সমাজের মধ্যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা, সমাজের মধ্যে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, সমাজে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব আলোচনা কর।
অথবা, সমাজের সামাজিক প্রতিষ্ঠানের তাৎপর্য উল্লেখ কর।
অথবা, সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কী কী ভূমিকা পালন করে থাকে।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সমাজদর্শনে ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হয়ে থাকে। সমাজদর্শনে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলতে বুঝায় মানবসমাজের সমিতি বা সংগঠনসমূহ যেসব উপায়ে ও পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের স্ব-স্ব উদ্দেশ্য সাধন করে সেসব পন্থাগুলোই হলো সংশিষ্ট সংগঠনসমূহের অন্তর্গত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান : সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলতে সমাজস্থ মানুষের মধ্যে প্রচলিত এমন চিন্তাচেতনাকে বুঝায় যার দ্বারা একে অপরের সাথে সম্পর্ক ও কাজকর্ম নির্ধারিত হয়ে সমাজব্যবস্থা টিকে থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, যে সংস্থার মাধ্যমে সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠে এবং এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় তাকে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলে। পরিবার, ধর্ম, বিবাহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

সমাজে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা বা প্রভাব :সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. পারিবারিক ভূমিকা : মানবসমাজে সবচেয়ে প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন হচ্ছে পরিবার। আমাদের রয়েছে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিরাপত্তা, স্বীকৃতি, যৌথ বসবাস প্রভৃতি চাহিদা। পরিবার এ ধরনের চাহিদা মিটাতে সাহায্য করে। শিশুর জন্ম ও তার প্রতিপালন ও বৃহত্তর জীবনে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন পরিবার। তাই সামাজিক জীবনে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্
২. শিক্ষামূলক ভূমিকা : শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান হলো স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। এগুলো সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার যোগ্যতা অর্জনে সহায়ক হয়ে থাকে। তরে শিক্ষার রয়েছে ব্যাপক ও সংকীর্ণ অর্থ। সংকীর্ণ অর্থে শিক্ষা বলতে বুঝায়, আমাদের সুপ্ত ক্ষমতাগুলোকে বিকশিত ও পরিমার্জিত করার সচেতন প্রক্রিয়া, যা একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে। মোটকথা, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমাজে শিক্ষামূলক ভূমিকা
পালন করে থাকে।
৩. অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা : সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অর্থনৈতিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য শিল্পকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা প্রভৃতি গড়ে উঠেছে। এগুলোই মূলত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যা সমাজের অর্থনৈতিক প্রয়োজন মিটায় ।
৪. সমন্বিত ভূমিকা : সমাজে যেমন রয়েছে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, তেমনি রয়েছে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। এরূপভাবে বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ এ সমন্বয়ের কাজটি করে থাকে। সমন্বয় সৃষ্টি না হলে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং তা সামাজিক, সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মধ্যে বিরোধ ও অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তা নিরসনের চেষ্টা করে। যেমন- পুলিশ, সেনাবাহিনী প্রভৃতি। এসব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমাজে বিভিন্ন বিরোধ মীমাংসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. চেতনার বিকাশ : মানুষ যান্ত্রিক নয়। তার রয়েছে মননশীলতা। মননশীলতার বিকাশের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশ। সিনেমা, থিয়েটার, পার্ক প্রভৃতি সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এ চাহিদাকে পূরণ করতে সাহায্য করে থাকে। চেতনার বিকাশের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। নানা ধরনের
বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, সংগীতানুষ্ঠান প্রতি আমাদের চেতনার বিকাশে সহায়তা করে থাকে। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অনস্বীকার্য ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আমাদের জীবনের বৃহত্তর কল্যাণ এবং নানাবিধ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য প্রয়োজন সামাজিক সংগঠনসমূহের। সামাজিক সংগঠন ও শিরোনাম থেকে এটি বুঝা যায় যে, সমাজের বৃহত্তর কল্যাণ চাহিদার দিকে খেয়াল রেখেই এসব সংগঠনের উৎপত্তি ঘটেছে। মোটকথা, আমাদের সমাজের বৃহত্তর
কল্যাণে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা অনস্বীকার্য।