অথবা, সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতির মধ্যে সাদৃশ্য আলোচনা কর।
অথবা, সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতির মধ্যে আন্তসম্পর্ক আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ব্যক্তি, দল ও সমাজের। সমস্যা সমাধানে প্রত্যক্ষভাবে প্রয়োগ করা হয় মৌলিক পদ্ধতি। পক্ষান্তরে, মৌলিক পদ্ধতিগুলোর সফল বাস্তবায়নে সহায়তা দান করে সহায়ক পদ্ধতি। এগুলো পরোক্ষভাবে সমস্যা সমাধানে প্রয়োগ করা হয়। প্রায়োগিক দৃষ্টিকোণ হতে সমাজকর্মের মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে পার্থক্য
থাকলেও বাস্তবে উভয় পদ্ধতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য।
মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক : সহায়ক পদ্ধতিগুলোর সাহায্য ও সহযোগিতা ছাড়া মৌলিক পদ্ধতিগুলোর বাস্তবায়ন অসম্ভব। আবার মৌলিক পদ্ধতি সহাযক পদ্ধতিগুলোর বাস্তবায়নের কল্পনাই করা যায় না। মৌলিক ও সহায়ক পদ্ধতিগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের বিশেষ বিশেষ দিকগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
প্রথমত, ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সমস্যার সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ। সমস্যার প্রকৃতি, কারণ, প্রভাব, সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্রাপ্তসম্পদ ও সামর্থ্য ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে সামাজিক গবেষণা বিশেষভাবে মৌলিক পদ্ধতিগুলোকে সাহায্য করে থাকে।
সমাজকর্মের প্রতিটি মৌলিক পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সমাজকর্ম গবেষণার অপরিহার্যতাই উভয় পদ্ধতির সম্পর্ককে অবিচ্ছেদ্যভাবে গড়ে তুলেছে।
দ্বিতীয়ত, সমাজকর্মের মূল লক্ষ্যার্জনের জন্য প্রয়োজন জনগণকে সচেতন করে তুলে পরিবর্তন আনয়নের অনুকূল পরিবেশ ও জনমত সৃষ্টি করা। এছাড়া জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলোর সফল বাস্তবায়ন আশা করা যায় না। এক্ষেত্রে সমাজকর্মের সাহায্যকারী পদ্ধতি সামাজিক কার্যক্রমে প্রয়োগ করে মৌলিক পদ্ধতিগুলোর বাস্তবায়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়। সমাজকর্মকে বাস্তব উপযোগী করে গড়ে তুলতে সামাজিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তৃতীয়ত, পেশাদারি সমাজসেবা কার্যক্রম হিসেবে সমাজকর্মের সবগুলো মৌলিক পদ্ধতিই কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের
মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আর পেশাদার সমাজকর্মীগণ কোন না কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই কাজ করে থাকেন। যে
কোন সামাজিক তথা সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠানের কার্যকরী ও সুষ্ঠু সমাজকল্যাণ প্রশাসন ছাড়া সমাজকর্মের কোন পদ্ধতি
সাফল্য অর্জন করতে পারে না। কারণ সে প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সি সমাজকর্মের মৌলিক পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধান এবং উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালায় এবং প্রতিষ্ঠান ও এজেন্সির প্রশাসনের কার্যকারিতার উপর এগুলোর সফল প্রয়োগ বিশেষভাবে নির্ভর করে।
উপসংহার : সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সমাজকর্ম পদ্ধতিগুলো কোন সমস্যা সমাধানে এককভাবে শুরু করলেও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় প্রায় সবগুলো পদ্ধতিই আবশ্যকীয় হয়ে দেখা যায়। সবকটি পদ্ধতির যৌথ প্রচেষ্টাতেই সমাজের সত্যিকার কল্যাণ সম্ভব হয়ে উঠে। তবে সমস্যার প্রকৃতি ও ব্যক্তির উপর ভিত্তি করে কোন পদ্ধতির প্রয়োগ বেশি বা কম হলেও পদ্ধতিগুলোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার উপায় নেই।