অথবা, একজন নারীর চাহিদাসমূহ উল্লেখ কর। নারীর চাহিদা পূরণ না হলে কী কী
সমস্যায় আশঙ্কা থাকে বলে তুমি মনে কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : একটি সমাজ তথা রাষ্ট্রের মোট জনসমষ্টির প্রায় অর্ধেক নারী। যে সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকে ঐ সমাজের অগ্রগতি এবং উন্নতি স্বাভাবিকভাবেই বেশি হয়। সমাজে নারীকে গুরুত্ব না দিয়ে, নারীর চাহিদা ও প্রয়োজন সঠিকভাবে পূরণ না করে, শুধুমাত্র পুরুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের উপর গুরুত্ব দিলে সমাজে কখনই সুষম উন্নয়ন সাধন সম্ভব নয়। তাই নারীর চাহিদা ও প্রয়োজনকে অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় কর্মসূচি ও
পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং বর্তমানে উন্নত বিশ্ব সেভাবেই আগাচ্ছে। তবে উন্নয়নশীল দেশগুলোও আস্তে আস্তে এদিকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি ও পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
নারীর চাহিদাসমূহ : সমাজের অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত (যেমন- শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ) নারীদেরও বিশেষ কিছু চাহিদা রয়েছে।তাদের সেসব চাহিদাগুলো হল :
১. শারীরিক বা দৈহিক চাহিদা : শারীরিক চাহিদার মধ্যে রয়েছে তাদের দৈহিক বৃদ্ধি, দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা, তাদের কাঙ্খিত বৃদ্ধি ও বিকাশের প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দেখা যায়, সমাজে নারী তথা মেয়ে
শিশু-কিশোরদের শারীরিক চাহিদাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু এ নারীই একদিন মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে।
সুতরাং একজন সুস্থ, সবল ও নিরোগ মায়ের পক্ষেই একটি সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া সম্ভব। তাই শারীরিক চাহিদা বা দৈহিক চাহিদা নারীর একটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা।
২. মানসিক চাহিদা : মানসিক চাহিদার মূলকথা হল জীবনের সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতার সুযোগ লাভ, কোন বিষয়ে ঔৎসুক্য বা অনাগ্রহ প্রদর্শন বা প্রকাশ করার সুযোগ বা স্বাধীনতা। মোটকথা, নিজের মানসিক ক্রিয়াগুলো সম্পাদনের
সুযোগ করে দেওয়া। নারীর মানসিক চাহিদা যদি যথাযথভাবে পূরণ করা হয় তবে সে একজন স্বাভাবিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার সুযোগ পায়।
৩. চিকিৎসা প্রাপ্তির চাহিদা : যে কোন ধরনের অসুবিধা কিংবা অসুস্থতাজনিত অবস্থায় চিকিৎসা সেবা লাভের সুযোগপ্রাপ্তি নারীদের অন্যতম চাহিদা। নারীরা স্বভাবতই পুরুষের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল। পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশে তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসব রোগব্যাধি থেকে তাদের মুক্তিলাভ করে সুস্থ সুন্দর জীবনযাপন করার প্রত্যাশা তাদের মধ্যে বিদ্যমান।
৪. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ : শিক্ষা মানুষের জ্ঞান চক্ষুকে খুলে দেয়। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হতে সাহায্য করে। আর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তি হয়ে উঠে দক্ষ। ফলে সে সমাজে নিজের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন
করতে সক্ষম হয়। তাই নিজেদেরকে জ্ঞানী, যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নারীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। অশিক্ষিত ও অদক্ষ নারীরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবে গণ্য হয়।
৫. কর্মসংস্থানের সুযোগ লাভ : নারীরা আমাদের সমাজের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। পুরুষের পাশাপাশি তাদের জন্যও কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কর্মসংস্থান লাভের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়।ব্যক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পরিবার ও সমাজে তার মূল্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাই কর্মসংস্থান লাভ করা নারীদের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৬. সামাজিক নিরাপত্তা : নিরাপত্তা বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা নারীদের জন্য অতিব গুরুত্বপূর্ণ।সামাজিক নিরাপত্তার মূলকথা হল ব্যক্তি যখন প্রতিকূল আর্থসামাজিক অবস্থার মধ্যে থাকে তখন সমাজ তথা রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যক্তিকে সাহায্য করা। নারীদেরকে উপবৃত্তি, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, বিধবাকালীন ভাতা,পারিবারিক ও সামাজিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে আইনি সহায়তা দান ইত্যাদির মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সম্ভব।
৭. পেশাগত চাহিদা : একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক নারীর পেশাগত চাহিদা থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। তার পেশা নির্বাচন,পেশা গ্রহণ,পেশা পরিবর্তনজনিত চাহিদা রয়েছে। সে যে কোন ধরনের পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে।
তাকে জোর করে কোন কর্ম বা পেশা চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। অথবা আইন করে সমাজে নারীকে কিছু বিশেষ সেক্টরে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না।
৮. ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের স্বার্থে সংগতি বিধান : সংগতি বিধান করে চলতে না পারলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের মনোসামাজিক সমস্যার জন্ম নেয়। তবে একথা সত্য যে, প্রত্যেক সমাজের নৈতিকতা এক নয়। নারীরা যে যে সমাজে বসবাস করবে তাদেরকে সে সমাজের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সাথে সংগতি বিধান করে চলতে হবে। এ সংগতি বিধানে ব্যর্থ হওয়ার ফলে অনেক নারীই নষ্ট হয়ে যায়, বিপথে গমন করে।
৯. অর্থনৈতিক চাহিদা : নারীকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। তাকে বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনমূলক ও আয় সৃষ্টিমূলক কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। যেমন- উদ্যানভিত্তিক কৃষি কর্মকাণ্ড, পারিবারিক ফার্ম বা খামার স্থাপন করে এগুলো পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নারীদের প্রদান করতে হবে।এতে নারীদের মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বনশীলতা আসবে।ফলে পারিবারিক ও জাতীয় পর্যায়ের অর্থনীতিতে তাদের অবদান বৃদ্ধি পাবে।
১০. সামাজিক চাহিদা : সমাজের সদস্য হিসেবে সামাজিক সম্পর্ক স্থাপন, সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ সুবিধা নারীদের জন্য থাকতে হবে। তাদেরকে সমাজের অন্যান্য নারীদের সাথে অবাধ মেলামেশা, বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন ও উদ্যাপনের সুযোগ দিতে হবে। এতে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং পারস্পরিক বন্ধন আরও মজবুত হবে।
১১. রাজনৈতিক চাহিদা : নারীকে শুধু পারিবারিক ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ করে রাখা যাবে না। তাদেরকে অবশ্যই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। কারণ নারীদেরকে বাদ দিয়ে রাজনীতি পরিচালিত হলে নারীরা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বাইরে থেকে যাবে। নারীদের সমস্যা উপলব্ধি এবং তা সমাধানের জন্য নীতি প্রণয়ন করতে হলে অবশ্যই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর যথাযোগ্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
১২. চিত্তবিনোদনের চাহিদা : চিত্তবিনোদনজনিত সুযোগ সুবিধা থেকে নারীদের বঞ্চিত করা যাবে না। তাদেরকে গঠনমূলক ও সৃজনশীল চিত্তবিনোদনের সুযোগ দিতে হবে। তাদের জন্য স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা।ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা যেতে পারে।
আলোচ্য চাহিদাগুলোই মোটামুটিভাবে সর্বজনস্বীকৃত নারী সমাজের বা নারীদের চাহিদা হিসেবে বিবেচ্য।
নারীর চাহিদাসমূহ অপূরণজনিত সমস্যা : নারীদের চাহিদা ও প্রয়োজন যদি সঠিক সময়ে এবং সঠিকভাবে পূরণ না হয় তবে নারীদের ক্ষেত্রে এবং সমাজে নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। নিম্নে সেসব সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
১. দারিদ্র্য : বাংলাদেশের নারীদের একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা হল দারিদ্র্য। দারিদ্র্য হল এমন একটি নেতিবাচক অর্থনৈতিক অবস্থা যে অবস্থায় একজন মানুষ/ব্যক্তির আয় অত্যন্ত কম থাকে। ফলে সে তার মৌল মানবিক চাহিদা পূরণে সমর্থ হয় না। যেমন- জাতিসংঘের মতে, ঐ ব্যক্তি হল দরিদ্র যার দৈনিক আয় ১ ডলারের কম। ২০০০ সাল নাগাদ আমাদের দেশে চরম দারিদ্র্য ১৯.৯৮ এবং অনপেক্ষ দারিদ্র্য ৪৪.৩০%।
২. বেকারত্ব : নারীদের কর্মসংস্থান লাভের চাহিদা পূরণ না হওয়ার ফলে বেকারত্ব সমস্যা সৃষ্টি হয়। বেকারত্ব হল ব্যক্তির এমন একটি অবস্থা যে অবস্থায় ব্যক্তি কাজ করতে সক্ষম থাকে অথচ কাজ পায় না। তাই বলা যায়, আমাদের দেশে বেকারত্ব নারীদের অন্যতম প্রধান সমস্যা।
৩. নিরাপত্তাহীনতা : দেশের শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব নারীদের জন্যই এ সমস্যাটি বিদ্যমান। নিরাপত্তার মূলকথা হল।যখন ব্যক্তি প্রতিকূল আর্থসামাজিক অবস্থায় থাকবে তখন তাকে সমাজ বা রাষ্ট্র কর্তৃক Support দেয়া। কিন্তু আমাদের দেশে নারীদের জন্য এ ধরনের কোন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা যেমন- বেকারভাতা, বৃত্তিমূলক শিক্ষাব্যবস্থা, নারী কল্যাণ কার্যক্রম ইত্যাদি এক প্রকার নেই বললেই চলে।
৪. দুৰ্বল নৈতিকতাবোধ : নৈতিকতা বলতে বুঝায় উচিৎ অনুচিৎ, ভালোমন্দ, ভুল সঠিক বিচার করে ইতিবাচক বিষয়টি গ্রহণ করা। আমাদের দেশে নারী সম্প্রদায়ের মধ্যে নৈতিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাদের সামনে অনুকরণীয় আদর্শের বড্ড অভাব রয়েছে। সমাজব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের ফলে অন্য সমাজের নৈতিকতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বুদ্ধি দিয়ে বিবেক দিয়ে বিচার শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
৫. নিরক্ষরতা : সকল শ্রেণীর নারীদের জন্য নিরক্ষরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। সাধারণত নিরক্ষরতা বলতে বুঝায় অক্ষরজ্ঞানহীন অবস্থা। বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঐ ব্যক্তি নিরক্ষর যে কোন ভাষায় চিঠি লিখতে ও পড়তে অক্ষম। আমাদের মোট জনসাধারণের ৬২.৬৬% শিক্ষিত (সমীক্ষা-২০০৩)। সুতরাং দেখা যায় আমাদের নারী সমাজের একটা অংশ বর্তমানে নিরক্ষর, যা সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য সমস্যা।
৬. হতাশা : হতাশা একটি মানসিক সমস্যা। যখন ব্যক্তি তার কাঙ্ক্ষিত চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয় তখন তার মনে এক ধরনের নিরাশাবোধ সৃষ্টি হয়। ফলে সে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশা হারিয়ে ফেলে, হতাশা তাকে গ্রাস করে। নারীদের একটি প্রধান সমস্যা হল নারী হতাশা, যা দারিদ্র্য, বেকারত্ব, আবেগীয় ও পারিবারিক কারণে সৃষ্ট হয়। ব্যক্তির বিভিন্ন আচরণের মাধ্যমে তার মধ্যে বিরাজমান হতাশার প্রকাশ পাওয়া যায়।
৭. স্বাস্থ্যহীনতা : রোগমুক্ত সুস্থ শরীরকেই বলা হয় স্বাস্থ্য। আমাদের নারী সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাস্থ্যহীনতা তথা সুস্বাস্থ্যের অভাব অনেক বেশি। বিশেষ করে অশিক্ষিত ও দরিদ্রদের জন্য এটি একটি প্রধান সমস্যা। তারা বিভিন্ন ধরনের
রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। যথাযথ চিকিৎসা ও সেবা না পাওয়া এবং পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে স্বাস্থ্যহীনতা সমস্যায় তারা আক্রান্ত হচ্ছে।
৮. মূল্যবোধের অবক্ষয় : মূল্যবোধ হল কতকগুলো রীতিনীতি, প্রথা প্রতিষ্ঠান, আচার-অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপর বিশ্বাস এবং ঐ বিশ্বাস আমাদের আচরণ দ্বারা প্রকাশ করা। প্রত্যেক সমাজে, প্রত্যেক ব্যক্তিই এ ধরনের মূল্যবোধের
অধিকারী/বিশ্বাসী। কিন্তু আমাদের নারী সমাজের মধ্যে চাহিদার অপূরণজনিত কারণে আজ তাদের মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে । বিশেষ করে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মতাদৰ্শই এজন্য দায়ী।
৯. পতিতাবৃত্তি : নারীদের মধ্যে তাদের চাহিদা ও প্রয়োজন যথাযথভাবে পূরণ না হওয়ার ফলে পতিতাবৃত্তির মত সামাজিক ব্যাধি সমাজে খুব দ্রুত এবং অত্যধিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানের অভাব, স্বামী কর্তৃক তালাক, সহায় সম্বলহীনতা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও কলহ ইত্যাদি কারণে নারীরা এ পতিতাবৃত্তির মত জঘন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। যার ফলে সমাজে ভাসমান পতিতা, পেশাজীবী পতিতাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১০. সুষ্ঠু বিনোদনের অভাব : বিনোদন মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্বস্তি এনে দেয়। কিন্তু আমাদের দেশের নারীরা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হলে তারা একদিক থেকে যেমন অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে পারে অন্যদিকে তেমনি নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। এজন্য তাদের দরকার বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক বিনোদন কার্যক্রম, যেমন- খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের যথেষ্ট সুযোগ থাকা। এজন্য স্থানীয় ও জাতীয় উদ্দেশ্য একান্ত জরুরি, যা আমাদের দেশে তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ।
১১. মাদকাসক্তি : সমগ্র বিশ্বেই মাদকাসক্তি একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। তবে এখানে পুরুষদের সংখ্যাই এক সময় বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে নারীদের সংখ্যাও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীদের চাহিদা ও প্রয়োজন সঠিকভাবে পূরণ না হওয়ার ফলে সামাজিকভাবে অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে উন্নত দেশের সমাজগুলোতে নারীদের মধ্যে মাদকসক্তির প্রবণতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর চেয়ে বেশি।
১২. সামাজিক বৈষম্য : আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষের মাঝে বৈষম্য বিদ্যমান। চিন্তায়, কর্মে, শিক্ষায়,খেলাধুলায়, রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদেরকে পুরুষের সমান সুযোগ প্রদান করা হয় না। তাই নারীদের যে এসব কর্ম করার যোগ্যতা ও সামর্থ্য আছে এর স্বীকৃতি দিতে হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, কোন সমাজ বা রাষ্ট্রের অর্ধেক মানুষ হল নারী। আর সমাজের এ অর্ধাংশ নারী হওয়ায় তাদের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে তাদের চাহিদা ও প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষত্ব বিদ্যমান। সমাজ ও রাষ্ট্রের উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন বৃহত্তর আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে তাই নারীর চাহিদাকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।