সমাজকর্ম পদ্ধতির সংজ্ঞা দাও । সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতিগুলোর গুরুত্ব নির্ণয় কর।

অথবা, সমাজকর্ম পদ্ধতি কী? সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতিগুলোর প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
অথবা, সমাজকর্ম বলতে কী বুঝ? সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতিগুলোর তাৎপর্য বর্ণনা কর।
অথবা, সমাজকর্ম কাকে বলে? সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতির প্রভাব বর্ণনা কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য সনাতন সমাজকল্যাণ থেকে আধুনিক সমাজকল্যাণকে পৃথক অস্তিত্ব দান
করেছে তন্মধ্যে পদ্ধতিভিত্তিক সমাজকর্ম অন্যতম। উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি যেমন চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন
এনেছে, তেমনি সমাজকর্মের পদ্ধতিও সামাজিক সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনার সৃষ্টি করেছে।
সমাজকর্ম পদ্ধতি : দেশগত কাজ সুসম্পন্ন করার জন্য সব পেশার নিজস্ব পদ্ধতি আছে। তন্মধ্যে সমাজকমও একটি পেশা। মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধন করা সমাজকর্মের লক্ষ্য। এ লক্ষ্যার্জনের জন্য সমাজকর্ম তথা সমাজকর্মীগণ যে কতিপয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকে সেগুলোকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলা হয়। সুতরাং সমাজকর্ম পদ্ধতি ব্যক্তি, দল ও জনসমষ্টির সমস্যার প্রতিকার, প্রতিরোধ ও উন্নয়নের জন্য পেশাদার সমাজকর্মী কর্তৃক অনুসৃত নির্ধারিত পন্থা বা কর্মকৌশল বুঝায়।
সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতিগুলোর গুরুত্ব : নিম্নে সামাজিক সমস্যাবলির মোকাবিলায় সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতির গুরুত্ব আলোচনা করা হল :
১. দারিদ্র্য : দারিদ্র্য আমাদের দেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। “A country is poor because it is poor.” জন নার্কস এর এ বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেন জন্মগতভাবেই দরিদ্র। এদেশের ৪৫% লোকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সুতরাং এ দারিদ্র্য বিমোচনে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি বিশেষভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। যেমন-
কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উৎপাদন বৃদ্ধি, জনগণের দক্ষতা বৃদ্ধির
লক্ষ্যে কারিগরি (Technical) শিক্ষার প্রসার ইত্যাদি।
২. বেকারত্ব : বেকারত্ব বাংলাদেশে অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পরিসংখ্যান মোতাবেক এদেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২৩ লক্ষ বেকার জনগণয়েছে। এ বেকারত্বের কারণে সামাজিক অন্যান্য সমস্যাবলির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বেকারত্ব নিরসনে সমাজকর্মের সহায়ক পাতি দু’টি উপায়ে কাজ করতে পারে। যথা :
ক. প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি ও খ. কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।
৩. অধিক জনসংখ্যা : জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বর্তমানে এদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৪কোটি। জনসংখ্যার এ আধিক্য সমাজের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। কারণ জনসংখ্যার আধিক্যই সব সামাজিক সমস্যার কারণ। বলা হয়, “Population is the root cause of all problems.” সুতরাং এ সমস্যার সমাধান সময়ের দাবি। সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যথা :
ক. জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রসারতা ঘটানোর লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। খ. অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করা। গ. বৈবাহিক জীবনে কৌশল অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া।
৪. যৌতুক প্রথা : যৌতুক প্রথা আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে নারী নির্যাতনের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে যৌতুক । সুতরাং এ সমস্যা সমাধান আশু প্রয়োজন। আর এ কাজে সমাজকর্ম সহায়ক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে । যথা :
ক. মানুষের মধ্যে এ প্রথার কুফলগুলো তুলে ধরা। খ. নারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া। যেমন- Women for Women. BELA, নারীপক্ষ ইত্যাদি । গ. নারী শিক্ষার প্রসারতা বৃদ্ধি করা।
৫. ভিক্ষাবৃত্তি ও পতিতাবৃত্তি : ভিক্ষাবৃত্তি ও পতিতাবৃত্তি সাম্প্রতিককালে ব্যাপকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এ সমস্যা সমাধান একান্ত প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে সমাজকর্ম সহায়ক পদ্ধতি অত্যন্ত ত্বপূর্ণ। যেমন- মানুষের মধ্যে মূল্যবোধ এর সৃষ্টি করা। তাদের যথাযথ পুনর্বাসন দরকার ইত্যাদি।
৬. অপরাধপ্রবণতা : অপরাধপ্রবণতা বিশেষ করে কিশোর অপরাধ (Juvenile Deliquency) অত্যন্ত ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। এ অপরাধপ্রবণতার কারণে সামাজিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যথা : ক. যুবকদের বা কিশোরদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা, খ. তাদের যথার্থ পুনর্বাসন করা এবং গ. তাদেরকে সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করা ইত্যাদি।
৭. শিক্ষা : বলা হয়, “Education is the panacea for all development.” সুতরাং উন্নয়নের জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই । আর আমাদের বাংলাদেশে শিক্ষার চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। শতকরা ৭০ ভাগ লোক যেখানে অশিক্ষার মধ্যে অবস্থান করছে
সেখানে উন্নয়নের আশা করা কঠিন। সুতরাং এ শিক্ষা প্রসারে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সামাজিক সমস্যা অত্যন্ত মারাত্মক আকার ধারণ করেছে সর্বত্র। আর সমাজকর্ম পদ্ধতি এ সমস্যা নিরূপণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সমাজকর্মের সহায়ক পদ্ধতির গুরুত্ব এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। সামাজিক উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে এ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সবার সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করলে আরও ফল পাওয়া যাবে।