অথবা, সমস্যা সমাধান ব্যবস্থায় স্থান বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সমস্যা সমাধান ব্যবস্থায় স্থান কাকে বলে? আলোচনা কর।
অথবা, সমস্যা সমাধান ব্যবস্থায় স্থান এর পরিচয় বিস্তারিত তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা : ব্যক্তি সমাজকর্ম হলো একটি কাঠামোবদ্ধ সাহায্যকারী প্রক্রিয়া। এ কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়ায় যেসব উপাদান জড়িত তা হলো ব্যক্তি সমাজকর্মের উপাদান। ব্যক্তি সমাজকর্মের পাঁচটি উপাদানের মধ্যে এটি হলো স্থান বা Place। ব্যক্তি সমাজকর্মের সেবাদান কার্যক্রম একটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় পরিচালিত হয় যাকে ব্যক্তি সমাজকর্মে স্থান বা Place বলা হয়।
সমস্যা সমাধান ব্যবস্থায় ‘স্থান’ : ব্যক্তি সমাজকর্মে স্থান হলো এমন এক ধরনের সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সমাজকর্মী সাহায্যার্থীকে তার সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগত ও অবস্তুগত সাহায্য করে থাকে।পার্লম্যানের মতে, যখন কোন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব কার্যকরী পদ্ধতিকে ব্যক্তিগত সমস্যায় ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ, মনস্তাত্ত্বিক সাহায্যে পরিস্থিতির পরিবর্তন ও বৈষয়িক সেবা বা সামগ্রিকভাবে সকল দিকে সেবা করে থাকে, তখন তাকে ব্যক্তি সমাজকর্মে
প্রতিষ্ঠান বলা হয়। অর্থাৎ ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একটি সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠান যা ব্যক্তির সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তুগত ও অবস্তুগত সেবা প্রদান করে।
সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ পার্লম্যানের (Perlman) মতে, তিনভাবে শ্রেণিবিন্যস্ত করা যায়। যথা :
ক. আয়ের উৎসের ভিত্তিতে
খ. পেশাগত কর্তৃত্বের উৎসের ভিত্তিতে।
গ. বিশেষ দায়িত্ব ও কার্যক্ষেত্রের ভিত্তিতে।
ক. আয়ের উৎসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান দু’ধরনের।
১. সরকারি প্রতিষ্ঠান (Public agencies) : যেসব প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের সহায়তায় বা করের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়, সেগুলোকে সরকারি প্রতিষ্ঠান বলে। তবে এটা শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তামূলক কর্মসূচিই পরিচালনা করে না, বরং শিশুকল্যাণ, শারীরিক, মানসিক, স্বাস্থ্য কর্মসূচিও পরিচালনা করে।
২. বেসরকারি বা ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান (Non-govt. or private agencies) : যে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী দান অথবা রাষ্ট্র কর্তৃক বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে পরিচালিত হয় সেগুলোই হচ্ছে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। তবে এ উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানেই শুধুমাত্র তাদেরকে সহায়তা প্রদান করা হয় যারা সাহায্যের জন্য আসে।
খ. পেশাগত কর্তৃত্বের উৎসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান দু’রকম।
১. মুখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান (Primary social agency) : যেসব প্রতিষ্ঠান সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের পূর্ণ কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব বহন করে সেগুলোকে মুখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়।
২. গৌণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান (Secondary social agency) : যেসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব অন্য কোন মানবকল্যাণ সংস্থা বহন করে সেগুলোকে গৌণ সামাজিক প্রতিষ্ঠান বলে।
গ. বিশেষ দায়িত্ব ও কর্মক্ষেত্র অনুসারে প্রতিষ্ঠান দু’প্রকার।
১. একমুখী প্রতিষ্ঠান: এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কোন একটি বিশেষ ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করে।
২. বহুমুখী প্রতিষ্ঠান : এ প্রতিষ্ঠান বহু ধরনের সমস্যা নিয়ে কাজ করে থাকে।প্রতিষ্ঠানভেদে সেবাদান কার্যক্রম ভিন্নতা পরিলক্ষিত হলে, যেসব ব্যক্তি সমাজকর্ম প্রতিষ্ঠানে কতকগুলো সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি বা বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলো সমাজকর্মীদেরকে তাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে জানতে ও Client-দেরকে যথাযথভাবে সেবা প্রদানে সহায়তা করে সেগুলো হলো:
১. সামাজিক প্রতিষ্ঠান সমাজের কল্যাণের লক্ষ্যে সমাজ ও সমাজের কিছু দলের ইচ্ছার অভিব্যক্তি ঘটানোর সাংগঠনিক উপায়।
২. প্রতিটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান একটি কর্মসূচি প্রণয়ন করে যা, যে সমস্যা মোকাবিলায় এটি প্রতিষ্ঠিত সে ক্ষেত্রের চাহিদাকে পূরণ করে।
৩. সামাজিক প্রতিষ্ঠানের একটি কাঠামো থাকে যার দ্বারা এর দায়িত্ব ও কার্যক্রমসমূহ বিন্যাস ও অর্পণ করা হয় এবং এর কার্যক্রমের স্থায়িত্ব ও নিয়মতান্ত্রিকতা অনেকের জন্য নীতিমালা ও প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়।
৪. অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় সামাজিক প্রতিষ্ঠান উপলব্ধি ও পরিবর্তনে সংবেদনশীল একটি জীবন্ত ও সামঞ্জস্য সক্ষম প্রাণীসত্তা।
৫. একটি প্রতিষ্ঠানে প্রতিটি Staff প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের কিছু অংশ হিসাবের কথা বলে ও কাজ করে এবং ব্যক্তি সমাজকর্মী প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র সমস্যা সমাধানকারী সহায়তায় প্রতিনিধিত্ব করে।
৬. যখন একজন ব্যক্তি সমাজকর্মী তার প্রতিষ্ঠানকে প্রতিনিধিত্ব করে প্রথমে এবং সর্বাগ্রে সে তার পেশাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমস্যা সমাধানের জন্য সমাজকর্মী একটি প্রতিষ্ঠান বা কোন এজেন্সিতে বসে কাজ করেন। এই প্রতিষ্ঠান বা এজেন্সিকেই স্থান বলা হয়।