অথবা, সমাজকর্মের ৪টি সাধারণ মূল্যবোধ বর্ণনা কর।
অথবা, সমাজকর্মের কয়েকটি মূল্যবোধ আলোচনা কর।
অথবা, সমাজকর্মের যে কোনো ৪টি সাধারণ মূল্যবোধ তুলে ধর।
উত্তর।৷ ভূমিকা : প্রতিটি পেশার ন্যায় সমাজকর্ম পেশারও কতকগুলো মূল্যবোধ রয়েছে। সমাজকর্মীদের এই মূল্যবোধ অনুসরণ করে কাজ করতে হয়। মূল্যবোধ সমাজকর্ম অনুশীলনের Guideline বা Principle হিসেবে কাজ করে।
সমাজকর্মের ৪টি সাধারণ মূল্যবোধ :
সমাজকর্ম অনুশীলন সমাজকর্মীগণ কতকগুলো সাধারণ মূল্যবোধ অনুসরণ করেন। সমাজকর্মের ৪টি সাধারণ মূল্যবোধ নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার (Right of self determination) : মানুষ নিজেই তার নিজের ভাগ্য নির্মাতা।আর মানুষকে তার নিজের ভাগ্য নির্মাণে সুযোগ প্রদান বা অধিকার দান হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার।এটি সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও মূল্যবোধ হিসেবে বিবেচিত। সমাজকর্ম মানুষকে তার চাহিদা, পছন্দ, সামর্থ্য ও ক্ষমতানুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাদানে ও সমস্যা সমাধানে তার নিজের ভূমিকা পালনে বিশ্বাসী।
২. ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি (Dignity of mans) : সমাজকর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা ও মূল্যবোধ হলো ‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’ প্রদান।মানুষকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি প্রদানই এর মূল কথা।সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ। আর মানুষ হিসেবে সমাজের প্রত্যেকেই পৃথক মর্যাদা ও সত্তার অধিকারী।সমাজকর্ম জাতি, ধর্ম, বর্ণ, পেশা, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের বিশেষ মূল্য ও মর্যাদার স্বীকৃতিদানে বিশ্বাসী।এভাবে সকল মানুষের বিশেষ মর্যাদার স্বীকৃতি দানের বিশ্বাস হলো ‘ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি’।
৩. সকলের সমান সুযোগ (Equal opportunity to all) : পৃথিবীর সকল মানুষ একই সৃষ্টিকর্তার গড়া, সকলে একই উপাদানে তৈরি।সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, ভালো-মন্দ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সকলের অনুভূতিই এক।তাই মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেরই রয়েছে ভালোভাবে বাঁচার অধিকার।সমান সুযোগ লাভের অধিকার।সমাজকর্মে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ না করে সকলের সমান সুযোগ সুবিধা প্রদানে বিশ্বাসী। সকলের সমান সুযোগ প্রদান সমাজকর্মের একটি নীতিমালা ও মূল্যবোধ হিসেবে স্বীকৃত।
৪. স্বনির্ভরতা অর্জন (Self sufficient) : স্বনির্ভর প্রত্যয়টির অর্থ হলো নিজের উপর নির্ভর করে চলা।আর অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়ে আত্মনির্ভরশীল হয়ে চলার প্রচেষ্টাকে বলা হয় স্বনির্ভরতা। সমাজকর্ম মানুষের যোগ্যতা ও সামর্থ্যানুযায়ী এমনভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের সুযোগ পায়।এভাবে আত্মনির্ভরশীলতা বা স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে সমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত হয়।এ কারণে সমাজকর্মে ‘স্বনির্ভরতা অর্জন’ একটি নীতিমালা ও মূল্যবোধ হিসেবে স্বীকৃত। সমাজকর্ম পরনির্ভরশীল মন- মানসিকতার পরিবর্তে নিজ প্রচেষ্টা ও সামর্থ্যের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের নীতিতে বিশ্বাসী।প্রকৃতপক্ষে, স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমেই মানুষ কর্মে পরিতৃপ্তির স্বাদ আস্বাদন করতে পারে।নিজ প্রচেষ্টায় বড় হওয়ার আত্মপ্রত্যয় দৃঢ় হলেই মানুষ স্বনির্ভরতা অর্জনে সক্ষম হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পেশা হিসেবে সমাজকর্ম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী।কারণ এখানে সাহায্য প্রার্থীর মতামত, অংশগ্রহণ, ক্ষমতায়ন, ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ইত্যাদি নীতি কৌশল অনুসরণ করা হয়।যা সমাজকর্মকে অন্যান্য সকল পেশা থেকে স্বাতন্ত্র্য করে তোলে।