অথবা, সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার স্তরগুলো লিখ।
অথবা, সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার ধাপগুলো আলোচনা কর।
অথবা, সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার স্তরগুলো কী কী? বর্ণনা কর।
অথবা, সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার ক্সেত্রে যে সমস্ত ধাপ বা স্তর ব্যবহার হয় সেগুলো আলোচনা কর।
উত্তরা৷ ভূমিকা : যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে সমাজকর্মী তার মক্কেলকে সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে থাকেন তাকে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া বলা হয়। এটি একটি ধারাবাহিক ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপ্রণালি। সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়াকে কয়েকটি পর্যায়ে বা স্তরে ভাগ করা যায়।
সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার স্তর নিয়ে সমস্যা সমাধানের স্তরগুলো আলোচনা করা হলো।
১. সমস্যা বাছাইকরণ : সাহায্যার্থীর বহু ধরনের সমস্যা থাকে। কিন্তু সব ধরনের সমস্যা সমাধান করার মত পেশাগত যোগ্যতা ও দক্ষতা কোন সমাজকর্মীরই থাকে না। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানেরও সীমাবদ্ধতা থাকে। কাজেই প্রথম সাক্ষাৎকারেই সমাজকর্মী তার প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধতা অনুযায়ী সাহায্যার্ণাকে গ্রহণ কিংবা অন্য প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।
২. অনুধ্যান : এ পর্যায়ের তথ্যাবলির যথার্থতার উপর ব্যক্তি সমাজকর্মের সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার সফলতা বিশেষভাবে নির্ভর করে। সাহায্যার্থীর সমস্যা এবং তার সমাধানের সাথে সংশ্লিষ্ট সার্বিক তথ্যাদি অনুধ্যানের মাধ্যমেই
সংগ্রহ করতে হয়। তথ্যসংগ্রহের জন্য সমাজকর্মী নিম্নলিখিত কৌশল প্রয়োগ করে থাকেন। যথা
ক. সাক্ষাৎকার, খ. গৃহ পরিদর্শন,
গ. যোগাযোগ ও পরামর্শ,
ঘ. পর্যবেক্ষণ এবং
ঙ. অতীত ঘটনাবলির সংরক্ষিত নথিপত্র।
৩. সমস্যা নির্ণয় : সমস্যা নির্ণয় হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যা অনুধ্যানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যাদির বিভিন্ন দিক পরীক্ষানিরীক্ষা করে সমস্যার প্রকৃতি, গঠন, পারস্পরিক সম্পর্ক, কারণ এবং সমাধানের উপায় প্রভৃতি যাচাই করে
দেখার জন্য যে চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তি পরিচালনা করা হয় তাকে সমস্যা নির্ণয় বলে। সমস্যা নির্ণয় বা Diagnosis তিন প্রকার। যথা :
ক. গতিশীল সমস্যা নির্ণয়,
খ. চিকিৎসামূলক সমস্যা নির্ণয় এবং
গ. সমস্যার উৎপত্তিগত ডায়াগনোসিস।
৪. সমস্যা সমাধান পরিকল্পনা : এ পর্যায়ে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাধারণত সমস্যার প্রকৃতি, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও সীমাবদ্ধতা, সাহায্যার্থীর সম্পদ ও সামর্থ্য, ব্যক্তিত্ব ও প্রত্যাশার উপর ভিত্তি করে সমাজকর্মী
সমস্যা সমাধান সম্পর্কে পরিকল্পনা ও কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। সমাধান হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন,তার অন্তর্নিহিত ক্ষমতার বিকাশ ও সংরক্ষণ এবং সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতার উন্নয়ন সাধন করে সমস্যা মোকাবিলায় তাকে সক্ষম করে তোলে।এ লক্ষ্যার্জনের জন্য সমাজকর্মী প্রধানত দু’ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকেন। যথা :
ক. প্রত্যক্ষ বা সমর্থনমূলক পদ্ধতি ও খ
পরোক্ষ বা সংশোধনমূলক পদ্ধতি।
৫. সমস্যার পূর্বাভাস ও আপাত ব্যবস্থা : এ পর্যায়ে সমাজকর্মী প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সমস্যা সম্পর্কে একটি অনুমান করে সাময়িক সাহায্য প্রদান করে থাকেন। একেই সমস্যার পূর্বাভাস ও আপাত ব্যবস্থা বলা হয়। এতে সাহায্যার্থীর মনে একটি স্বস্তির ভাব ফিরে আসে, যা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৬. মূল্যায়ন : ব্যক্তি ও তার সমস্যা সম্পর্কে সমাজকর্মীর গৃহীত সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থাবলি কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নির্ধারণের জন্য সমাজকর্মীকে মূল্যায়নের আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। মূল্যায়নের মাধ্যমেই সমাজকর্মী তার সফলতা ও বিফলতা সম্পর্কে অবহিত হন এবং সে প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া সহজতর হয়। সমাজকর্মী শুরু থেকে শেষ অবধি মূল্যায়নের মাধ্যমেই ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে সাহায্যার্থীকে স্বাভাবিক জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন।
৭. অনুসরণ : সমস্যার সমাধান দেয়া মানেই স্থায়ী সমাধান নয় বরং একই সমস্যা পুনরায় দেখা দেয়া স্বাভাবিক।ব্যক্তি সমাজকর্মী প্রক্রিয়ার সমস্যার রূপ (অবস্থা বা গতি) সময় ও পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে বদলাতে পারে। অবশ্য
সমস্যার ব্যাপারে যে সমাধান ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা মূল বিষয় বা ভিত্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। তবুও মানুষের জীবন কমবেশি গতিশীল বিধায় সময় সময় তার মনোভাব বা আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পরিবর্তন দেখা দেয়া বিচিত্র নয়।এমতাবস্থায় সমাধান ব্যবস্থার কার্যকারিতা অবলোকন ও যাচাই করার উদ্দেশ্য অনুসরণ পদ্ধতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ।সমাজকর্ম অনুশীলনে উক্ত প্রক্রিয়াকে বিশেষ একটি পরিপূরক ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করা হয়।
৮. সমাপ্তি : সমাপ্তি ব্যক্তি সমাজকর্মের সমাধান প্রক্রিয়ায় সাময়িক পরিসমাপ্তি বা কোন বিশেষ দিকে সমাপ্তি অর্থে ব্যবহার করা হয়। সমাজকর্মী ও সাহায্যার্থী পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে যৌথভাবে সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার আপাত পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেন। তবে তারা ভবিষ্যতে যে কোনো প্রয়োজনে পুনর্মিলিত হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি সমাজকর্মের সমাধান প্রক্রিয়ায় প্রতিটি স্তরই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক স্তরেই সমাজকর্মীদের সতর্কতার সাথে কাজ করতে হয়। সমাজকর্মীকে সমস্যা সমাধানে গভীরভাবে তার জ্ঞান ও দক্ষতা
প্রয়োগ করতে হয়।