোজনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. উপযুক্ত সময় এবং স্থান : প্রশাসনে সমন্বয় বজায় রাখতে হলে সংস্থা কর্তৃক গৃহীত কর্মসূচি নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যের মধ্যে সমন্বয় : প্রশাসনের যাবতীয় কাজ যাতে সংস্থার উদ্দেশ্যের সাথে সংগতি রেখে করা হয় সেজন্য বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন।
৭. প্রতিমুহূর্তে সক্রিয় রাখা : প্রশাসনের বিভিন্ন স্বাধীন ইউনিটের মধ্যে গতিশীলতা আনতে তাদেরকে সক্রিয় রাখতে তথ্য সর্বদা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে, এতে সমন্বয় সহজ হয়। এছাড়া সংযোজন প্রক্রিয়ায় তথ্য সরবরাহ করে কর্মকর্তা থেকে শ্রমিক পর্যন্ত গোটা প্রশাসনকে প্রতিটি মুহূর্তে সক্রিয় রাখা সম্ভব।
৮. অংশগ্রহণ : প্রশাসনের অভীষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য প্রশাসনের মধ্যে অবস্থানরত সকল দলের সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আবশ্যক। কিন্তু প্রকৃতিগত নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী বলে সে যে কোনো দৃষ্টিভঙ্গিকে খারাপ চোখে দেখে এবং সমন্বয় ভেঙে পড়ে। যেমন- আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির প্রতি জনগণের মনোভাব।
৯. সার্বিক কার্যক্রম মূল্যায়ন : সংস্থার উদ্দেশ্যের সাথে তৎপরতা কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা মূল্যায়ন আবশ্যক। এ মূল্যায়নের জন্য সংস্থার Action কে মূল্যায়ন করতে হয়। সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রম মূল্যায়নে সমন্বয় করতে সংযোজন গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১০. সিদ্ধান্ত গ্রহণ : একক কোন প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তা অনেক সময় সঠিক হয় না।তাই সুসমন্বিত প্রশাসন পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তবে প্রশাসকের Decision যত ঝুঁকিপূর্ণ হোক না কেন তা কোন প্রকারেই কার্যকর হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট প্রেরিত না হয়।
সুতরাং, সর্বজন গ্রাহ্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ বাস্তবায়ন করলে তা (Communication) এর মাধ্যমে সমন্বয়সাধন করা হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, একটি সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে সমন্বয়সাধন করে সংস্থার কাজকে গতিশীল করতে এবং সংস্থার চূড়ান্ত লক্ষ্যার্জনে সংযোজন গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কেননা, সংস্থার বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে সুষ্ঠু সংযোজন না থাকলে তা নির্জীব হয়ে পড়ে। ফলে গোটা সমন্বয় প্রক্রিয়া ভেঙে গিয়ে সংস্থা তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যার্জনে ব্যর্থ হয়।