অথবা, সমাজকর্ম পদ্ধতির দুটি উল্লেখযোগ্য নীতি আলোচনা কর।
অথবা, সমাজকর্ম পদ্ধতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান বা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পেশাদার সমাজকর্মীগণকে যেসব সুশৃঙ্খল পদ্ধতি, কৌশল, পন্থা বা উপায় অবলম্বন করতে হয় তাকে সমাজকর্ম পদ্ধতি বলে। অন্যভাবে বলা যায়, সমাজকর্ম পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা অনুসরণ করতে হয় সেগুলোই সমাজকর্ম পদ্ধতির সাধারণ নীতিমালা ।
সমাজকর্ম পদ্ধতিগুলোর দুটি সাধারণ নীতিমালা : নিম্নে সমাজকর্ম পদ্ধতির সাধারণ নীতিমালা আলোচনা করা হলো :
১. আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার : আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রদান সমাজকর্মের একটি সাধারণ নীতি। এ নীতিতে বিশ্বাস করা হয় মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্য নির্মাতা। আর মানুষকে তার নিজের ভাগ্য নির্মাণে সুযোগ প্রদান বা অধিকার দান হলো আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। আমরা জানি, সমাজকর্ম একটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া। একটি সক্ষমকারী প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যক্তি, দল বা সমষ্টি নিজেই যাতে নিজের সম্যা সমাধানে সক্ষম হয় সমাজকর্ম সে নীতিতে বিশ্বাস করে। এ কারণে সমাজকর্ম পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধনের উপর গুরুত্বারোপ করে এবং সে অনুযায়ী তাকে সক্ষমতা অর্জনে সাহায্য করে। সমাজকর্ম বিশ্বাস করে ব্যক্তি তার নিজের অবস্থা, নিজের সামর্থ্য ও নিজের সমস্যা সম্পর্কে যতটুকু অবগত অন্য কেউই ততটুকু অবগত নয়। এ কারণে ব্যক্তির নিজ প্রচেষ্টায় সমস্যার যতটুকু কার্যকর সমাধান দেয়া সম্ভব হয়, অন্য কারো পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ কারণে সাহায্যার্থীকে সমাজকর্ম পদ্ধতিগুলো এমনভাবে সাহায্য প্রদান করে
যাতে করে সাহায্যার্থী নিজেই নিজ প্রচেষ্টায় সমস্যা সমাধানে নিজেকে সক্ষম করে তুলতে পারে।
১২. ব্যক্তির মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতি : সমাজকর্ম বিশ্বাস করে যে সমাজের প্রতিটি মানুষেরই একটি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা
রয়েছে। সমাজের প্রত্যেক মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানই এর মূলকথা। সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ। আর মানুষ হিসেবে সমাজের প্রত্যেকেই পৃথক মর্যাদা ও সত্তার অধিকারী। সমাজকর্ম
বিশ্বাস করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সকল মানুষেরই এ মর্যাদা রয়েছে। সকলকে নিয়েই সমাজ। সমাজে প্রত্যেক শ্রেণীর মানুষেরই অবদান রয়েছে। কৃষক, তাঁতী, জেলে, নাপিত, শিক্ষক, ধনী, গরিব, নারী, পুরুষ, খ্রিস্টান, মুসলমান সকলেই মানুষ।
প্রত্যেক মানুষ অন্যান্য জীব থেকে জ্ঞানেগুণে, বুদ্ধি বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ। এ কারণে মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই প্রত্যেক মানুষকে মানুষ হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, জীব হিসেবে নয়।
সমাজকর্মীগণ প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার নিজস্ব মর্যাদা ও সত্তার স্বীকৃতি ও যথাযথ গুরুত্বারোপের মাধ্যমে গ্রহণ করবেন।
উপসংহার : সমাজকর্মের উপর্যুক্ত নীতিগুলো মেনে চলার মাধ্যমে সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের অনুশীলন করেন। উপর্যুক্ত নীতিগুলো অনুসরণ করলে সমাজের সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এ নীতিগুলো সমাজকর্মীদের জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে