সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যব্যস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: প্রিলিমিনারি। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি সাধারণ ব্যবস্থা হল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। পৃথিবীর সব প্রথম রাশিয়া ১৯১৭ সালে রাজতন্ত্রের পতন এবং লেনিনের নেতৃত্বে সমাজতন্ত্রের উত্থান দেখেছিল। পরে এটি পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে’ এবং পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে সমাজতন্ত্রের জন্মস্থানে সমাজতন্ত্রের মৃত্যু ঘটে। বর্তমানে, চীন একমাত্র সংগঠিত সমাজতান্ত্রিক দেশ।সমাজতান্ত্রিক অর্থের বৈশিষ্ট্য। এক সময় পৃথিবীর অনেক দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। কিন্তু এখন তাদের অনেকেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ফিরে এসেছে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

১. সামাজিক নিরাপত্তা: সমাজতন্ত্রে মৌলিক মানবাধিকার যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র সমাজের সকল সদস্যকে জীবনের সকল সাধারণ ঝুঁকির বিরুদ্ধে আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।

২. কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা: সমাজতন্ত্রের সমস্ত অর্থনৈতিক কার্যক্রম কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষ দেশের মোট চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো পণ্যের পরিমাণ ও উৎপাদনের পদ্ধতি নির্ধারণ করে। তাই সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে পরিকল্পিত অর্থনীতিও বলা হয়।

৩. যৌথ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানা বিদ্যমান: সমাজতন্ত্রে কৃষকরা যৌথ শ্রমের ভিত্তিতে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করে। বৃহৎ শিল্প ও অন্যান্য খাতের মালিকানা প্রধানত রাষ্ট্রের হাতে। বসতবাড়ি নির্মাণের জন্য স্বল্প পরিমাণ জমি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হতে পারে।

৪. শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা: এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক জীবন উপভোগ করার জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই মূল্য ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত, মজুরি রাষ্ট্র দ্বারা নির্ধারিত হয়। সমাজতন্ত্রে শ্রমিকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

৫. বেকারত্বের অবসান: সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে শ্রমজীবী ​​জনগণের জন্য কাজের সুযোগ রয়েছে। কারণ এই অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন ও ভোগ রাষ্ট্র দ্বারা সমন্বিত হয়। ফলে উৎপাদন চলতে থাকে এবং বেকারত্বের অবসান ঘটে।

৬. শোষণমুক্ত সমাজ: সমাজতন্ত্র একটি শ্রেণীহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে। সম্পদের ব্যক্তিগত মালিকানা সমাজতন্ত্রে স্বীকৃত না হওয়ায় শোষণের সুযোগ নেই।

৭. কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা: সমাজতন্ত্রে যেহেতু উৎপাদন কার্য রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অনুসারে হয়ে থাকে এবং নাগরিকের সকল প্রকার নিরাপত্তার দায়িত্ব বহন করে। সেহেতু কোন নাগরিকের কর্মসংস্থানের অভাব হয় না।

৮. মুনাফার অনুপস্থিতি: সমাজতন্ত্রে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকৃত নয় বলে ব্যক্তিগত মুনাফা অর্জনের কোন সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণ সাধনই রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য।

৯. মৌলিক চাহিদা পূরণ: বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। ফলে এ ধরণের সমাজে প্রত্যেক মানুষ তার প্রতিভা বিকাশের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।

১০. অবাধ প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি: এ অর্থ ব্যবস্থায় কোন প্রতিষ্ঠান পণ্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে না। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ সকল পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। তাই সমাজতন্ত্রে অবাধ প্রতিযোগিতার অনুপস্থিত।

১১. জাতীয় আয়ের সুষম বন্টনঃ সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সমাজে জাতীয় আয়ের সুষম বন্টন নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে জাতীয় সম্পদ বন্টনে যে নীতি গ্রহন করা হয় তা হল “শ্রমিক তার সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করবে এবং তার কাজ অনুযায়ী সে পরিশ্রমিক গ্রহন করবে।” এরূপ বন্টন ব্যবস্থার ফলে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।

১২. সুষম উন্নয়ন: সমাজতন্ত্রে সকল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয়ভাবে গৃহীত হয়। এতে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্র যথোপযুক্ত গুরুত্ব লাভ করে এবং অর্থনীতির সুষম উন্নয়ন ঘটে।

১৩. মৌলিক চাহিদা পুরণঃ সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় জনসাধারণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। ফলে এ ধরনের সমাজে প্রত্যেক মানুষ তার প্রতিভা বিকাশের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে।

১৪. মুদ্রাস্ফীতির অনুপস্থিতি: যেহেতু সমাজতন্ত্রে সর্বক্ষেত্রেই রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে। তাই এখানে অতি উৎপাদন বা কম উৎপাদন হতে পারে না সে জন্য মুদ্রাস্ফীতিও নেই।

উপসংহার: উপরি উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলো সমাজতান্ত্রিক সমাজে লক্ষ্য করা যায়। সামাজিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে উৎপাদন বণ্টনসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড একক কর্তৃপক্ষ তথা রাষ্ট্র-কর্তৃক নির্ধারিত হয় বলে একে Command Economy বা Planned Economy বলা হয়। এব্যবস্থায় সম্পদের অপচয় হয় না বা খুব কম হয়। মানুষের মৌলিক অর্থনীতিক সমস্যার সমাধান এ ব্যবস্থায় দ্রুত অর্জিত হয়।